সময়ের জনমাধ্যম

মালয়েশিয়ার (এ আই ইউ)-তে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা

Last Updated on 3 weeks by zajira news

মুহা: মুবাশ্বির বিল্লাহ, জাজিরা নিউজ: মালয়েশিয়ার আলবুখারী ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এ আই ইউ)-তে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংগঠন বাংলাদেশি স্টুডেন্টস’ কমিউনিটি অব এআইইউ (বাসকা)’র বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে স্মরণ করল বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লব।

শুক্রবার (১৫ অগাষ্ট) দিনব্যাপী এ কর্মসূচিতে প্রাণবন্ত বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা প্রদর্শন করে দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মোঃ শামীম আহসান।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি হাইকমিশনার মোছাঃ শাহানারা মনিকা, কাউন্সেলর (পলিটিক্যাল) ও হেড অব চ্যান্সারি জনাব প্রণব কুমার ভট্টাচার্য, এবং কাউন্সেলর (কনসুলার) মোঃ মুর্শেদ আলম।

প্রাণ কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা ও সম্মানিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

হাইকমিশনার মোঃ শামীম আহসান বলেন, “এই আয়োজন আমাদের ইতিহাসের চেতনার সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের উদ্যমকে একত্রিত করেছে। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক, একাডেমিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশ নিচ্ছে এটি সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।”

লোকসংগীত শিল্পী উমায়ের ইবনে জাহির বাসকা সভাপতি শেখ মুজ্জাম্মিল হোসাইন বলেন, “আমরা হাইকমিশনের উপস্থিতি ও সহায়তায় অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। এ ধরনের সরাসরি যোগাযোগ আমাদের কমিউনিটিকে শক্তিশালী করে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য অমূল্য সুযোগ সৃষ্টি করে, যা আমাদের মাতৃভূমির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংযুক্ত করে।”

সম্প্রতি স্নাতক সম্পন্ন করা বাংলাদেশি সিনিয়র শিক্ষার্থী মোঃ মাসুদুর রহমানকে অভিনন্দন জানান তিনি।

মাসুদুর রহমানের অসাধারণ সাফল্য ও কমিউনিটিতে অর্থবহ অবদানের কথা উল্লেখ করে শেখ মুজ্জাম্মিল হোসাইন বলেন, তাঁর একনিষ্ঠতা ও অধ্যবসায় অন্যান্য শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। এছাড়া তিনি তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে দোয়া ও আন্তরিক শুভকামনা জানান এবং ভবিষ্যতেও তাঁর অব্যাহত সাফল্য ও ইতিবাচক অবদান রাখবেন বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

দিনের শুরুতে হাইকমিশনারের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল এআইইউ’র ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর দাতো’ ইর. ড. মোহদ সলেহ বিন জাফর এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে সম্ভাব্য একাডেমিক পার্টনারশিপ, সাংস্কৃতিক বিনিময়, এবং যৌথ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। এতে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

বিকেলে হাইকমিশনের দল এআইইউতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক্সক্লুসিভ ইন্টার্যাকশন সেশন-এ অংশ নেয়।

শিক্ষার্থীরা এ সময় পাসপোর্ট নবায়ন, ভিসা প্রসেসিংসহ কনস্যুলার সেবার বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশ্ন করেন। পাশাপাশি বৃত্তি, ইন্টার্নশিপ সুযোগ এবং বাংলাদেশ ও এআইইউ’র মধ্যে একাডেমিক সহযোগিতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয়ও আলোচনায় তুলে ধরা হয়।

হাইকমিশনের প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের গঠনমূলক পরামর্শ দেন এবং সম্ভাব্য সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন।

সন্ধ্যায় শুরু হয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা, যার বিষয় ছিল-“এই সংসদ বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লব ২০২৪-এর যুব নেতৃত্ব জাতীয় রাজনীতিতে তরুণ প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তাকে প্রমাণ করে।”

উত্তেজনাপূর্ণ বিতর্ক শেষে সরকার দলীয় “ফর দা সেক অফ আর্গুমেন্ট” চ্যাম্পিয়ন হয় এবং বিরোধী দলীয় “টাং এন্ড ডেগার” রানার-আপ হয়।

বিতর্ক প্রতিযোগিতা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় উমায়ের ইবনে জাহির ও তাঁর দল লোকসঙ্গীত পরিবেশন করেন।

প্রদর্শিত হয় একটি তথ্যবহুল প্রামাণ্যচিত্র, এবং নাট্য মঞ্চায়নে জীবন্ত হয়ে ওঠে জুলাই বিপ্লবের ঐতিহাসিক কাহিনী। এসব পরিবেশনা দর্শকদের বিনোদিত করার পাশাপাশি শিক্ষামূলক ভূমিকা রাখে, যা বাংলাদেশি ইতিহাসের সংগ্রাম ও ত্যাগের চিত্র ফুটিয়ে তোলে।

অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে বিতর্ক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। বিজয়ীদের পাশাপাশি হাইকমিশনের প্রতিনিধিদল ও বিচারকদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। বিচারকদের অনুপ্রেরণামূলক পরামর্শ, বিতর্ক কৌশল ও দিকনির্দেশনা শিক্ষার্থীদের মনোবল বাড়িয়ে দেয়।

অনুষ্ঠানের শেষের দিকে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশিত হলে মিলনায়তন মুখরিত হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা নতুন উদ্দীপনা, ঐক্যের চেতনা এবং বাংলাদেশ ও এআইইউতে ইতিবাচক অবদান রাখার অঙ্গীকার নিয়ে অনুষ্ঠান ত্যাগ করেন।