সময়ের জনমাধ্যম

ভারতের কূটনৈতিক মাথাব্যথার কারণ এখন শেখ হাসিনা

ফাইল ছবি

Last Updated on 4 months by zajira news

নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: শেখ হাসিনার লাল পাসপোর্ট বাতিল হয়েছে। ৪৫ দিন পর্যন্ত তিনি ভারতে থাকতে পারবেন। এরপর কী হবে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের জন্য কূটনৈতিক মাথাব্যথা হয়ে উঠেছেন হাসিনা। কিন্তু ভারত তাদের মিত্রকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চাইছে না।

১৫ বছরের শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিরোধীদের দমন-পীড়নের প্রতিবাদে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের দাবি, শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। কিন্তু ৭৬ বছর বয়সী হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে হলে দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যান্য প্রতিবেশীদের কাছে ভারতের অবস্থান ক্ষুণ্ন হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনে উৎখাত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে নিজ দেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যান। সঙ্গে নিয়ে যান ছোট বোনকে। পেছনে ফেলে গেছেন দলের হেভিওয়েটসহ অসংখ্য নেতাকর্মী, অনুসারীদের।

এই অবস্থায় বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের অবসানের চিন্তাও করছেন অনেকে। বিশেষ করে, দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারে যখন চীনের সঙ্গে দ্বৈরথ চলছে।

এদিকে গত বছর মালদ্বীপে এমন এক প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, যিনি জেতার পরপরই নয়দিল্লির বদলে কৌশলগতভাবে বেইজিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। আবার হাসিনার পতনের ফলে ভারত এই অঞ্চলে তার ঘনিষ্ঠতম মিত্রকে হারিয়েছে। অন্যদিকে শেখ হাসিনার অধীনে যারা নির্যাতিত হয়েছেন, তারা তার সরকারের সংঘটিত নির্যাতনের জন্য ভারতকেই অনেকাংশে দায়ী করেন। ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কূটনীতিও সেই বৈরিতা ছড়াতে ভূমিকা রেখেছে।

বিরোধ সমাধান বিষয়ক থিংকট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের টমাস কিন বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারত স্পষ্টতই শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায় না। এর ফলে নয়াদিল্লির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকা এই অঞ্চলের অন্যান্য নেতাদের কাছে একটা বার্তা পাঠানো হবে, যে শেষ পর্যন্ত, ভারত আপনাকে রক্ষা করবে না। বিষয়টা ভারতের জন্য খুব ইতিবাচক হবে না।

৮৪ বছর বয়সী নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদী। বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রক্ষা করার জন্য ইউনূসের প্রশাসনকে বারবার অনুরোধ করেছেন তিনি। ভারতের স্বাধীনতা দিবসে সপ্তদশ শতকের লাল কেল্লা থেকে দেওয়া ভাষণে মোদী বাংলাদেশি হিন্দুদের বিপদে পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন এবং পরবর্তীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপেও বিষয়টি উপস্থাপন করেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভারত হাসিনাকে সমর্থন করে ‘তার সব ফল এক ঝুড়িতে রেখে দিয়েছে’ এবং পরিস্থিতি কীভাবে বদলাতে হবে সেটা বুঝতে পারেনি। হাসিনার আমলে গ্রেপ্তার হওয়া হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মীদের একজন মির্জা ফখরুল। তিনি আন্তর্জাতিক একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়, কিন্তু সেটা নিজেদের স্বার্থের বিনিময়ে নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতের মনোভাব এই আত্মবিশ্বাস তৈরির জন্য অনুকূল নয়।

শেখ হাসিনার পতনের পর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও মন্দিরের ওপর কিছু হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার নিন্দাও জানানো হয়েছে বাংলাদেশের আন্দোলনকারী ও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু ভারতের সরকারের সমর্থক বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে এসব ঘটনার অতিরঞ্জিত বিবরণ দেশটিতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা ছড়িয়েছে।

জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে বলছে, এমন অনাস্থা ও অবিশ্বাসের পরিস্থিতিতেই আগস্ট মাসে ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয় দুই দেশই। অনেক বাংলাদেশির পক্ষ থেকে ভারতকে এই বন্যার জন্য দায়ী করা হয়।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী এএফপিকে বলেন, শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চাপ দেওয়ার চেয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রক্ষা বাংলাদেশের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো বুদ্ধিমান সরকার বুঝতে পারবে, হাসিনার ভারতে থাকার বিষয়টিকে ইস্যুতে পরিণত করা তাদের জন্য কোনো সুবিধা তৈরি করবে না।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এখনো প্রকাশ্যে নয়াদিল্লির কাছে শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেনি। কিন্তু কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করার কারণে নয়াদিল্লির কাছে একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে অবস্থান করা হাসিনার অন্য কোনো দেশে যাওয়াটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৩ সালে একটি দ্বিপক্ষীয় প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়েছিল।

এর অধীনে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার সুযোগ রয়েছে। তবে চুক্তির একটি ধারায় অপরাধ ‘রাজনৈতিক চরিত্রের’ হলে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের সুযোগও দেওয়া হয়েছে দুই দেশকে।