Last Updated on 2 months by zajira news
কিশােরগঞ্জ প্রতিনিধি, জাজিরা নিউজ: কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার সাড়ে ২৮ বস্তায় ৯ কোটি, ১৭ লাখ, ৮০ হাজার, ৬৮৭ নগদ টাকাসহ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা এছাড়াও দান হিসেবে পাওয়া গেছে সোনা, রুপা ও হীরার গয়না।
এবার কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবক্সের অতীতের দানের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে নূতন রেকর্ড গড়ল ।
শনিবার (১২ এপ্রিল) সকাল ৭টায় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীর নেতৃত্বে অতিরিক্ত বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহবায়ক জেসমিন আক্তারের উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়।
এ সময় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. এরশাদ মিয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা) (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (এস এ শাখা, অর্পিত সম্পত্তি সেল জেবুন নাহার, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (আরএম শাখা ও লাইব্রেরী শাখা) সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট( সাধারণ শাখা,ট্রেজারী শাখা) মো. মাহমুদুল হাসান, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (নেজারত শাখা, মিডিয়া সেল,) রওশন কবির সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাইরুজ তাসনিম, রুপালী ব্যাংকের এজিএম মোহাম্মদ আলী হারেছি, সেনা বাহিনী ক্যাপ্টেন মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে সেনাসদস্যরা, কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ্ আল মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দানের সিন্দুক থেকে টাকা প্রথমে সাদা বস্তায় ভরা হয়। এরপর টাকাগুলো গণনার জন্য বস্তাগুলো মসজিদের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বস্তা থেকে টাকা মেঝেতে ঢেলে দেওয়ার পর শুরু হয় গণনার আনুষ্ঠানিকতা। টাকা গণনায় পাগলা মসজিদ মাদ্রাসার ও জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদ্রাসার মোট ২৮৬ জন ছাত্র এবং রুপালী ব্যাংকের ৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে ৩৬৬ জন গণননার কাজ করেছেন। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসারের ৭০ জন সদস্য ছাড়াও মসজিদ মাদ্রাসার ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের সহায়তা করেছেন। সাধারণত ৩ মাস পর পর পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খোলা হয়। এবার পবিত্র রমজানের কারণে একটু বিলম্বিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান বলেন, ‘গণনা শেষে দানসিন্দুক থেকে পাওয়া সব টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হবে।’ জেলা প্রশাসক আরো জানান, পাগলা মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেয়ার পাশাপাশি অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তা করা হয়ে থাকে। জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান আরো বলেন, পাগলা মসজিদের ব্যাংক হিসাবে জমা আছে ৮০ কোটি, ৭৫ লাখ, ৭৩ হাজার ৫৭৬ টাকা।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী জানান, সকাল থেকে টাকার দানবাক্স খোলা, বস্তায় ভরে এনে গণনা শেষে ব্যাংক সমস্ত টাকা নিরাপদে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তার কাজে তিনিসহ পুলিশ সদস্যরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া গণনার দিন ছাড়াও বাকি দিনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন দানবাক্স নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করেন।
কথিত রয়েছে যে, কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে দান করলে মনের বাসনা পূরণ হয়। মুশকিল আসানসহ মিলে রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তি। এই বিশ্বাস থেকে স্থানীয়রা ছাড়াও দূর-দূরান্তের মানুষও কিশোরগঞ্জের এই পাগলা মসজিদে দান করতে ছুটে আসেন। তাদের এই বিপুল দানে মাত্র ৩ মাসেই পূর্ণ হয়ে যায় মসজিদের ৯টি দানসিন্দুকের সবকটি। ফলে কিছু দিন আগে আরেকটি দান সিন্দুক বড়ানো হয়। পাগলা মসজিদে মানুষ টাকা পয়সা, ফল-ফলাদি, কোরআন শরিফ ইত্যাদি নিলামঘরে জমা দিতে হয়।
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দানসিন্দুকে নগদ টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার দান করা ছাড়াও মসজিদের নিলামঘরে নানা ধরনের জিনিসপত্র দান করেন। অনেকের মানত থাকে, তারা সেসব দিয়ে যান। দিন যত যাচ্ছে কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের খ্যাতি ও জৌলুসের পাশাপাশি দানের পরিমাণ ততই যেন বেড়েই চলেছে। দান করতে এসে অনেকেই এখানে নামাজ আদায় করেন। বিশেষ করে জুমার দিনে মসজিদটিতে মুসল্লিদের ঢল নামে। এ সময় মূল মসজিদ ছাড়িয়ে সামনের সড়কেও নামাজের জন্য দাড়িয়ে যান মুসল্লিরা। পাগলা মসজিদকে ঘেরে মানুষের এমন আবেগ-ভালবাসা ছুঁয়ে যায় সকলের হৃদয়।
ঐতিহাসিক এ পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান গনমাধ্যমকে বলেন, পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খুলে পাওয়া টাকাগুলো রুপালী ব্যাংকে জমা করা হয়। এছাড়া স্বর্ণালঙ্কার জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় নিলামে বিক্রি করা হয়। সাধারণত তিন মাস পর পর মসজিদের দান সিন্দুকগুলো খোলা হয়।
জেলা শহরের পশ্চিম হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভ‚মির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্যও। বর্তমানে ৩.৮৮ একর ভ‚মির উপর সম্প্রসারিত পাগলা মসজিদ এলাকায় মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। স্বভাবতই ঐতিহাসিক এই মসজিদকে নিয়ে জেলার ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলেই গর্ববোধ করেন।