সময়ের জনমাধ্যম

কর্মজীবনে একদিনও ছুটি নেননি এই প্রবাসী, ৩১ বছর পর দেশে ফিরছেন

রেমিট্যান্স যোদ্ধা আবু বকর

Last Updated on 3 weeks by zajira news

জুম্মান হোসেন, মালয়েশিয়া প্রতিনিধি: পরিবারের সুখের আশায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় কর্মরত এক রেমিট্যান্স যোদ্ধা আবু বকর (৭০)। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে একবারের জন্যও দেশে আসেননি।

আবু বকর মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর রাজ্যের ক্লাংয়ের একটি মলের পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করেন। বছরের ৩৬৫ দিনে একদিনের জন্যও তিনি ছুটি নেননি। এবার ৩১ বছর পর দেশে ফিরছেন তিনি।

আবু বকর জানান, বর্তমানে তার এক মেয়ে বাংলাদেশের একজন বিচারক, একজন প্রকৌশলী এবং আরেকজন ডাক্তার। সন্তানদের এই সফলতার জন্য প্রবাসে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন তিনি। আর এই উৎসর্গের প্রতিদান দিয়েছেন সন্তানেরা, এটিই তার বড় সান্ত্বনা।

তিনি বলেন, ‘আমি মালয়েশিয়ায় আসার আগে শুনেছি এখানে প্রচুর কাজ। এমন কোনো কাজও যদি থাকে যা কেউ করতে চায় না, তা আমি করবো। আমি একবারের জন্যও অসুস্থতার ছুটি নেইনি। ইনশাআল্লাহ, আমি এখনও শক্তিশালী।’

আবু বকর বলেন, “এখানে (মালয়েশিয়ায়) আসার পর থেকে আমি আর বাংলাদেশে একবারও যাইনি। আমি আমার পরিবারকে মিস করি, তারাও আমাকে মিস করে। কিন্তু আমি যা করেছি, তা আমার সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য করেছি।”

মালয়েশিয়ায় দৈনন্দিন জীবনযাপন বর্ণনা করে আবু বকর বলেন, “প্রতিদিন আমি ঘুম থেকে উঠি, গোসল করি, নাশতা করি, কাজে যাই, বাসায় ফিরি এবং দেশে পরিবারের সঙ্গে কথা বলি, তারপর বিশ্রাম নিই।”

নিজেকে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে বর্ণনা করে আবু বকর তার উপার্জনের একটি বড় অংশ বাংলাদেশে পরিবারের কাছে পাঠিয়েছেন। ক্লাং রয়্যাল সিটি কাউন্সিল বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তাকে পুরস্কৃত করেছে।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঐ বাংলাদেশিকে নিয়ে করা পোস্টকে ঘিরে শুরু হয় তুমুল আলোচনা। দেশটির জনপ্রিয় অনলাইন দ্যা স্টার সম্প্রতি এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

আর তার এই প্রতিক্রিয়া সামনে আসে ইন্সটাগ্রামে দেয়া আহমেদ হুমাইজি নামে এক মালয়েশিয়ানের পোস্টকে ঘিরে। যিনি ঐ পোস্টে আবু বকর নামে ঐ বাংলাদেশির বক্তব্য ও মতামত শেয়ার করেন।

সরকারি তথ্য বলছে, মালয়েশিয়ায় একজন ক্লিনার বা পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মাসিক বেতন ১ হাজার ২০০ রিঙ্গিত বা ৪০০ মার্কিন ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশ মুদ্রায় প্রায় ৪৮ হাজার টাকা ছিল তার মাসিক আয়।

হিউম্যানস অব কুয়ালালামপুরের মতে, আবু বকর বাংলাদেশে ফিরে গেছেন তার পরিবারের কাছে। তিনি যখন দেশ ছাড়েন, তখন ছোট ছেলের বয়স ছিল মাত্র ৬ মাস। আবু বকরের জীবনের গল্প সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।

একজন লিখেছেন, “কী অসাধারণ একজন আদর্শ মানুষ! পরিবারের প্রতি তার অটুট আস্থা ও ভালোবাসা তাকে এত বছর ধরে চালিয়ে নিয়ে গেছে।’

অপর একজন মন্তব্য করেছেন, “কোনো শ্রমের মর্যাদাই কম নয়। তারা নিজ হাতে পরিবারের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে দেন, সবার উচিত তাদের সম্মান করা।”

তবে এক নেটিজেন আবু বকরের সন্তানদের সমালোচনা করে বলেছেন, “যদি আমি বিচারক, চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হতাম, তবে অনেক আগেই বাবাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতাম।”