Last Updated on 11 months by zajira news
নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশব্যাপী সংঘাত-সংঘর্ষ, কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধের প্রেক্ষাপটে চলতি জুলাই মাসে রেমিট্যান্সে পতনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত ১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ছয় দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে আট কোটি ডলার। কিন্তু গত জুন মাসে প্রতিদিন গড়ে আট কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রবাস আয় সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ইন্টারনেট বন্ধকে কেন্দ্র করে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছে প্রবাসীদের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে রেমিট্যান্সপ্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে জুলাইয়ে আসা রেমিট্যান্স হতে পারে চলতি বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
গত ১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত অবশ্য ব্যাংকিং কার্যক্রম চলেছে মাত্র এক দিন। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই শুক্রবার রাত থেকে কারফিউ জারি করে সরকার। এরপর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। কয়েক দিন লেনদেন বন্ধের পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়।
ওই দিন লেনদেন চলে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা। ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৯ থেকে ২৩ জুলাই বৈধ পথে তথা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে প্রবাস আয় আসাও সম্ভব ছিল না। এ সময়ের মধ্যে যাঁরা বিদেশ থেকে প্রবাস আয় পাঠিয়েছেন, গত বুধবার ব্যাংক খোলার প্রথম দিনেই তা দেশের ব্যাংকে জমা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেটি হয়নি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই মঙ্গলবার দেশব্যাপী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৮ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ছিল। এরপর সীমিত পরিসরে চালু হলেও এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি ইন্টারনেটসেবা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কারফিউ জারির পাশাপাশি দেশব্যাপী সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে সরকার। দেশে সংঘটিত সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও এক ধরনের উত্তেজনা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ, আমেরিকার কয়েকটি দেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রবাসীরা সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেন। এর মধ্যে কোনো কোনো সমাবেশ থেকে রেমিট্যান্স ‘শাটডাউনের’ ঘোষণাও এসেছে।
দীর্ঘদিন ধরে দেশে ডলার সংকট চলছে। এই সংকট কাটাতে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুদ বাড়াতে প্রবাস আয়সহ বিদেশ থেকে অর্থ আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় তদারকি কমিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি যেকোনো ধরনের অর্থ বৈধ পথে দেশে আনার ক্ষেত্রে যে নিয়ম-কানুন রয়েছে, তা শিথিল করেছে। গত কয়েক মাসে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল প্রবাস আয় দেশে আসার ক্ষেত্রে।
সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসা ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর বুধ ও বৃহস্পতিবার সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলেছে। এই দুই দিনে যেসব রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, সেগুলো বন্ধের সময় পাঠানো। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর ক্যাম্পেইনের বিষয়ে আমরাও শুনেছি। এই ক্যাম্পেইনের প্রভাব এখনই বোঝা যাবে না। সময় লাগবে। তা ছাড়া যাঁরা দেশকে ভালোবাসেন, তাঁরা অপপ্রচারে কান দেবেন না বলে আমরা আশাবাদী। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে তাঁরা অংশ নেবেন না। আমরা রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ানোর জন্য বিদেশে ক্যাম্পেইনসহ যা যা করা দরকার সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়বে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে গত সপ্তাহে রেমিট্যান্স কম এসেছে। এটা টেম্পোরারি (স্বল্পমেয়াদি)। এখন কম আসছে বলে ভবিষ্যতেও কমবে, তা বলা যাবে না। রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়তেও পারে আবার কমতেও পারে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে পরিবারের হাতে যথাসময়ে টাকাটা পৌঁছাবে কি না, সে বিষয়ে প্রবাসীদের মনে সংশয় ছিল। তাই তাঁরা রেমিট্যান্স পাঠাননি।
উল্লেখ্য, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের প্রধান উৎস রপ্তানি খাত হলেও সার্বিক অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি কার্যকর। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশের রপ্তানি আয় ছিল তিন হাজার ৭৩৪ কোটি বা ৩৭.৩৪ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে প্রবাসীরা ২১.৩৭ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন।
তবে দেশের ব্যাংক খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাব অব্যাহত থাকলে প্রবাসীদের কাছে ব্যাংক আস্থা হারাবে। তাই হুন্ডি, হুন্ডির প্রচারণা বন্ধ ও ব্যাংকিং চ্যানেল ঠিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংককে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।