Last Updated on 10 months by zajira news
নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: বিপৎসীমার নিচে চলে এসেছে দেশের প্রায় সব নদ-নদীর পানি। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৪ তে দাঁড়িয়েছে । ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫৪ লাখের বেশি। দেশের পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ আগষ্ট) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফেনী, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারে বর্তমানে ৬৪টি উপজেলা বন্যাকবলিত অবস্থায় রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংখ্যা ৪৮৬। আর ১১ জেলায় অন্তত ১০ লাখ ৯ হাজার ৫২২ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫৪ লাখ ৬৪ হাজার ১৬৭।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০ আগস্ট থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত বন্যায় দেশের নয় জেলায় ৫৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ছয় নারী ও সাত শিশু রয়েছে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ফেনীতে, ১৯ জন। এরপর রয়েছে কুমিল্লা। এ জেলায় বন্যায় প্রাণ গেছে ১৪ জনের। এছাড়া নোয়াখালীতে আট, চট্টগ্রামে ছয়, কক্সবাজারে ৩ এবং খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর ও মৌলভীবাজারে একজন করে মারা গেছেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যার অবনতি ঘটে ২০ আগস্ট থেকে। এর আগে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয় লঘুচাপ। এর প্রভাবে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকে। ২০ আগস্ট থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হয় চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও খাগড়াছড়িসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোয়। বৃষ্টির পানির সঙ্গে যুক্ত হয় ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল। পূর্ণিমার কারণে গত কয়েক দিন জোয়ারের সময় পানির উচ্চতাও ছিল অস্বাভাবিক। সবকিছু মিলিয়ে ১১ জেলায় দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা।
মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বানভাসি মানুষের জন্য দুর্গত এলাকাগুলোয় ৩ হাজার ২৬৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রয়েছে। এসব কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৬৮৭ জন। আশ্রয় নিয়েছে ৩৮ হাজার ১৯২টি গবাদিপশুও।
এদিকে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। গতকাল সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের উজানে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে কেবল মুন্সিগঞ্জে। এ জেলার ভাগ্যকুল স্টেশনে ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এ সময়ে অন্য কোথাও ভারি বৃষ্টিপাত হয়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে বুলেটিনে আরো বলা হয়, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ফলে এ সময় এ অঞ্চলের মনু, খোয়াই, ফেনী, মুহুরী, গোমতী, তিতাস ইত্যাদি নদ-নদীর পানি-সমতল হ্রাস পেতে পারে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস নেই।এ সময় সাঙ্গু, মাতামুহুরী, কর্ণফুলী, হালদা ও অন্য প্রধান নদীর পানি-সমতল হ্রাস পেতে পারে।
বুলেটিনে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীর পানি-সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি-সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় থাকতে পারে। এছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মনু নদের পানি-সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অন্যান্য প্রধান নদীগুলোর পানি-সমতল হ্রাস পাচ্ছে।
এদিকে রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ফারাক্কা ব্যারাজের সব গেট খুলে দেয়ার পর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ নদীর পানি ৪ সেন্টিমিটার বেড়েছিল। কিন্তু গতকাল থেকে তা কমতে শুরু করে। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার রাজশাহী পয়েন্টে পানির উচ্চতা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৩৪ সেন্টিমিটার। গতকাল সকালে তা ২ সেন্টিমিটার কমে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ৩৪ সেন্টিমিটারে। এরপর সকাল ৯ পর্যন্ত কমে আরো এক সেন্টিমিটার।
বিহার ও ঝাড়খণ্ডে বন্যার জেরে সোমবার ফারাক্কা ব্যারাজের ১০৯টি গেটের সবই খুলে দেয় ভারত। এতে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ীসহ আশপাশের জেলা প্লাবিত হওয়ার আতঙ্ক দেখা দেয়। যদিও পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, এখনই এর প্রভাবে বন্যা হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।