সময়ের জনমাধ্যম

কেউ আমাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

Last Updated on 5 months by zajira news

নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, জনগণ থেকে কেউ তাঁকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবেন না। আমার একটাই শক্তি হচ্ছে-জনগণ। তাদের শক্তি নিয়েই আমি চলি। জনগণের মধ্যে একটি আস্থা সৃষ্টি হয়েছে যে, আমি তাদের জন্য কাজ করি। কাজেই এই আস্থা ও বিশ্বাসটাই হচ্ছে আমার একমাত্র সম্বল। আর এই সম্বল নিয়েই আমি চলি। এ জন্যই আমি কাউকে পরোয়া করি না।’

তিনি দৃঢ় কন্ঠে বলেন, ‘যতক্ষণ আমার দেশবাসী আমার পাশে আছে ততক্ষণ আমি কাউকে পরোয়া করি না।’

বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপণী ভাষণে এ কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপত্বি করেন।

সরকারের সমালোচকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা আরও বলেন, মানুষের কল্যাণে কী করণীয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করি। দেশের কল্যাণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ভোগ করবেন সবাই আর কথায় কথায় ব্যাঙ্গো করবেন আর প্রশ্ন তুলবেন। প্রশ্ন তোলার আগে- নিজেরা কী করেছেন? কোন দল করেন- সেই দলের বৃত্তান্ত থেকে শুরু করে অপকর্মগুলো একটু চিন্তা করে নেবেন। আয়নায় নিজেদের চেহারাটা আগে দেখেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করি। যে কাজগুলো আমরা করেছি তার সুফলটা দেশবাসী পাচ্ছে, সেটাকে স্বীকার করেন। কিন্তু প্রত্যেকটা কাজকে যদি প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে (চেষ্টা) করা হয়, হ্যাঁ তাতে কি করতে পারেন, জনগণের কাছ থেকে তো আমাকে দূরে সরাতে পারবেন না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ আমি জানি, আমার বাবার সঙ্গেও একই জিনিস হয়েছে। যতগুলো কাজ তিনি করে গেছেন মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে- সংবিধান দেওয়া থেকে শুরু করে এমন কোন সেক্টর নাই যার ভিত্তিটা তিনি তৈরি করে দেন নাই। তারপরও তাঁর সমালোচনা, তার বিরুদ্ধে নানা কথা লেখা, অনেক কিছু করে তাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। যখন পারেনি তখন তাকে হত্যা করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাকেও হত্যার জন্য বার বার চেষ্টাই করা হয়েছে। কিন্তু আমি বেঁচে গেছি সেটাও আমার জনগণ এবং দলের নেতাকর্মীরা সব সময় আমাকে ঘিরে রেখেছে। নিজেরা জীবন দিয়ে আমার জীবন বাঁচিয়েছে। আমি এখন জনগণের জন্যই কাজ করে যেতে চাচ্ছি এবং কাজ করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বিগত ১৫ বছরে যে পরিমাণ কাজ করেছে অন্যরা ২৯ বছরেও সে কাজ করতে পারে নাই। পারবেনও না কারণ প্রকল্প দিয়েইতো আগে টাকা খাওয়া। আর আমরা প্রকল্প শেষ করেই ছাড়ি, টাকা খাওয়ার কোন সুযোগ নাই। এটা হলো বাস্তবতা।

এ সময় পদ্মা সেতু নির্মাণের শুরুতে ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তাদের অভিযোগের বিরুদ্ধে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন যে, এখানে কোন দুর্নীতি হয়নি এবং বিশ্বব্যাংকও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ মেট্রোরেল নিয়েও প্রশ্ন তোলেন? এর কী প্রয়োজন ছিলো। তিন হাজার কোটি টাকা দিয়েইতো যানজটমুক্ত হতো। আজকে প্রতি ঘন্টায় ৬০ হাজার মানুষ মেট্রোরেল দিয়ে চলতে পারে, ৬ থেকে ৭ লাখ মানুষ চলাচল করতে পারবে দিনে। উত্তরা থেকে সেই বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত। এরপর এটা কমলাপুর রেল ষ্টেশন পর্যন্ত যাবে। এটায় যারা চড়ছে তারা সুফল পাচ্ছে। যারা এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল- তারা লজ্জা পাচ্ছে কী না জানিনা। কেউ কেউ আবার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যদিও এখান থেকে সব থেকে ভাল বিদ্যুৎ আমরা পাব। এজন্য সেখানে আমরা আরো একটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবো।

বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যতই বলেন, যেখানে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ছিল, আজকেতো ১৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ আমরা উৎপাদন করতে পারি।

তিনি বলেন, যে কাজগুলো আমরা করেছি তার সুফলটা দেশবাসী পাচ্ছেন। সেটাকে স্বীকার করেন।

 

অতিমারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশনে বিশ্ব মন্দা ছোঁয়ায় দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাধারণ বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষদের কিছুটা কষ্ট হচ্ছে সেক্ষেত্রে তাঁর সরকার প্রায় এক কোটি মানুষকে পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য স্বল্পমূল্যে সরবরাহ করার ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রদান করে সাধারণের জীবনযাপন সহজ করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই, বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদান, ভূমিহীনদের বিনামূল্যে ঘর এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়াসহ সরকার গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত কর্মসংস্থান বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ২১টি জেলা এবং ৩৩৪টি উপজেলা ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত বলে তাঁর সরকার ঘোষণা দিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ এদেশে কোন অতিদরিদ্র বলে কেউ থাকবে না। ইতোমধ্যে দারিদ্রের হার ৪১ ভাগের ওপর থেকে নেশে ১৮ দশমিক ৭ ভাগে এসেছে। কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংসন ইত্যাদির কারণে মূল্যস্ফীতি না হলে এটা তাঁর সরকার আরও কমিয়ে ফেলতে পারতো। তারপরও সরকারের লক্ষ্য রয়েছে ভবিষ্যতে এটা কমিয়ে ফেলার।

তিনি এ সময় দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়িয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার ওপরও পুনরায় গুরুত্বারোপ করেন।