Last Updated on 1 year by BISWAS
মোহাম্মদ এন. হক, জৌষ্ঠ বার্তা সম্পাদক, জাজিরা নিউজ: বাংলাদেশ তার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিক থেকে আজ একটি নতুন মোড়ের সামনে দাঁড়িয়ে। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজিতে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা যেমন আমাদের সামনে অনেক সুযোগ এনে দিচ্ছে, তেমনি চীনের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং ভবিষ্যতের কৌশলগত অবস্থান নিয়েও গভীর প্রশ্ন তুলছে। একদিকে আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু চীন, অন্যদিকে ইন্দো-প্যাসিফিক জোটে ভারতের বর্ধিত প্রভাব; আমরা কোন দিকে যাবো?
বর্তমানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে নানা আলোচনা ও অনুমান চলছে, বিশেষ করে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে থাকা সত্ত্বেও ইন্দো-প্যাসিফিক জোটে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। যদিও ড. ইউনুসের নেতৃত্বে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাওয়া যায়নি, তবে এই ধরনের জোটে বাংলাদেশ যুক্ত হলে এর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব কী হতে পারে তা নিয়ে ভাবনা চলছে। আমাদের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে কৌশলগতভাবে ভারসাম্য বজায় রাখা যায়, বিশেষত চীন ও আমেরিকার মধ্যকার প্রতিযোগিতার মধ্যে।
ইতিহাস থেকে আমরা শিক্ষা পাই যে, শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর সাথে জোট বাঁধা সবসময় সুবিধাজনক নয়। পাকিস্তান তাদের মার্কিন যুদ্ধ সরঞ্জাম ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা ভোগ করে আসছে। এমনকি তারা নিজেদের আঞ্চলিক শক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে মার্কিন চাপে পড়েছিল। এ ধরণের সম্পর্ক একসময় নিজের শক্তির উপর নির্ভরতা হারানোর ঝুঁকি তৈরি করে। বাংলাদেশও যদি ইন্দো-প্যাসিফিক জোটে প্রবেশ করে, তবে সাময়িক কিছু অর্থনৈতিক বা কৌশলগত সুবিধা পেতে পারে, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কি হবে?
আমাদের মনে রাখতে হবে, আমেরিকা এবং তার মিত্ররা বিশেষ করে মুসলিম প্রধান দেশগুলোর প্রতি তাদের অতীত ইতিহাসে যতটা বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দেখিয়েছে তা বিতর্কের বাইরে নয়। তারা নিজেদের স্বার্থের বাইরে গিয়ে আমাদের দেশকে কতটা সাহায্য করবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। অন্যদিকে ভারত দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এ জোটে যুক্ত করতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজির মাধ্যমে তারা তাদের আঞ্চলিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, যা আমাদের স্বাধীনতার মূলনীতি এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি একটি হুমকি হিসেবে দেখা যেতে পারে।
শ্রীলঙ্কার উদাহরণ আমাদের জন্য শিক্ষা হতে পারে। তাদের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের পরও তারা একটি স্বাধীন নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশও একটি স্বাধীন ও সঠিক নীতি গ্রহণ করতে পারে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক জোটবদ্ধতার মাঝে ভারসাম্য রাখতে হবে, যেন আমাদের স্বাধীনতার মূলনীতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
সুতরাং, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজিতে প্রবেশের আগে আমাদের সতর্কভাবে চিন্তা করতে হবে। সাময়িক সুবিধার জন্য আমরা যদি দীর্ঘমেয়াদী শৃঙ্খলে বন্দী হয়ে যাই, তবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ একটি বৃহত্তর শক্তির ছায়ায় নিঃশ্বাস নিতে বাধ্য হবে। এ বিষয়ে জাতীয়ভাবে আলোচনা এবং জনমত গ্রহণ করা প্রয়োজন।
একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে, আমরা কি আরও একবার আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক শক্তির দাসত্বে বাঁধা পড়বো, নাকি নিজেদের ভবিষ্যৎ গঠনে সত্যিকারের স্বাধীনতা অর্জন করবো?

