সময়ের জনমাধ্যম

ভরা মৌসুমেও ইলিশের দেখা নেই শরীয়তপুরে

Last Updated on 2 weeks by zajira news

শরীয়তপুর প্রতিনিধি, জাজিরা নিউজ: শরীয়তপুরের বাজারে ভরা মৌসুমেও ইলিশের তেমন আমদানি নেই। চাহিদার তুলনায় মাছ কম আসায়, বাজারে দাম চড়া। এতে নিম্ন আয়ের ক্রেতা ও মধ্যবিত্তের পাতে জুটছে না জাতীয় মাছ ইলিশ।

দাম চড়া হওয়ায় বেচাকেনাও কম। পাশাপাশি ভরা মৌসুমেও ইলিশের দেখা না পেয়ে চরম হতাশার মধ্যে রয়েছেন জেলেরা। এ পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক মাছের আড়ত। সেখানে আগের মত হাঁকডাকও নেই। অনেক আড়তদার জেলেদের কাছ থেকে অগ্রিম দাদনের টাকা ফেরত নেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

জেলেরা বলছেন, দিন-রাত নদীতে চষে বেড়ালেও জ্বালানি খরচ উঠছে না। পদ্মা ও মেঘনা নদীতে প্রত্যাশিত পরিমাণে ইলিশ ধরা না পড়ায় বাজারে ইলিশ কম আসছে।

শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম বলেন, “কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য মিশে অধিক মাত্রায় দূষিত হচ্ছে মেঘনা ও পদ্মার পানি।

বর্জ্যের দূষণে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায়, খাদ্যশৃঙ্খল (ফুডচেইন) ভেঙে যাওয়ায় ইলিশের গতিমুখ বদলে যাচ্ছে। “এসব কারণে ভরা মৌসুমেও ইলিশের তেমন দেখা মিলছে না। চাহিদার তুলনায় আমদানি কম থাকায় দাম বেশি।”

সোমবার ও মঙ্গলবার সকালে শরীয়তপুরের সদর, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ উপজেলা সদর, সখিপুর বাজার, ডামুড্যা উপজেলা ও গোসাইরহাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, সেখানে তেমন ইলিশ নেই। অল্প কিছু ইলিশ নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা; তাও আকারে খুবই ছোট। দাম বেশি শুনে অধিকাংশ ক্রেতাই চলে যাচ্ছেন।

তবে যেসব ক্রেতাদের আর্থিক অবস্থা তুলনামূলক ভালো তাদের কারো কারো বাজারের থলেতে ইলিশের জায়গা হয়েছে। বেচাকেনায় মন্দাভাব থাকায় ইলিশের বাজারেও হাঁকডাক কিংবা হইচই নেই। এ চিত্র অন্যান্য বছরের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন।

নড়িয়া উপজেলার শুরেশ্বর এলাকার ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, “ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীর বায়না মিটাইতে ইলিশ কিনতে বাজারে আসছিলাম। কিন্তু কিনতে পারতেছি না। ইলিশ মাছ আকারে ছোট, সংখ্যায় কম। দাম খুব বেশি।

“ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম এত চড়া, দাম কমবে কবে? আমাগো পাতে আর ইলিশ জুটব না। ইলিশ এহন বড় লোকগো মাছ।” শরীয়তপুর সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, ইলিশের ভরা মৌসুম ১৫ অগাস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

“জেলায় গত বছর এ সময় প্রতি দেড় কেজি ইলিশ ১৯’শ থেকে ২২’শ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ১৫’শ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ছিল ১২’শ থেকে ১৫’শ টাকা। ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৮’শ থেকে ১২’শ টাকায়।”

ডামুড্যা উপজেলা সদরের মাছ বিক্রেতা হারুন শেখ বলেন, এ উপজেলার বাজারে দেড় কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়, এক কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায় ও ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেড়শ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রাম ইলিশ মাছ মিলছে সাড়ে ৭০০ থেকে সাড়ে ৮০০ টাকায়। জেলার অন্য উপজেলাগুলোতে প্রায় কাছাকাছি দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে বলে জানান সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা।

গোসাইরহাট উপজেলার ইলিশ বিক্রেতা আবদুল রাজ্জাক বলেন, “ইলিশের এত দাম! গত দুই বছরের এ সময়ের দেড় থেকে প্রায় দ্বিগুণ। বাজারে ইলিশ আসছে কম, সাইজে ও ছোট। প্রতিদিন ইলিশ আসে দেড় থেকে দুই মণ। এর অর্ধেকই অবিক্রীত থেকে যায়। বেচাকেনা কম হওয়ায় খুব হতাশ লাগছে।”

নড়িয়া উপজেলার ঘড়িসার এলাকার জেলে রিপন শেখ, বিটুল দেওয়ান ও একই উপজেলা কার্তিকপুর এলাকার জেলে মিজানুর রহমান বলেন, “প্রতি রাতে পদ্মা, মেঘনায় ট্রলারে ডিজেল পোড়াইয়া ও অন্যান্য খাতে খরচ পড়ে দুই হাজার টাকা। জালে ইলিশ উঠে ২০ থেকে ২৫টা।

“ধরা কম পড়নে বাজারেও ইলিশ আসতেছে কম। ইলিশের মৌসুমেও ইলিশ পাইতাছি না। আয় রুজি কম। পরিবার নিয়া বিপদে আছি।” পালেরচর ও আলু বাজার ফেরিঘাটের আড়তদার বাবুল মাঝি ও সলিম মিয়া বলেন, দিন দিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক আড়ত। জেলেদের দেওয়া অগ্রিম দাদনের টাকা উত্তোলনের বিষয়েও রয়েছে চরম শঙ্কা।

শুরেশ্বর ফেরিঘাটের আড়তদার জসিম দেওয়ান বলেন, “ভরা মৌসুমেও দেখা মিলছে না বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী স্বাদের মাছ ইলিশের। আমাদেরও এখানে আগের মত হাঁকডাক পড়ছে না।”