Last Updated on 4 weeks by zajira news
অনলাইন ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
স্কুলের গণ্ডি পেরোনো এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে, যা পাস করা মোট শিক্ষার্থীর ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এই হিসাবে এবার পাসের হার কমেছে ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ পয়েন্ট। আর পূর্ণাঙ্গ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৪৩ হাজার ৯৭ জন।
গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেছিল ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। ২০২১ সালে রেকর্ড ৯৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এসএসসি পাস করে। ২০১০ সালের পর চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার সবচেয়ে কম। এর আগে এই সময়ের মধ্যে ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল সবচেয়ে কম, ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে এবারের এসএসসি ও সমমানই ছিল প্রথম পাবলিক পরীক্ষা। তাতে অংশ নিয়েছিল ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পাস করেছেন ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ২টায় একযোগে ফল প্রকাশ করে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ড।
অন্যান্য বছরের মত ফল প্রকাশের আগে সরকার প্রধানের হাতে পরিসংখ্যান তুলে দেওয়ার অনুষ্ঠানিকতা এবার ছিল না। ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন শিক্ষা বোর্ডগুলোর মোর্চা আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির।
শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট ও মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানতে পারছেন।
চলতি বছর যে শিক্ষার্থীরা এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বসেছেন তারা ২০১২ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রমে নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়েছিলেন। গত বছরের মতই এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে, সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও সময়ে।
রেওয়াজ ছিল ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়ার। কোভিড ১৯ মহামারির জেরে তিন বছর ফেব্রুয়ারিতে এ পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ২০২৪ সালে ফেব্রুয়ারিতেই শুরু হয়েছিল এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। আর এবার গণঅভ্যুত্থানের পর দুই মাস পিছিয়ে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ১০ এপ্রিল। লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় গত ১৩ মে। ১৫ থেকে ২২ মে মধ্যে নেওয়া হয় ব্যবহারিক পরীক্ষা।
এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক ও সমমানের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়, তাদের মধ্যে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন পাস করেছে।
এর মধ্যে নয়টি সাধারণ বোর্ডে ৬৮ দশমিক ০৪ শতাংশ, মাদ্রাসা বোর্ডে ৬৮ দশমিক ০৯ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডে ৭৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
এবারও পাসের হার এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা- দুদিক দিয়েই এগিয়ে আছে মেয়েরা।
ছাত্রদের পাসের হার যেখানে ৬৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ, সেখানে ছাত্রীদের মধ্যে ৭১ দশমিক ০৩ শতাংশ পাস করেছে। মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় এবার ৯ লাখ ৫১ হাজার ৬৯৭ জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৮১ জন।
আর ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩৮৯ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল, তাদের মধ্যে পাস করেছেন ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪৪৫ জন। আর পূর্ণাঙ্গ জিপিএ, অর্থাৎ পাঁচে পাঁচ পাওয়া ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৩ হাজার ৬১৬ জন ছাত্রী এবং ৬৫ হাজার ৪১৬ জন ছাত্র।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর মোর্চা আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ইনপুট দিয়ে ও শিক্ষাবোর্ড সিলেক্ট করে ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করে ফল জানা যাবে।
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলে কোন পরীক্ষার্থী অসন্তুষ্ট হলে তা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে পারবেন। শুক্রবার থেকে ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন শুরু হবে, যা চলবে ১৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত। টেলিটক জানিয়েছে, শুধু টেলিটকের মাধ্যমে ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা।
এ আবেদন করতে মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে RSC লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে, স্পেস দিয়ে যে বিষয়ের ফল পুনর্নিরীক্ষণ করতে চান তার বিষয় কোড লিখতে হবে। যদি একাধিক বিষয়ের ফল পুনর্নিরীক্ষণ করতে চান সে ক্ষেত্রে কমা দিয়ে বিষয়কোড লিখে তা ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। প্রতি পত্রের জন্য আবেদন ফি হবে ১৫০ টাকা।
ফল প্রকাশে কারিগরি সহায়তায় কাজ করা রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এসএমএসের মাধ্যমে ফল জানতে যেকোন মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে SSC লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে পরীক্ষার বছর লিখে তা ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
উদাহারণ : SSC<Space> Board Name (First 3 letters)<Space>Roll<Space>Year
দাখিলের ফল পেতে Dakhil লিখে স্পেস দিয়ে Mad লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে 2025 লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
কারিগরি বোর্ডের ক্ষেত্রে SSC লিখে স্পেস দিয়ে Tec লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে 2025 লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠালে ফিরতি এসএমএসে ফলাফল পাওয়া যাবে।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বিত ওয়েবসাইট http://www.educationboardresults.gov.bd-এ এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল মিলবে।