সময়ের জনমাধ্যম

নৃশংসতা রোধ করতে জাতিসংঘকে পাশে চায় বাংলাদেশ

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (বাঁয়ে), জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ককে (ডানে) চিঠি দিয়েছেন

Last Updated on 4 months by zajira news

নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: জুলাই–আগস্ট মাসে আন্দোলন–অভ্যুত্থান ঘিরে তদন্ত সহ অতীতে নৃশংসতার উৎস খুঁজে বের করে ভবিষ্যতে তার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে জাতিসংঘকে পাশে চায় বাংলাদেশ। এ বিষয়ে জাতিসংঘের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার।

এ সপ্তাহে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ককে লেখা চিঠিতে এ অনুরোধ জানিয়েছেন। চিঠিতে বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে (গত ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট) মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের নেতৃত্বে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের কথা বলা হয়েছে।

গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে বাংলাদেশের পক্ষভুক্ত হওয়ার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক।

জেনেভা ও ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল সেপ্টেম্বরে ঢাকায় আসতে পারে।

৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সব মানবাধিকার সমুন্নত রাখার কথা জানিয়ে আসছে। এরই মধ্যে গুমের ঘটনার জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সনদ সই করেছে বাংলাদেশ। গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে বাংলাদেশের পক্ষভুক্ত হওয়ার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক।

এর আগে আন্দোলন-অভ্যুত্থান ঘিরে যেসব বলপ্রয়োগের ঘটনা ঘটেছিল, সেগুলোর স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য আন্তর্জাতিক তদন্ত নিশ্চিত করতে জাতিসংঘকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। এ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে। এরপর মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের একটি অগ্রবর্তী দল আট দিনের ঢাকা সফর শেষে গত বৃহস্পতিবার ফিরে গেছে।

জেনেভা ও ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ঢাকা সফরের সময় অগ্রবর্তী দলটি নানা পর্যায়ে অন্তত ৪০টি বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে তদন্তের কাজে জাতিসংঘের যুক্ততার পাশাপাশি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষা এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের সংস্কার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের যুক্ততার ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করেছে অগ্রবর্তী দলটি। এ বিষয়টি জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা সামদাসানির ব্রিফিংয়েও এসেছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ আগষ্ট) জেনেভায় বাংলাদেশের সঙ্গে মানবাধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের কার্যক্রমের হালনাগাদ বিষয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, অগ্রবর্তী দলটি সাম্প্রতিক বিক্ষোভে যুক্ত ছাত্রনেতা, অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, রাজনৈতিক দল, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, অগ্রবর্তী দলটি ঢাকায় আলোচনা করে কী পেল, তার সামগ্রিক চিত্র হাইকমিশনারের দপ্তরে উপস্থাপন করবে। এরপর হাইকমিশনারের দপ্তর তা মূল্যায়ন করে তথ্যানুসন্ধান দল পাঠাবে।

মুখপাত্র রাভিনা সামদাসানি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে অগ্রবর্তী দলটি বিভিন্ন বৈঠকে সাম্প্রতিক সহিংসতা ও অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বলপ্রয়োগের তদন্তের পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা করেছে। তারা নাগরিক পরিসর, সত্য ও ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তা, ক্ষতিপূরণ, বিরোধ নিষ্পত্তির পাশাপাশি সংস্কারের প্রক্রিয়ায় মানবাধিকারের অন্যান্য পদ্ধতিগুলোর প্রয়োগসহ বিস্তৃত ক্ষেত্রে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর টেকসই উপায়ে কীভাবে সহায়তা করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করেছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, অগ্রবর্তী দলটি ঢাকায় আলোচনা করে কী পেল, তার সামগ্রিক চিত্র হাইকমিশনারের দপ্তরে উপস্থাপন করবে। এরপর হাইকমিশনারের দপ্তর তা মূল্যায়ন করে তথ্যানুসন্ধান দল পাঠাবে।

জাতিসংঘের কাছ থেকে শুধু তদন্তের জন্যই সহায়তা চাওয়া হয়নি। যে নৃশংসতা ঘটেছিল, আগামী দিনে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সংস্কারে আমাদের কী কী করণীয়, সে বিষয়গুলোতেও তারা সুপারিশ করবে।

এ সপ্তাহে জাতিসংঘের অগ্রবর্তী দলের বাংলাদেশে অবস্থানের সময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেস্টা জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কাছে চিঠি পাঠান। চিঠিতে দ্রুততম সময়ে তদন্ত শুরুর জন্য জাতিসংঘকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে (১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট) মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার জাতিসংঘের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সরকার জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চায়।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার চিঠির বিষয়টি জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা সামদাসানিও উল্লেখ করেছেন। গতকাল ওই ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তথ্যানুসন্ধানের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পেয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক।