Last Updated on 1 month by zajira news
জাজিরা নিউজ ডেস্ক: শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের ১৫১ নম্বর উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি পদ্মা নদীতে ভেঙে পড়েছে। বিলীন হয়ে গেছে বিদ্যালয়ের ৩০ শতাংশ জমি।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভবনটির একটি অংশ নদীতে ভেঙে পড়ে। বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবন নদীতে বিলীন হওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়ন পদ্মা নদীর চরে অবস্থিত। ইউনিয়নটির একদিকে মুন্সিগঞ্জ ও আরেক দিকে চাঁদপুর জেলা। ওই এলাকাটির চার দিক দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মাথাভাঙা চরবানিয়াল গ্রামে ৪০০ পরিবারের বসবাস। ওই গ্রামের বাসিন্দারা নদীতে মাছ শিকার ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁদের মধ্যে পড়ালেখার আগ্রহ কম। এ ছাড়া গ্রামটিতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না। ২০১৭ সালে ওই গ্রামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করে সরকার। পরের বছর ২০১৮ সাল থেকে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হয়। একতলা একটি পাকা ভবনের চারটি কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম চলছিল। সোমবার বিকেলে বিদ্যালয় ভবনের একটি অংশ নদীতে ভেঙে পড়েছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও শিক্ষকেরা জানান, ২০২৩ সালে বিদ্যালয়টি পদ্মার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে। এ বছরের জুন মাসে সেই বালুর বস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভবনটি রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ভাঙনের কবল থেকে বিদ্যালয় ভবনটি রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের মুখে পড়লে ৪ সেপ্টেম্বরের থেকে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। রোববার বিদ্যালয়ের আসবাব ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
উত্তর মাথাভাঙা এলাকার বাসিন্দা ও বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের এলাকার যাতায়াত দুর্গম। নৌপথ ছাড়া আমরা যাতায়াত করতে পারি না। এলাকায় কোনো বিদ্যালয় না থাকায় আমরা পড়ালেখা করতে পারিনি। নতুন এ বিদ্যালয়টিতে ছয় বছর ধরে পড়ালেখা করানো হচ্ছিল। আমাদের সন্তানেরা পড়ালেখা করছিল। এখন সেটিও পদ্মায় ভেঙে পড়েছে। এখন আমাদের সন্তানেরা কোথায় পড়ালেখা করবে সেই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম।’
কাচিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জসিম উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, উত্তর মাথাভাঙা মৌজায় একটি স্কুলই ছিল। তা–ও পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। কিছুদিন হয়তো পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ওই বিদ্যালয়ের জন্য যাঁরা জমি দিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। অন্যত্র জমি দিতে রাজি হলে সেখানে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করা হবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আল মামুন এক গনমাধ্যমকে বলেন, বিদ্যালয়ের সব জমি ও ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভবন ভাঙনে পড়ার আগে বিদ্যালয়ের আসবাব ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয় হয়েছে। এখন কোথায় বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করা হবে তা বলা যাচ্ছে না। শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তাঁরা যে নির্দেশনা দেবেন, সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আপাতত পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আল মুজাহিদ এক গনমাধ্যমকে বলেন, বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের কবলে পড়ার কারণে আপাতত পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বিদ্যালয়ের মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যিনি বিদ্যালয়ের জমিদাতা, তিনি অন্য একটি স্থানে জমি দিতে রাজি হয়েছেন। অল্প সময়ের মধ্যে সেখানেই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালানো হবে।
ভেদরগঞ্জের ইউএনও আবু আবদুল্লাহ খান গনমাধ্যমকে বলেন, বিদ্যালয় ভাঙনের কবলে পড়ার কারণে উপজেলা পরিষদের একটি সভা হয়েছিল। সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাউবোকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এখন বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে গেছে। শিগগিরই এর কার্যক্রম অন্যত্র শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান গনমাধ্যমকে বলেন, কাচিকাটা এলাকায় সাড়ে তিন কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। সেটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। যার কারণে ওই বিদ্যালয়টির জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। সূত্র, প্রথম আলো