Last Updated on 12 months by zajira news
নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার চেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। ছাত্রলীগের দুই দফা হামলা, অস্ত্রধারী বহিরাগতদের নিয়ে আসা, এবং এক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাল্টা ধাওয়া ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে গোটা ক্যাম্পাস।
সোমবার (১৫ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের দেড়শতাধিক নেতাকর্মী বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও তা আরও ঘোলাটে আকার ধারণ করে। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিয়ে ছাত্রলীগকে পিছু হটালেও এসময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল ও গুলিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগরের ভয়াল পরিস্থিতির বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
গনমাধ্যমে জানা যায় , সাংবাদিকদের ওপর পেট্রোল বোমা ছুড়ে মেরেছে বহিরাগতরা। আতঙ্কে তারা পুকুরে বসে আছেন। হামলাকারীরা সাংবাদিকদেরও ছাড় দিচ্ছে না। কেউ কেউ জঙ্গলের ভেতরে লুকিয়ে আছেন। অনেকেই আতঙ্কে দিশেহারা। এসময় ফোনে কথা বলার মতো অবস্থায় ছিল না।
প্রায় একইসময়ে জেইউ ইনসাইডার নামের একটি ফেসবুক পেজের পোস্টে বলা হয়, ‘এমন ভয়াল কালোরাত জাহাঙ্গীরনগরের জীবনে হয়তো আর আসেনি।’ ওই পেজ থেকে ক্যাম্পাসের সংঘর্ষের চিত্র লাইভের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছিলো।
অন্যদিকে পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাস ও গুলিতে বণিক বার্তার মেহেদী মামুন, দৈনিক বাংলার আব্দুর রহমান খান সার্জিল ও বাংলাদেশ টুডে’র জোবায়ের আহমেদ আহত হন। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কয়েকজন পুলিশ সদস্যকেও বেধড়ক মারধর করে। এরপর পুলিশ জলকামান নিয়ে আসে। পুলিশ অন্তত অর্ধশত রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
অনলাইন পোর্টাল রাইজিংবিডির জাবি প্রতিনিধি বোরহান উদ্দিন জানান, আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করতে ছাত্রলীগ বাইরে থেকে একশো জন শুটার নিয়ে এসেছিল। তাদের পরনে ছিল হেলমেট ও কালো টি-শার্ট। হাতে পিস্তলসহ অন্যান্য অস্ত্র ছিল। এরা সাভার ও আশুলিয়ার লোকাল গ্যাং হতে পারে।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের সামনে রেখে হামলা চালায়। হামলা থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে আশ্রয় নেন। এ সময় তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। প্রথমে আক্রমণের শিকার হলেও পরে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগকে ধাওয়া দেন। হল থেকে হাজারো শিক্ষার্থী বের হয়ে এলে ছাত্রলীগ পিছু হঠে। সেসময় পুলিশের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বেঁধে গেলে পুলিশ গুলি চালায়।
এর আগে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মাহফুজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের সামনে আমাদের মিছিলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এতে নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল। এর প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে আমরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছিলাম। পরে রাত ১২টার দিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দ্বিতীয় দফায় লাঠি হাতে আমাদের ওপর হামলা চালায় এবং আমাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।’
সেসময় এক ফেসবুক পোস্টে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহের হোসেন লিখেছেন, ‘ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা ঢুকেছে। ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে ভিসি মহোদয়ের বাংলোতে আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসনকে নিরাপত্তা বিধানের অনুরোধ করছি। যা কিছুই হোক, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।’
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আবদুল্লাহ হিল কাফী বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।’ তবে সার্বিক পরিস্থিতির ব্যাপারে এখনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কারোর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।