সময়ের জনমাধ্যম

কোরবানির পশুর দাম চড়া !

Last Updated on 7 months by zajira news

রাজশাহী প্রতিনিধি, জাজিরা নিউজ: কদিন পরই ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত হয়ে একমাত্র আল্লাহপাকের কৃপা ও সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় মুসলিম সম্প্রদায়ের পশু কোরবানি করেন।
কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে কোরবানির পশুর দাম ততই বাড়ছে। ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও এ বছর অনেকে কোরবানি দিতে পারছেন না!

কোরবানির ঈদের সময় ঘনিয়ে আসায় রাজশাহীর প্রায় প্রতিটি হাটেই পর্যাপ্ত পরিমাণে পশু সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু হাটগুলোয় এখনও সেভাবে কেনা-বেচা জমে ওঠেনি। মানুষজন পশুর হাটে গিয়ে দরদাম করে খালি হাতেই বাড়ি ফিরছেন। লাগামহীন দামের কারণে পশু কিনতে পারছেন না বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।

তারা বলছেন, ৩/৪ মণ ওজনের একটি ছোট্ট আকৃতির গুরুর দামও দেড় লাখ টাকার ওপরে!

তাই হাটে কোরবানির পশুর আধিক্য থাকলেও ক্রেতা কম। আকাশছোঁয়া দামের কারণে কোরবানির পশু কিনতে গিয়ে হা-হুতাশ করছেন সাধারণ মানুষ।

রাজশাহী সিটি হাটে কোরবানির জন্য গরু কিনতে আসা ছোট বনগ্রাম এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হাটে পর্যাপ্ত পরিমাণে কোরবানির পশু রয়েছে। কিন্তু দাম চড়া। তাই কেউ পশুর কাছে ভিড়তে পারছেন না। গেল বছরও তারা সাত ভাগে (সাড়ে ১৭ হাজার টাকা করে) ১ লাখ ২২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে মাঝারি আকৃতির গরু কিনেছিলেন। কিন্তু এবার মাঝারি আকৃতির গরু তাদের মত সাধারণ ক্রেতাদের হাতের নাগালের বাইরে। ছোট আকৃতির গরুর দামই হাঁকা হচ্ছে দেড় লাখ টাকার ওপরে। তাই দরদাম করেই ফিরে যাচ্ছেন। সবার সাথে কথা বলে বাজেট বাড়িয়ে আবারও শেষ দিন আসবেন গরু কিনতে।

পশুহাটে কথা হয় নিউমার্কেট সুলতানবাদ এলাকায় আগত ক্রেতারা জানান, বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে বাজার দাম অনুপাতে আরও কিছু বাড়িয়ে হাটে ওজন দরে গরুর দাম হাঁকছেন খামারি, ব্যাপারি এবং অ্যাগ্রো ফার্মগুলো। তাই এখন সরবরাহ বেশি থাকলেও দাম বেশি।

অথচ আগে দেখা যেত সরবরাহ সংকট থাকলে পশুর দাম বাড়তো। ক্ষেত্র বিশেষ ভারতীয় গরুর ওপরও নির্ভরশীল হতে হতো কোরবানির মৌসুমে। কিন্তু এখন কোরবানিকে টার্গেট করে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন অ্যাগ্রো ফার্ম এবং প্রান্তিক খামারগুলোতেই পশু লালনপালন করা হচ্ছে। তাই কোরবানির সময় চাহিদার চেয়েও বেশি পশু থাকছে।

কিন্তু এরপরও আকাশচুম্বী দাম। পশু লালনপালনে গোখাদ্য, ওষুধ ও আনুষঙ্গিক খরচে কথা বলে দাম প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এজন্য যতই দিন যাচ্ছে কোরবানি দেওয়ার সক্ষমতা ততই কমছে। অন্তত তার মত অনেক সাধারণ মানুষ পারছেন না। পশু থাকলেও তাই কেনা-বেচা সেভাবে জমে ওঠেনি এখনও। তারা কজনও আজ দাম করেই ফিরছেন। শেষ দিন দাম কমলে আসবেন বলেও জানান।

তবে অন্য কথা বললেন রাজশাহীর নওহাটার ধর্মহাটা গ্রামের গরু বিক্রেতা আফাজ উদ্দিন।

তিনি বলেন, এ বছর গরুর বাজার মন্দা। দাম খুবই কম বলছেন ক্রেতারা। গরুর এত আমদানি। অথচ দেড় লাখ টাকার গরুর দাম বলছে এক লাখ। পাঁচটি গরু এনেছিলাম৷ দুইটা গরু একটু কমে বিক্রি করেছি। তবে বাকি তিনটা মাঝারি আকৃতির (৪/৫ মণ) গরু আছে। এগুলো কম দামে ছাড়ব না। প্রয়োজনে আগামী বছর বিক্রি করব।

রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান বলেন, কমবেশি সব এলাকাতেই এখন অ্যাগ্রো ফার্ম হয়ে গেছে। অনেকে সেখান থেকেই পছন্দ করে গরু কিনছেন। তাই পশু হাটে আগের সেই জমজমাট অবস্থা নেই। আগে কোরবানিকে সমানে রেখে মাসজুড়ে কেনা-বেচা হতো। এখন হয়, শেষের এক সপ্তাহ! তাও এবার দাম বেশির কারণে ভিড় কম। দু-দিন থেকে হাটে মোটামুটিভাবে মানুষজন আসছেন। অন্য বারের তুলনায় গরুর আমদানিও অনেক ভালো আছে। ঈদের আর মাত্র কদিন বাকি। এখন দেখা যাক কবে জমজমাট হয়।

রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাজশাহীতে এ বছর ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ৮৩ হাজার ৩৬৫টি গরু, ৩ হাজার ৭৬৯টি মহিষ ও ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭৫৩টি ছাগল রয়েছে। নিজ নিজ গ্রামের বাড়ি ছাড়াও খামার পর্যায়ে এসব পশু লালনপালন হয়েছে। তাই গেল কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্তই থাকবে কোরবানির পশু।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার আখতার হোসেন বলেন, এই কোরবানির মৌসুমে গেল কয়েক বছরের তুলনায় চাহিদার চেয়ে বেশিই পশু আছে। তবে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গোখাদ্যের দাম। তাই উৎপাদন খরচও বাড়ছে। আর বাড়ছে পশুর দামও। আপাতদৃষ্টিতে এটা অস্বাভাবিক মনে হলে বিষয়টি কিন্তু সত্য।

তবে দাম একটু বেশি মনে হলেও এবার ঈদে কোরবানির পশুর কোনো সংকট থাকবে না বলেও জানান এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।