Last Updated on 12 months by zajira news
স্পোর্টস ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: ৪৮তম জাতীয় দাবার ১২তম রাউন্ডে গতকাল গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবের বিপক্ষে খেলতে খেলতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন জিয়াউর রহমান। ২৫ চালের পর ম্যাচটা থেকে যায় অসমাপ্ত। নিয়ম অনুযায়ী অসমাপ্ত ম্যাচ আবার শুরু করতে হয়।
কিন্তু জিয়ার মৃত্যুতে ওই ম্যাচে পূর্ণ পয়েন্ট পেয়ে যাবেন রাজীব। তবে মানসিকভাবে তিনি বিপর্যস্ত। জানাজায় এসে বললেন, ‘আমার সামনেই জিয়া ভাইয়ের এমন মৃত্যু জীবনে দুঃসহ স্মৃতি হয়ে থাকবে। এটা না হলেই ভালো হতো।’
পল্টনে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনে সেই ছোটবেলা থেকেই ছিল তাঁর আসা–যাওয়া। নিজের সেই প্রিয় স্থানে আর যাবেন না গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। শেষবারের মতো আজ (০৬ জুলাই) তাকে কফিনে শুয়ে পুরোনো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে নিয়ে আসা হয় । পরিষদের নিচতলায় হলো জিয়ার জানাজা।
ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন জানাজায়। মাত্র ৫০ বছর বয়সে অকালপ্রয়াত এই দাবাড়ুর কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ), দাবা ফেডারেশন, তায়কোয়ান্দো ফেডারেশন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে জিয়ার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মোহাম্মদপুরে তাজমহল রোডে। বাবার কবরের পাশে হচ্ছে তাঁর শেষ ঠিকানা।
জিয়ার চলে যাওয়ায় বাংলাদেশের দাবার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম। জানাজায় এসে তিনি বলেন, ‘অনেকেই টুর্নামেন্টের পুরস্কার ও নানা সুযোগ-সুবিধা কম হলে খেলতে চাইতেন না। জিয়া কখনোই এ রকম ছিলেন না। সব টুর্নামেন্টেই তিনি অংশগ্রহণ করতেন। যেন অন্যরা তার মাধ্যমে শিখতে পারে।’
জিয়ার স্মৃতি ধরে রাখার পরিকল্পনার কথাও জানান ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক, ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনেই আলাদা একটি ফ্লোর পাওয়ার কথা ছিল আমাদের । সেখানে গ্র্যান্ডমাস্টার কর্নারের পরিকল্পনা ছিল। সেটা যত দিন না হয় আমরা বর্তমান দাবা ফেডারেশন ক্রীড়াকক্ষকেই জিয়ার নামকরণ করার উদ্যোগ নেব।’
জিয়াকে চিরবিদায় জানিয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘জিয়ার অকালমৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত। তার যে পবিত্র স্থান, যে স্থানকে সে ভালোবাসত, সেখান থেকেই সে চলে গেল। দাবা খেলা অবস্থাতেই মারা গেল। ভালো একজন খেলোয়াড়কে হারিয়েছি আমরা।’
জিয়ার পরিবারকে আর্থিক সহায়তার কথাও বলেন বিওএ মহাসচিব, ‘আমরা তার পরিবারের পাশে থাকব। দাবা ফেডারেশনের সঙ্গে কথা বলে একসঙ্গে কাজ করব। প্রয়োজনে তারা যেখানে যেতে বলবে আমরা যাব। একটা তহবিল গঠনের দরকার আছে।’
দাবা ফেডারেশনের সহসভাপতি তরফদার রুহুল আমিনও তহবিল গঠনের কথা বলেছেন। গতকাল রাতে যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসানের সঙ্গে এ নিয়ে তাঁদের কথা হয়েছে জানিয়ে রুহুল আমিন যোগ করেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী এ ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা নেবেন বলেছেন। দাবা ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আমরাও ব্যবস্থা নেব। সবাই মিলে একটা তহবিল গঠন করে দিতে পারলে ভালো হবে। জিয়ার ছেলেকেও পরিচর্যা করে গ্র্যান্ডমাস্টার বানাতে পারি কি না, চেষ্টা করব। এ ব্যাপারে সবাই একযোগে কাজ করব।’