সময়ের জনমাধ্যম

কোটাবিরোধীরা ৪ ঘন্টা পর শাহবাগ ছাড়লেন, মঙ্গলবার গণসংযোগ

Last Updated on 1 year by zajira news

নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ ছেড়েছেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। সোমবার (০৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগ মোড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড় অবরোধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা।

বুধবার (১০ জুলাই) ৬৪ জেলায় আন্দোলন হবে জানিয়েছেন তারা। আগামীকাল মঙ্গলবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা সর্বাত্মক ব্লকেডের প্রস্তুতি নিচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্রধর্মঘট চলমান থাকবে। আগামীকাল অফলাইন ও অনলাইন গণসংযোগ চলবে। গণসংযোগ করে আগামীকাল বিকেলে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের সমন্বয় করে সর্বাত্মক ব্লকেডের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেব।’

আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে চাই। কিন্তু আপনারা আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না। আমরা থাকব রাজপথে, আপনারা থাকবেন এসি রুমে, গভীর ঘুমে; তা হতে পারে না। আমাদের দাবি নিয়ে সমন্বয় করা না হলে ভয়াবহ পরিণাম হবে। আমাদের কোনো ভাই, কোনো বোনের কোনো কিছু হলে দায়ভার আপনাদেরকে নিতে হবে।

আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক শারজিস আলম বলেন, যারা ছাত্রসমাজের সঙ্গে বৈষম্য করতে চায় তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, ছাত্রসমাজ ঘুমিয়ে পড়েনি। আমরা ছাত্রসমাজ মনে করি, একাত্তরের পর ২০২৪ সালে এই রাষ্ট্রের আরেকবার সংস্কার প্রয়োজন। এ আন্দোলন ৭ দিনের নয়। একাত্তর ৭ দিনে আসেনি। আজ দেশের প্রায় ৪০টি জেলায় ব্লকেড হয়ে গেছে। কীভাবে ৬৪ জেলায় ব্লকেড করতে হয় তা আমরা দেখিয়ে দিতে চাই।

কোটা সংস্কার ও ২০১৮ সালের মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহালের দাবিতে সারা দেশে চলছে শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি। আন্দোলনের প্রধান পয়েন্ট শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দিতে জাতীয় পতাকা, কাফনের কাপড় ও শিকল পরে অবরোধে অংশ নিয়েছেন অনেকে।

সোমবার রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে দেখা যায়, পিঠে সরকারি বিভিন্ন চাকুরিতে ‘কোটা বৈষম্যের’ তথ্য তুলে ধরে এবং হাতে-গলায় শিকল পরে আন্দোলন অংশ নিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম। তার পিঠে লেখা রয়েছে ‘প্রাইমারিতে কোটা ৯৬ শতাংশ, রেলে ৮২ শতাংশ, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে ৭০ শতাংশ, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি ও ননক্যাডারে ৬০ শতাংশ ও বিসিএসে ৫৬ শতাংশ!!!

তরিকুল বলেন, আমাদের দেশে মেধাবীরা কোটার কাছে বন্দি। প্রতিটি চাকুরিতে অর্ধেকেরও বেশি কোটা, কোনও চাকুরিতে প্রায় শতভাগ। এই কোটা প্রথার কারণে অনেক মেধাবী তরুণ পড়াশোনা শেষে হতাশায় আত্মহত্যা করে। আমাদের এই কোটার শিকল ভাঙতে হবে, মেধাবীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

পতাকা গায়ে দিয়ে আন্দোলনে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসিমউদদীন হলের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার রেজা। রেজা বলেন, যেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমরা এই লাল-সবুজের পতাকা পেয়েছি। আবারও সেই স্বাধীন দেশে কোটা প্রথার মাধ্যমে বৈষম্য তৈরি মানে এই জাতীয় পতাকার অপমান। আমরা এই বৈষম্য কখনোই মেনে নেব না। আমাদের ন্যায্য দাবি পূরণ করেই ঘরে ফিরবো।

এছাড়াও, ঢোলের তালে তালে গান কবিতা ও শ্লোগানে শ্লোগানে চলছে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি। এ সময় একদল শিক্ষার্থীকে প্রতিবাদী গ্রাফিতি আঁকতে দেখা যায়। ‘একেতো কোটার বাঁশ, তার উপরে প্রশ্নফাঁস!’ রাজপথে এই গ্রাফিতি আঁকেন আন্দোলনকারীরা।
উলে­খ্য, গত ২ জুলাই থেকে নতুন করে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছে। ৭ জুলাই থেকে সারা দেশে রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অবরোধের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকুরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ওই প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাত সদস্য ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এই রিটের চূড়ান্ত শুনানিতে গত ৫ জুন সরকারি চাকুরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

গত ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সরকারি চাকুরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রাখার নির্দেশ দেন। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গত ২ জুলাই থেকে আন্দোলনে নামের শিক্ষার্থীরা। ৭ জুলাই থেকে তারা বিভিন্ন সড়ক অবরোধের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছেন।