Last Updated on 4 months by zajira news

নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআই’কে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে মতপার্থক্য দূর করার উপায় নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে, কোনো দেশেরই এতে লাভ হচ্ছে না।

ঢাকায় সরকারি বাসভবনে পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে পানিবণ্টনের বিষয়টি অবশ্যই হতে হবে।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) পিটিআই-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোর অধিকার সমুন্নত রাখার সুনির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি (পানিবণ্টন) নিয়ে বসে থাকার কারণে এটা কোনো কাজে আসছে না। আমি যদি জানি যে আমি কতটুকু পানি পাব, তাহলে এটি ভালো হতো। এমনকি পানির পরিমাণ নিয়ে যদি আমি খুশি নাও হই, তাতেও সমস্যা নেই। বিষয়টির সমাধান হতেই হবে।’

বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি এবং এ বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করে ঢাকা থেকে গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবর প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, চুক্তি সইয়ের আগে এমন সংকট মোকাবিলায় একটা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা যেতে পারে।

ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা নতুন কোনো বিষয় নয়, বরং খুবই পুরোনো বিষয়। আমরা বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে কথা বলেছি। পাকিস্তান শাসনামল থেকেই এ নিয়ে আলোচনা শুরু। আমরা সবাই যখন ওই চুক্তি চূড়ান্ত করতে চেয়েছি, এমনকি ভারত সরকারও প্রস্তুত ছিল; তখন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার এর জন্য তৈরি ছিল না। আমাদের এর সমাধান করতে হবে।’

বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোর নির্দিষ্ট অধিকার সমুন্নত রাখতে চাওয়ার অধিকার থাকার বিষয়টিও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনে এ বিষয়ে সমাধান করতে হবে। ভাটির দেশগুলোর নির্দিষ্ট কিছু অধিকার রয়েছে এবং আমরা সেই অধিকার চাই।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে একসঙ্গে কাজ করতে এবং এর সমাধান করতে পারি। কেননা এটি গণমানুষের দুর্দশা লাঘব করবে। এ ধরনের মানবিক পদক্ষেপ সত্যিকার অর্থেই সহায়তা করবে (সমস্যা সমাধানে)।’

অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, ‘যখন হাইকমিশনার (ভারতের) আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলেন, আমি বলেছি, বন্যার সময় পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেই লক্ষ্যে আমরা অধিকতর ভালো ব্যবস্থাপনার ওপর কাজ করতে পারি। দুই দেশের মধ্যে এমন সমন্বয়ের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো চুক্তির প্রয়োজন নেই।’

সীমান্ত হত্যা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ড. ইউনূস এর নিন্দা করে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড কোনো সমাধান নয়। কারণ, এটি মোকাবিলার আইনি উপায় রয়েছে। এটা (সীমান্ত হত্যা) একতরফা ব্যাপার। আপনার দেশ দখলের জন্য কেউ সীমান্ত অতিক্রম করছে না। এটা বন্ধ করতে হবে।’

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) চেতনার পুনরুজ্জীবন হওয়া দরকার বলে সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আট জাতির এ জোট আঞ্চলিক অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে। তবে একটি মহৎ উদ্দেশ্যে সার্ক প্রতিষ্ঠিত হলেও এটি এখন শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ এবং এটি এখন কাজ করছে না।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করবেন। এ মাসের শেষদিকে এ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

ড. ইউনূস বলেন , ‘নিশ্চয়ই, আমরা সাক্ষাতের চেষ্টা করব (ড. ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি)। যদি সার্কের সব রাষ্ট্রপ্রধান একত্র হন এবং ফটোসেশনে অংশ নেন, আমি চেষ্টা করব (তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের)। সার্ক এক মহৎ উদ্দেশ্যে গঠিত হলেও এটি এখন শুধু কাগজে সীমাবদ্ধ এবং এটি এখন কাজ করছে না। আমরা সার্কের নাম ভুলে গেছি; আমি সার্কের চেতনার পুনরুজ্জীবন ঘটানোর চেষ্টা করছি।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘দীর্ঘদিন সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হয়নি। আমরা যদি একত্র হতে পারি, তবে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।’ ২০১৬ সাল থেকেই খুব একটা কার্যকর নেই সার্ক। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক এ জোটকে সক্রিয় করতে চেষ্টা চালাচ্ছে নেপাল। ওই বছর পাকিস্তানে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর জম্মু ও কাশ্মীরের উরিতে ভারতীয় সেনা ফাঁড়িতে হামলার পর ভারত ওই সম্মেলনে যোগ দেবে না বলে জানিয়ে দেয়। পরে সম্মেলনটি বাতিল হয়ে যায়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে ইউরোপের দেশগুলো অনেক কিছু অর্জন করেছে। সার্কের কাজ করার বিষয়টি আমাদেরও নিশ্চিত করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে তাকান, কত সুন্দরভাবে এটি কাজ করছে। পাকিস্তানকে নিয়ে যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে, তবে অন্য পথ খুঁজে বের করা যেতে পারে। কিন্তু সার্কের কার্যক্রম অবশ্যই থামানো উচিত নয়।’

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল নামা প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ‘এ সংকট সমাধানে আমাদের ভারত ও চীনের সহায়তা দরকার। বাংলাদেশে ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা এসেছে। এ জনগোষ্ঠীর আকার বাড়ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এটি মারাত্মক চাপ তৈরি করছে। কিছু দেশ তাদের গ্রহণ করছে; কিন্তু সেটি স্বল্প সংখ্যায়। মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের যেহেতু সুসম্পর্ক আছে, তাই নিজেদের নাগরিকদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে রাজি করাতে আমাদের প্রয়োজন ভারতের সহায়তা ।’