Last Updated on 1 year by admin
নাজমুল হক বিশ্বাস, জৌষ্ঠ বার্তা সম্পাদক- জাজিরা নিউজ: বর্তমান বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছে। বিশেষ করে, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ এবং ‘পোস্ট-ইডিওলজিকাল’ ধারণাগুলি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, এই ধারণাগুলি কীভাবে আমাদের মতাদর্শগত বিভাজনকে পিছনে ফেলে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করা যায়, সেই চিন্তা থেকেই আসে। যদিও এ ধরনের প্রস্তাবনার উদ্দেশ্য মহৎ, তবে আমি এই চিন্তাগুলোর সাথে একমত নই।
বাংলাদেশে প্রচলিত জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাগুলি কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। এর কারণ আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, কারণ ভুলগুলো পুনরায় করা খুবই সম্ভব। দেশের হিন্দু ও লিবারেল মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রভাব, পাশাপাশি বামপন্থী শক্তির উপস্থিতি, প্রমাণ করে যে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক উদ্যোগ জাতীয় ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এটি ছিল ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের অন্যতম প্রধান যুক্তি।
আওয়ামী লীগের আন্দোলনবিরোধী স্লোগানগুলি অনেকেরই মনে থাকার কথা। ‘আমি কে, তুমি কে? বাঙালি বাঙালি’ এবং ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’—এই স্লোগানগুলি কি আদৌ কোনো গোষ্ঠী বা মতাদর্শের পক্ষে ছিল? শাহবাগ আন্দোলনেও একই ধরনের স্লোগান উচ্চারিত হয়েছিল। অতএব, জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্য যত মহৎই হোক না কেন, পুরনো ভুল আবার না করার জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
ভারতে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সাধারণত কোনো বিরোধ দেখা যায় না। এমনকি রাহুল গান্ধী গণতন্ত্রের জন্য যতই সোচ্চার হন না কেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে মোদির বিজেপির সঙ্গে তার দলে কোনো বিরোধ নেই। বাংলাদেশে কীভাবে আমরা এমন একটি জাতীয় ঐক্য তৈরি করতে পারি? আমার মতে, এর একমাত্র সমাধান হলো রাজনৈতিক ও বৈদেশিক প্রভাব থেকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুক্ত রাখা এবং নিয়মিত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা।
প্রয়োজন হলে, নির্বাচনের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে চার বছরে নামিয়ে আনা যেতে পারে। এভাবে কয়েকটি ধারাবাহিক নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারলে জাতীয় ঐক্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার পরে নির্বাচন করা—এই কল্পনা যতই মহৎ শোনায়, তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। জনগণকে তাদের মতাদর্শ বা গোষ্ঠী-কেন্দ্রিকতা নিয়ে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে দিতে হবে। আমি মনে করি, একে অপরের স্বার্থে ভারসাম্য বজায় রাখাই একটি ফেয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তি।
তৃতীয় বিশ্বের স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের অধিকাংশ নেতাই খলনায়ক কিংবা স্বৈরাচার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে শেখ মুজিবুর রহমানকেই হয়ত আমরা সবচেয়ে বেশি জানি। কিন্তু এই তালিকায় আরও অনেক নাম আছে—মিসরের জামাল আব্দুল নাসের, আলজেরিয়ার হুয়ারি বুমেদিন, তিউনিসিয়ার হাবিব বুরগিবা। পশ্চিমা গণতন্ত্রের মূল দর্শন হলো, জনগণই তাদের জাতীয় ঐক্য ও মতাদর্শ কী হবে তা নির্ধারণ করবে। আগে থেকে সবকিছু নির্ধারণ করে দিলে নির্বাচনের কোনো প্রয়োজন থাকতো না।
অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুনভাবে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে হবে, কিন্তু কোনোভাবেই চাপিয়ে দেওয়া জাতীয় ঐক্যের পথে হাঁটা উচিত নয়।
সূত্র, টেলিগ্রাম অনলাইন পোর্টাল