Last Updated on 10 months by admin
নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: ঋতুরাজ বসন্তকে ভিন্ন আঙ্গিকে উদযাপন করতে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে রবিবার (১০ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে পঞ্চমবারের মতো আয়োজিত হয়েছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ বসন্ত উৎসব ১৪৩০’।
দিনব্যাপী এই আয়োজনের বিশেষ আকর্ষণ ছিল গ্রামীণ লোকজ মেলা এবং তারকাশিল্পীদের পরিবেশনায় মনোরম সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। গ্রামীণ মেলায় পোশাক, অলংকার ও খাবারের দোকানের পাশাপাশি ছিল নাগরদোলা, বানর নাচ, সাপের খেলা, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ, মোরগ লড়াই, পুঁথিপাঠ, কীর্তন, টিয়া পাখির সাহায্যে ভাগ্যগণনাসহ ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ লৌকিক সংস্কৃতির বাহারি সব আয়োজন।
দুপুর ৩ টায় আলোচনা ও গুণীজন সম্মাননা পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
উদ্বোধক হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়। গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে গুণীজন সম্মাননা গ্রহণ করেন সঙ্গীতশিল্পী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক রফিকুল আলম, একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নিপা, সঙ্গীতশিল্পী আবিদা সুলতানা এবং অভিনয়শিল্পী ডা. এজাজুল ইসলাম।
এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সিকদার মনোয়ার মুর্শেদ এবং অভিনয়শিল্পী মনোজ প্রামাণিক। অনুষ্ঠানে সভাপ্রধান হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের মডারেটর এবং ‘গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা’ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, “আমরা সাফল্য তখনই বেশি পেয়েছি যখন রাজনীতি এবং সংস্কৃতি কাঁধে কাঁধ রেখে চলেছে। আমরা বাঙালিরা আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, শক্তি সবকিছু নিয়ে এগিয়ে যাবো। বিশ্ববিদ্যালয় কেবল জ্ঞান অর্জন নয়, জ্ঞান সৃষ্টির জায়গা।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার এ আয়োজনের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় সংস্কৃতিমনা করে গড়ে তুলতে চায় শিক্ষার্থীদের। এ ধরনের আয়োজনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদকে সাধুবাদ জানাই।”
মুখ্য আলোচক প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে সংস্কৃতিচর্চার প্রসার ঘটাচ্ছে। নাগরিক যান্ত্রিকতার মাঝে গ্রামীণ আবহ আনে এক টুকরো প্রশান্তির ছোঁয়া।”
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, “সংস্কৃতির সাথে লেখাপড়ার একটি সুন্দর সংযোগ আছে। সংস্কৃতি ও শিক্ষার মেলবন্ধন রক্ষা করতে হবে যাতে সকলে সুসংগঠিত একটি প্রজন্ম পেতে পারি। বসন্তের মাধ্যমে প্রাণের সঞ্চার ঘটে, বসন্ত প্রাণে নতুন উদ্যম জাগ্রত করে।”
সভাপ্রধানের বক্তব্যে সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী বলেন, “সকল ধরনের অপশক্তির মাথাচাড়া দেয়া আমাদের রুখে দিতে হবে। আমাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি। সংস্কৃতিকে হাতিয়ার করেই আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে চাই।”
আলোচনা সভা শেষে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এরপর ছিল কনসার্টে জনপ্রিয় ব্যন্ড ‘এভয়েডরাফা’ ও ‘কৃষ্ণপক্ষ’র সঙ্গীত পরিবেশনা।
আয়োজন প্রসঙ্গে সংগঠনের সভাপতি দেবজ্যোতি বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক কে এম তানভীরুল হক বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ বরাবরই দেশীয় সংস্কৃতিকে ধারণ ও লালন করতে তৎপর। তারই অন্যতম উদাহরণ আমাদের এই বসন্ত উৎসব। তরুণ প্রজন্মকে দেশীয় সংস্কৃতির সাথে একীভূত করার আমাদের এই প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।”