Last Updated on 11 months by zajira news
নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: মিরপুর-১০ মেট্রো রেলস্টেশন পরিদর্শন শেষে সারা দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় দেশবাসীর কাছে বিচার চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের জনগণকে তাদের বিচার করতে হবে। আমি জনগণের কাছে ন্যায়বিচার চাইছি। ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়ার মতো আমার আর কোনো ভাষা নেই।’
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকালে মিরপুর-১০ নম্বরে মেট্রো রেলস্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে গণমাধ্যমের উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত কণ্ঠে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রো রেলস্টেশন ঘুরে দেখেন। গত শুক্রবার মেট্রো রেলস্টেশনে ভাঙচুর চালানো হয়।
তিনি বলেন, ‘এই মেট্রোরেল করার সময়ও অনেক বাধাবিঘ্ন আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছিল। সব বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে এই মেট্রোরেল আমরা করে দিয়েছি এবং সময়ের আগেই আমরা করতে পেরেছি। আজ মেট্রোরেল বন্ধ। কারণ, এই স্টেশন সেভাবে ধ্বংস হয়েছে, যেটা সম্পূর্ণ ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিক সিস্টেম, সম্পূর্ণ মডার্ন। এটা কত দিনে ঠিক হবে আমি জানি না। কষ্ট পাবে কিন্তু মানুষ।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্বিঘ্নে মানুষ যাতায়াত করছে। এই মেট্রোরেলের ওপর কেন এত আক্রমণ? এটাই আমার প্রশ্ন। এই মেট্রোরেল এবং এর স্টেশনগুলো যে আমরা তৈরি করেছি, এর সার্ভিসসহ সবকিছুই ছিল আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। অন্য বহু দেশের তুলনায় আধুনিক দৃশ্যমান সুন্দর একটা মেট্রোরেল আমরা করেছিলাম।’
প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেল ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘এতে আপনারাই কষ্ট পাবেন। দেশের মানুষই কষ্ট পাবে। এই ঢাকা শহরের মানুষই কষ্ট পাবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আবার ট্রাফিক জ্যামে পড়ে থাকতে হবে। কর্মস্থলে সময়মতো পৌঁছানো আবার ফেরত আসায় দীর্ঘ সময় লাগবে। বসে বসে সেই ট্রাফিক জ্যামে কষ্ট পাওয়া থেকে আপনাদের এই কষ্ট লাঘব করতে চেয়েছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাই আমি আপনাদেরকেই বলব, যে কষ্ট আমি লাঘব করতে চেয়েছি, সেই কষ্ট আবার যারা সৃষ্টি করল, তাদের বিরুদ্ধে আপনাদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে। দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। এর বিচার তাদের করতে হবে। আমি তাদের কাছেই বিচার চাই।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর ২৯টি বছর এ দেশের মানুষ বঞ্চিত ছিল। সেখান থেকে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে খাদ্যনিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে গত ১৫ বছরে মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘এগুলো কাদের জন্য? এই মেট্রোরেলে কি আমি চড়ব? আমাদের সরকার ও মন্ত্রীরা শুধু চড়বে, না জনগণ চড়বে, এটা আমার প্রশ্ন। এর উপকারিতা আপনারা পাচ্ছেন। এ দেশের সাধারণ জনগণ পাচ্ছে। তাহলে এটার ওপর এত ক্ষোভ কেন?’
তিনি বলেন, ‘আমার দুঃখ লাগে, ২০১৮ সালে যখন ছাত্ররা কোটাবিরোধী আন্দোলন করল, আমি সঙ্গে সঙ্গে সেটা মেনে নিয়ে কোটা বাতিল করে দিলাম। এর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার থেকে মামলা করা হলো। সরকারের জারি করা পরিপত্র হাইকোর্টে বাতিল হলো। সেটার বিরুদ্ধে সরকার আপিল করল। সেই সময়ে হাইকোর্টের রায়কে স্থিতাবস্থা দিয়ে তাঁরা একটা সময় (সুপ্রিম কোর্ট) দিলেন। এই সময়ের মধ্যে সবার বক্তব্য শুনে তাঁরা একটা সিদ্ধান্ত দেবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোটা আন্দোলনকারী থেকে শুরু করে দেশবাসীকে বললাম, একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। এটা তো সরকার আপিল করেছে, তাদের হতাশ হতে হবে না। সেই আশ্বাস দিয়ে তাদের বললাম বিরত থাকতে। একটু ধৈর্য ধরতে হবে। যেকোনো নগারিককেই তো আইন–আদালত মেনে চলতে হবে। আর এ সুযোগ নিয়ে সেই ১৭ জুলাই থেকে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু হলো।’
তিনি আরও বলেন , ‘আজকে মন্ত্রণালয়ের যারা এবং এই মেট্রোরেল নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত, প্রত্যেকেরই চোখের পানি পড়ছে। এটা দেখে যে কীভাবে এই দানবীয় কর্মকাণ্ড হলো, আর কীভাবে করল?’ বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। এই অ্যালাইনমেন্টে (মেট্রোরেলের) আমি পরিবর্তন এমনভাবে করে দিয়েছি, যাতে দ্রুত সময়ে হয়।’ এ ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না, বলেন প্রধানমন্ত্রী। কোটা আন্দোলনকে পুঁজি করে যারা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তাদের প্রতিহত করারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।