সময়ের জনমাধ্যম

বাশার আল-আসাদের পতনের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়া কে এই জোলানি

Who is this Jolani who led the fight to overthrow Bashar al-Assad?

বিদ্রোহী নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি

Last Updated on 9 months by zajira news

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন হয়েছে ।

বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে রবিবার ভোরে (০৮ ডিসেম্বর) রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে পালিয়ে যান তিনি। এরপর দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালিও বিদ্রোহীদের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের দীর্ঘ ৫৪ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান হয়। পতন হয় বাশার আল-আসাদের ২৪ বছরের শাসনামলের।

মাত্র ১২ দিনেই অভূতপূর্ব বিজয় অর্জন করেন বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)।

গত ২৭ নভেম্বর থেকে হঠাৎ করেই বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে দেশটির বিদ্রোহীরা। সেদিন থেকেই শুরু হয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) দ্বিতীয় বড় শহর আলেপ্পো দখল অভিযান।

এরপর অপ্রতিরোধ্য গতিতে হামা, দারা, হোমস ও রাজধানী দামেস্ক দখল করে নেন তারা। তাদের দ্রুত গতির অভিযান আসাদ, তার মিত্র এবং বাকি বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে।

সিরিয়ায় এই বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। ছোট ছোট আরও কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ে তিনি জোট করেছেন। তবে এইচটিএস-ই সবচেয়ে দুর্ধর্ষ বিদ্রোহী গোষ্ঠী।

ইসলামপন্থী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছে

আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির আসল নাম আহমেদ হুসাইন আল-শারা। ১৯৮২ সালে তিনি সৌদি আরবের রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। তখন তার বাবা সেখানে পেট্রোলিয়াম প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতেন। ১৯৮৯ সালে তার পরিবার সিরিয়ায় ফিরে আসে। দামেস্কের অদূরে বসতি স্থাপন করে।

২০০৩ সালে সিরিয়া থেকে ইরাকে এসে তিনি আল-কায়েদায় যোগ দেন। এই বছরই যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালায়। তিনি সেখানে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দেন। তখন থেকে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের হাতে গ্রেফতার হন জোলানি, পাঁচ বছর পর ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় মুক্ত হন তিনি। কারামুক্ত হয়ে সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা প্রতিষ্ঠা করেন জোলানি, যা আল-নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত।

কারামুক্ত হয়ে ২০১১ সালে আল-কায়দার সরাসরি সহযোগী হিসেবে জাবহাত আল-নুসরা নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এইচটিএস গোষ্ঠী। সশস্ত্র গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি। প্রথম দিকের কয়েক বছর জোলানি বাগদাদির সঙ্গে কাজ করলেও ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে বাগদাদি আকস্মিকভাবে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেন। এরপর জোলানি সিরিয়ায় নিজেদের তৎপরতা বৃদ্ধিতে কাজ শুরু করেন।

২০১৬ সালের জুলাইয়ে বাশার সরকার আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ইদলিবের দিকে চলে যায়। ওই সময়টাতে জোলানি আল-নুসরা ফ্রন্টের নাম পরিবর্তন করে জাভাত ফাতেহ আল-শাম রাখেন। পরে বিদ্রোহীদের ছোট ছোট অনেক গোষ্ঠী ও নিজের জাভাত ফাতেহ আল-শাম নিয়ে এইচটিএস গঠন করেন জোলানি। গোষ্ঠীটিকে প্রেসিডেন্ট আসাদ-বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর এবং প্রাণঘাতী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ২০১৭ সালে সিরিয়ান স্যালভেশন গভর্নমেন্ট প্রতিষ্ঠা করে। এর মাধ্যমে তারা দেশটির ইদলিবে প্রশাসন পরিচালনা শুরু করে। তবে অধিকারকর্মী, সংবাদ প্রতিবেদন ও স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, সিরিয়ান স্যালভেশন গভর্নমেন্ট কঠোর হাতে শাসন করে, বিরোধীদের সহ্য করে না। এইচটিএস মূলত ইদলিব কেন্দ্রিক ছিল এবং অনুমান করা হয় গোষ্ঠীটির প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা রয়েছে। এই গোষ্ঠী মূলত স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত হয়ে থাকে।

সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের সূচনা ২০১১ সাল থেকে। সে সময় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সিরিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিল। প্রাথমিকভাবে তারা খানিকটা অগ্রসরও হতে পেরেছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে হামায় আসাদ সরকার বিপুল পরিমাণ সেনা মোতায়েন করে। শুরু হয় প্রবল গৃহযুদ্ধ। আসাদ সরকার বিদ্রোহীদের দমন করতে সমর্থ হয়। সে সময় আসাদ সরকারকে সবরকমভাবে সাহায্য করেছিল ইরান এবং রাশিয়া।

বাশার আল-আসাদের ভাঙা ছবির ফ্রেম

সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চল বিশেষ করে ইদলিব এলাকা এখন এইচটিএস-এর দখলে। অন্তত ৪০ লাখ উদ্বাস্তু সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইদলিবে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে নতুন করে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় সিরিয়াতে। গত ২৭ নভেম্বর থেকেই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো দখলের পর আরও অগ্রসর হতে থাকে। একে একে শহর ও অঞ্চল দখল করতে থাকেন তারা।

বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে কেবল বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস লড়েনি, তুরস্কের ছত্রছায়ায় থাকা সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি বা এসএনএ-এর একটি অংশও লড়াইয়ে জড়িত রয়েছে। এছাড়া বিদ্রোহী গোষ্ঠীদেরও সমর্থন দিয়েছে তুরস্ক। সূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স, খালিজ টাইমস, দ্য গার্ডিয়ান