Last Updated on 1 week by zajira news
অনলাইন ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: ফর্সা হতে নকল ক্রিম ব্যবহারে আক্রান্ত হচ্ছে মরণব্যাধিতে। ভেজাল ও নকল কসমেটিকস ব্যবহারের কারণে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ ক্যানসার, কিডনির রোগ, ডায়াবেটিসসহ আক্রান্ত হচ্ছে নানারকম জটিল রোগে ।
অতি সম্প্রতি বিএসটিআই কর্তৃক রাজধানীর পুরাতন ঢাকার চকবাজার ও সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নকল কসমেটিকস-সামগ্রী জব্দ করে। সেগুলো বিএসটিআইয়ের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়।
দেখা যায়, এসব নকল কসমেটিকস পণ্যে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে আড়াই হাজার গুণেরও বেশি ক্ষতিকর হাইড্রোকুইনোন নামক জৈব অ্যাসিড রয়েছে। বিএসটিআইয়ের নিয়মানুযায়ী প্রতি কেজি কসমেটিকস পণ্যে পাঁচ মিলিগ্রাম হাইড্রো কুইনোন থাকতে পারে। এর বেশি থাকলে তা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। এসব কসমেটিকস-সামগ্রী ব্যবহারে গায়ের রং অতি দ্রুত ফরসা হবে ঠিকই, তবে লোকজন কিডনির রোগ, স্কিন ক্যানসার, লিভার ক্যানসারের মতো মরণব্যাধিতেও দ্রুত আক্রান্ত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন।
বিশ্বের অনেক দেশে পণ্যে হাইড্রোকুইনোন ব্যবহার নিষিদ্ধ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। এ দেশে এক শ্রেণির অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী বিদেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের কসমেটিকস সামগ্রীর নকল নিজেরা তৈরি করে বাজারজাত করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। অনেকে এসব পণ্য অনলাইনেও বিক্রি করে থাকে। এসব নকল কসমেটিকস সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে নারীদের ফরসা হওয়ার ক্রিম। অতি মাত্রায় হাইড্রোকুইনোন যুক্ত এই নকল ক্রিম ব্যবহারে গায়ের রং দ্রুত ম্যাজিকের মতো ফরসা হয়ে যায়। এ কারণে এ ধরনের ক্রিমের প্রতি নারীদের আকর্ষণ বেশি। তারা জানে না, এই ক্রিম আসল না নকল। দেখতে হুবহু বিদেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের পণ্যের মতো। পণ্যের গায়ে ঐসব বিদেশি কোম্পানির নামসহ সব কিছু উল্লেখ রয়েছে।
বিএসটিআই গত বুধবার রাজধানীর চকবাজারে অভিযান চালিয়ে জব্দ করে নানা ধরনের নকল কসমেটিকস। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—স্কিন ক্রিম, বেবি অয়েল, লিপস্টিক, স্কিন পাউডার, হোয়াইটেনিং ক্রিম ইত্যাদি। বিএসটিআইয়ের পরিচালক সাইফুল ইসলাম (সিএম) বলেন, এগুলো ব্যবহারে কিডনির রোগ, লিভার ক্যানসার, স্কিন ক্যানসারের মতো মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।
নকল কসমেটিকস উৎপাদন ও বাজারজাতে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিএসটিআইয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এসএম ফেরদৌস আলম ভেজাল ও নকল পণ্যসামগ্রীর বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এই অভিযান চলতে থাকবে।
জানা গেছে, এক শ্রেণির চিকিৎসক এসব ক্রিম ব্যবহার করার জন্য নারীদের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। অনেক চিকিৎসক বলেছেন, এগুলো আসল না নকল—বোঝার কোনো উপায় নেই। নামীদামী ব্র্যান্ডের এসব নকল ক্রিম লিপস্টিকসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্য অনেক।
অভিযোগ রয়েছে এসব ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শের জন্য কোনো কোনো অসাধু চিকিৎসক কমিশনও নিয়ে থাকেন। মহাখালী গ্যাসট্রোলিভার ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক ডা. এনামুল করিম বলেন, চেহারা ফরসা করতে গিয়ে এসব নকল পণ্য ব্যবহারে লিভারসহ দেহের যে কোনো স্থানে ক্যানসার হতে পারে। বর্তমানে দেশে লিভারসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।
মহাখালী ক্যানসার ইনস্টিটিউটের একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন সারা দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক ক্যানসার রোগী চিকিৎসার জন্য আসছে। ভেজাল খাদ্য ও কসমেটিকস সামগ্রী ব্যবহারের কারণে ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তির হার বাড়ছে বলে তারা মনে করছেন। ভেজাল ও নকল খাদ্য এবং পণ্যসামগ্রী প্রস্তুতকারী ও বাজারজাতকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মুসাররাত সুলতানা সুমি বলেন, চেহারা ফরসা করার নামে বিষাক্ত ক্রিম ব্যবহারের কারণে নারীদের অসময়ে গর্ভপাত হতে পারে। স্তন ও স্কিন ক্যানসার ছাড়াও লিভারসহ দেহের যে কোনো স্থানে ক্যানসার হতে পারে। এমনকি গর্ভবতী মার পেটের বাচ্চারও ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল হাসনাত বলেন, হাইড্রোকুইনোন সংমিশ্রণে তৈরি ক্রিমসহ নানা পণ্য ব্যবহারে ক্যানসার, কিডনি ও ডায়াবেটিসসহ নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধসহ কোনো পণ্য ব্যবহার করা উচিত নয়।
চর্ম ও যৌন রোগবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এমএন হুদা বলেন, তরুণ-তরুণীরা মুখের রং ফরসা করার জন্য নকল ও ভেজাল ক্রিমসহ নানা পণ্যসামগ্রী ব্যাপকহারে ব্যবহার করছে। এতে কয়েক সপ্তাহ চেহারা ও দেহের রং ফরসা দেখায় ঠিকই। এরপর ধীরে ধীরে স্কিন ক্যানসারসহ নানা ধরনের জটিল রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। এই ধরনের সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন তার কাছে রোগীরা চিকিৎসার জন্য আসছে।