Last Updated on 1 month by zajira news
অনলাইন ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি পদে নির্বাচিত সাদিক কায়েম বলেছেন, এই নির্বাচনে জয় বা পরাজয় বলে কিছুই নেই; এই নির্বাচনে জুলাইয়ের প্রজন্ম আকাঙ্খাা এবং সর্বোপরী এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের জয় বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সমর্থিত প্যানেলের ভিপি পদে নির্বাচিত সাদিক কায়েম।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ডাকসুর ফল ঘোষণার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেছেন তিনি।
তিনি বলেছেন শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশাই তাদের প্রত্যাশা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বপ্নের ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় জানিয়েছেন ভিপি নির্বাচিত সাদিক কায়েম। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং ক্যাম্পাসের বাইরে যে কোনো সমস্যা তাদের থাকার ঘোষণা দিয়েছেন সাদিক কায়েম।
প্রতিদ্ব্ন্দ্বী জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রার্থীদের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির। ভিপি পদে শিবিরের সাদিক কায়েম পেয়েছেন মোট ১৪,০৪২ ভোট। জিএস পদে শিবিরের এস এম ফরহাদ ১০,৭৯৪ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
সাদিক কায়েম বলেন, “জয় অথবা পরাজয়ের কিছু নেই ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাইয়ের প্রজন্ম বিজয়ী হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। এবং এই নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা, শহীদদের, আকাঙ্খা বিজয়ী হয়েছে।” বক্তব্যের এই পর্যায়ে তিনি প্রথমেই স্মরণ করেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটনা জুলাই আন্দোলনে শহীদদের।
তিনি বলেন, “যাদের মাধ্যমে আজকে আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি এবং আজকে আমরা প্রতিটি ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ পেয়েছি. একই সাথে আমরা স্মরণ করছি। বাংলাদেশের আজাদী আন্দোলনের সকল শহীদদের, বিশেষ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের, নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সকল শহীদদের আধিপত্যবাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের অগ্রনেতা শহীদ আবরার ফাহাদসহ ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগের নির্যাতন যতজন শহীদ হয়েছে সকল শহীদদের।”
সাদিক কায়েমের ভাষ্য, “ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের উপর নেতৃত্বে আমানত রেখেছে আমরা দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই, সাদিক কায়েম, এস এম ফরহাদ, মহিউদ্দিন খানসহ ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের আমাদের প্যানেলের উপর যে আমানত রেখেছে আমরা তার হক আদায় করবো।
শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের ক্যাম্পাস নির্মাণ না করা পর্যন্ত তাদের পথ থামবে না বলে প্রত্যয় জানিয়েছেন সাদিক কায়েম। “আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব, ইনশাল্লাহ।” নিজেকে ডাকসুর ভিপি হিসেবে তুলে ধরতে চান না বলে জানিয়েছেন সাদিক কায়েম।
“আমি আমার বোনের একজন ভাই হিসাবে আমাকে পরিচয় দিতে চাই. আমার একজন ছোট ভাইয়ের বড় ভাই হিসাবে আমি পরিচয় দিতে চাই। আমার একজন বড় ভাই আছেন, স্নেহের ছোট ভাই হিসাবে পরিচয় দিতে চাই, আমার বন্ধুর একজন বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিতে চাই। আমার শিক্ষকের একজন ছাত্র হিসাবে আমি আমাকে পরিচয় দিতে চাই, আমি কথা দিচ্ছি সাদিক কায়েমকে আপনারা যেভাবে দেখেছেন. ডাকসুর ভিপি হওয়ার পরেও তার কোনো পরিবর্তন হবে না।
সংবাদ সম্মেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘সবার জন্য একটা নিরাপদ’ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সাদিক কয়েম। তিনি বলেছেন এই নির্বাচন আয়োজনে যারা কাজ কাজ করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি, স্মরণ করেছেন নারী শিক্ষার্থীদের কথাও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে নানা ধর্ম এবং ভিন্ন মত ও পথের মানুষদের একসঙ্গে নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে সাদিক কায়েম।
তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ধর্মের যে পথের যে মতে যে আদরর্শে লোক না হোক না কেন আমরা সবাই একসাথে কাজ করবো। আমরা এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা ‘মাল্টিকালচার’ হিসাবে আমরা নির্মাণ করবো এবং আমাদের প্রতিজ্ঞা আমাদের এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক ইনস্টিটিউট হিসাবেআমরা পরিণত করব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া একজন শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষ থেকে যাতে পড়াশোনার ভালো পরিবেশ পায় সেটি নিশ্চিত করার কথা বলেছেন সাদিক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গবেষণার পরিবেশ থাকবে, তার আবাসন নিয়ে ভাবতে হবে না. তার খাদ্যের নিরাপত্তা থাকবে, স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা থাকবে এবং আমাদের নারীদের জন্য একটা নিরাপদ ক্যাম্পাস হিসাবে আমরা গড়ে তুলব।”
সাদিকের কথায়, “শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষা তাদের আমাদের আকাঙ্ক্ষা, শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বরই তাদের কণ্ঠস্বর। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশাই তাদের প্রত্যাশা।আমরা আমাদের এই ক্যাম্পাসকে স্বপ্নের ক্যাম্পাস না হওয়ার আগে পর্যন্ত. আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব, ইনশাল্লাহ।”
নির্বাচনে অংশ নেওয়াদের ‘সহযোদ্ধা’ বর্ণনা করে তিনি বলেন, “এখানে যারা প্রার্থী ছিল আমরা সবাই সহযোদ্ধা ছিলাম, আমাদের সহযোদ্ধারা তাদের যে ইস্তেহারগুলো ছিল আমরা সবাই একসাথে কাজ করতে চাই।”
অন্য দলের প্রতি তাদের চাওয়া নিয়ে সাদিক বলেন, “এখানে আমাদের সাথে যারা একসাথে নির্বাচন করেছি. তারা প্রত্যেকে এক একজন আমাদের উপদেষ্টা, আমরা আশা করব তারা আমাদেরকে যে কোনো বিষয়ে পরামর্শ দিবে। আমাদেরকে গাইড করবে, আমাদের যে কোনো ভুলবিষয় যে কোনো সিদ্ধান্তে তারা আমাদেরকে ধরিয়ে দিবে, আমরা সবাই আমাদের স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ করব।
নির্বাচনের দিন দায়িত্বপালনকালে মারা যাওয়া সাংবাদিক ও তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান সাদিক কায়েম। তিনি সব গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ডাকসুতে বিপুল ভোটের ব্যবধানের এই জয়কে কেবল শিবিরের নয়, তা শিক্ষার্থীদের বিজয় বলে মন্তব্য করেছেন জিএস পদে এস এম ফরহাদ। তিনি পেয়েছেন ১০,৭৯৪ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
ফরহাদ বলেন, “আপাতত এইটুকুই এটি কোন শিবিরের বিজয় নয়. এটি কোন স্বাধীন বিষয় নয়, এটি মূলত শিক্ষার্থীদের বিজয়। আমরাও আজকে থেকে এখন থেকে আমরা সকল শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি প্রতিনিধি হয়ে প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর ভাইয় হয়ে কিংবা বোন হয়ে কাজ করতে চাই. একজন চারুকলার একজন শিক্ষার্থী, ইসলামিক একজন শিক্ষার্থী, জগন্নাথ হলের একজন হয়ে কাজ করতে চাই।
ডাকসু নির্বাচনের আগে প্রচার কাজের সময় অন্যান্যদের সঙ্গে যেসব মতবিরোধ হয়েছে বা পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়েছে, সে সবের ঊর্দ্ধে উঠে কাজ করার প্রত্যাশা রেখেছেন জিএস পদে নির্বাচিত ফরহাদ।
দায়িত্ব পালনে তাদের প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীর ভূমিকা তুলে ধরে ফরহাদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর প্রতি আজকে থেকে আমার বিনীত অনুরোধ থাকবে দায়িত্ব গ্রহণ এবং দায়িত্ব পালন পর্যন্ত যে কদিন সেই দায়িত্বে আমারা থাকব আমি ব্যক্তিগতভাবে থাকব সেই কদিন পর্যন্ত ঢাকা প্রত্যেকটা শিক্ষার্থী আমার জন্য উপদেষ্টা হয়ে কাজ করবেন।
“শিক্ষার্থীরা আমাদের পরামর্শ দিবে, আমাদের পর্যালোচনা দিবে আমাদেরকে ভুল ধরিয়ে দেবে, শুধরে দেবে, আমাদের পথ চলতে সহযোগিতা করবে, আমরা ভুল পথে গেলে সে পথে আমাদেরকে আটকাবে।