Last Updated on 5 months by zajira news
ধর্ম ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: মানুষের জীবনে রমজান মাস আসে, আবার চলে যায়। একসময় রমজান আবার ফিরে আসবে, কিন্তু সে মানুষই আর থাকবে না।
রমজান মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রোজাদারদের জন্য বেশ কিছু আচরণ শিক্ষা দিয়ে যায়। সেগুলোর আলোকে জীবন অতিবাহিত করলে রমজানের আগমন সার্থক ও সফল হয়। রমজানের শিখিয়ে দেওয়া কয়েকটি আচরণের আলোচনা নিম্নরূপ-
রমজানের দেওয়া এই শিক্ষা নিয়ে সুখে-দুঃখে অসহায়, অনাথের প্রতি সারা বছর সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে হবে।
ধৈর্য ধারণ :
হাদিসে রমজান মাসকে ধৈর্যের মাস বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এটি (রমজান) সবরের মাস। আর সবরের প্রতিদান জান্নাত।’ (সহিহ ইবনে খুজায়মা, বায়হাকি, হাদিস : ৩৬০৮)
রোজাদারের সামনে সুস্বাদু খাবার থাকলেও তিনি আহার করেন না, রূপসী স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও এড়িয়ে চলেন। আচার-আচরণেও ধৈর্য ধারণ করেন। তাই রোজা পালনকারীদের উচিত রমজানের ধৈর্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর যেন আবার পরের মাসগুলোতে অধৈর্য না হন।
তাকওয়া অর্জন :
তাকওয়ার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা হলেও শরিয়তের পরিভাষায় তাকওয়া হলো- শুধুই আল্লাহর ভয়ে সব অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা। যার মধ্যে তাকওয়া থাকে তাকে বলে মুত্তাকি। রোজার প্রধান শিক্ষাই হলো তাকওয়া অবলম্বন করা। রোজা বিভিন্নভাবে বান্দাকে সে তাকওয়ার প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে।
যেমন-রোজাদার সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থেকেছে। দিনভর মনোলোভা খাবার ও স্ত্রীর মনোরম আকর্ষণ তাকে পরাস্ত করতে পারেনি। পৃথিবীর কোনো শক্তি বা ভয় নয়, বরং রোজার মাধ্যমে তৈরি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভয়ই তাকে এই সক্ষমতা দান করেছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩)।
অন্যের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন :
রমজান ছিল মুয়াসাতের মাস। মুয়াসাত মানে সহানুভূতি। গরিব-দুঃখী ও অসহায় মানুষেরা বিভিন্ন সময় ক্ষুধা ও তৃষ্ণার কষ্ট সহ্য করে থাকে। রোজার মাধ্যমে রোজাদারের সে উপলব্ধির সুযোগ হয়। অন্যের দুঃখ-কষ্ট বোঝার অনুভূতি সৃষ্টি হয়।
সহানুভূতি প্রকাশের পথ উন্মুক্ত হয়। তার আলোকে রমজানে অপরিহার্য ও সাধারণ সব ধরনের দান-সদকার ক্ষেত্রে উদার হতে হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) সব মানুষের চেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। রমজান মাসে তাঁর দানের হাত আরো বেশি সুপ্রসারিত হতো যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। রমজানের প্রতি রাতে জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) জিবরাইল (আ.)-এর সঙ্গে কোরআন মাজিদ পুনরাবৃত্তি করতেন। আর রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রবলবেগে প্রবাহিত বাতাসের চেয়েও বেশি দানশীল ছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৬; মুসলিম, হাদিস : ৬১৪৯)।
সুন্দর আচরণ :
রোজা মানুষকে সংযত করেছে এবং সুন্দর আচরণ শিখিয়েছে। রোজা রেখে গিবত, পরনিন্দা, অশ্লীলতা, বাগবিতণ্ডা ও মারামারিতে লিপ্ত না হয়ে বরং সব অঙ্গকে পাপ থেকে মুক্ত রাখতে হয়েছে।
হাদিসে এসেছে, ‘রোজা অবস্থায় তোমাদের কেউ যেন কোনো অশ্লীল বা মন্দ কথা না বলে। যেন কোনো ধরনের শোরগোল, হট্টগোলে লিপ্ত না হয়। যদি অন্য কেউ তাকে গালাগাল বা মারধর করে, তবে সে তাকে জানিয়ে দেবে যে আমি রোজাদার।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮০৫; মুসলিম, হা: ২৭৬২)।
মিথ্যা ও প্রতারণামুক্ত জীবন :
রোজার অন্যতম সৌন্দর্য ছিল-রোজা অবস্থায় মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কাজ ছেড়ে দিয়ে মিথ্যা ও প্রতারণামুক্ত জীবন গঠন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কাজ পরিত্যাগ করে না, সে ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ করা আল্লাহর কাছে কোনো গুরুত্ব রাখে না।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮০৪)।
কোরআনের আলোয় জীবন গঠন :
কোরআন অবতরণের সূত্র ধরেই রমজান মাস শ্রেষ্ঠ মাস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আল্লাহ তাআলা এ মাসে রোজা ফরজ করেছেন। মুসলমানরা সবচেয়ে বেশি কোরআন চর্চা করেন পবিত্র রমজানে। রোজা রোজাদারের জন্য আর কোরআন তার পাঠকারীর জন্য কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৬২৬)।
পরিশেষে রমজান মাসে রোজাদার বেশ কিছু আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। জীবনজুড়ে সেসবের অনুশীলন মুমিন বান্দাকে তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়। কাজেই মুমিন বান্দার জীবনে একটি রমজানের সংযুক্তি অনেক বড় হিসেবে পরিগণিত হয়। লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।