Last Updated on 1 week by zajira news
স্পোর্টস ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) উদ্বোধনী ম্যাচে দুর্বার রাজশাহীকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বিপিএলের এবারের আসর শুরু হয়।
বিপিএলে মিরপুরের পিচে সচরাচর বড় রানের দেখা মিলে না। এবার ‘পরিবর্তনের’ কথা বলে পিচেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। ব্যাটিং সহায়ক পিচ বানানোর চেষ্টা করেছে বিসিবি। তার সুফল মিলল উদ্বোধনী ম্যাচে। প্রথমে ব্যাটিং করে ইয়াছির আলি রাব্বির ৯৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ভর করে ১৯৭ রানের বিশাল স্কোর গড়েছিল দুর্বার রাজশাহী। পরে ফাহিম আশরাফ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে সেই রান পেরিয়ে জিতেছে ফরচুন বরিশাল।
সপ্তম উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ফাহিম আশরাফের ৮৮ রানের জুটি বরিশালের জয় নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখে।
শেষ ১২ বলে জয়ের জন্য ফরচুন বরিশালের দরকার ছিল ৪ রান। ১৯তম ওভারের প্রথম ডেলিভারিটি করলেন দুর্বার রাজশাহীর পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। পায়ে পাওয়া ফুলটস ডেলিভারিটি তুলে মারলেন ফাহিম আশরাফ। গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের ছাদে পড়ে বল চলে যায় মাঠের বাইরে। এটা কেবলই একটি বলের বর্ণনা, এর আগে রাজশাহীর বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন ফাহিম। তাণ্ডব চালান ম্যাচসেরা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। এই দুজনের রেকর্ড জুটিতে দাপুটে জয়ে শুরু হলো চ্যাম্পিয়ন বরিশালের।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে দুর্বার রাজশাহী। শুরুটা ভালো না হলেও দলকে ঠিক পথে ফেরান হাফ সেঞ্চুরি করা এনামুল হক বিজয় ও ব্যাট হাতে সাইক্লোন বইয়ে দেওয়া ইয়াসির আলী রাব্বি। এ দুজনের বড় জুটিতে ৩ উইকেটে ১৯৭ রান তোলে রাজশাহী। জবাবে অগোছালো শুরুর পর দলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়া মাহমুদউল্লাহ ও ফাহিমের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ১৮.১ ওভারে জয় নিশ্চিত হয় ফরচুন বরিশালের। বিপিএলে এটাই তাদের সফলতম রান তাড়া, আসরের ইতিহাসে এটা যৌথভাবে তৃতীয় সেরা রান তাড়া।
লক্ষ্য তাড়ায় ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই নাজমুল হোসেন শান্তকে হারায় ফরচুন বরিশাল। ৩০ রানের মধ্যে ফিরে যান অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও কাইল মেয়ার্সও। ৫০ পেরিয়ে থামেন মুশফিকুর রহিম। দারুণ শুরু করা তাওহিদ হৃদয় দলীয় ৬১ রানে থামেন। এ কজনের মধ্যে বলার মতো রান করেন কেবল হৃদয়। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ২৩ বলে ৫টি চারে ৩২ রান করেন। তামিম ৭ ও মেয়ার্স ৬ রান করেন। রানের খাতা খুলতে পারেননি শান্ত।
৬১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে বরিশালে গতি পায় মাহমুদউল্লাহ ও শাহিন শাহ আফ্রিদির ব্যাটে। দারুণ ব্যাটিংয়ে ষষ্ঠ উইকেটে তারা ২৫ বলে ৫১ রান যোগ করেন। ১৭ বলে একটি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৭ রান করে আউট হন শাহিন আফ্রিদি। বাকি সময়ে চলে মাহমুদউল্লাহ ও ফাহিমের রাজত্ব। অষ্টম উইকেটে মাত্র ৩৫ বলে ৮৮ রান যোগ করেন বরিশালের জয়ের এই দুই নায়ক।
রান তাড়ায় পঞ্চাশের বেশি রানের জুটিতে রেকর্ড গড়েছেন মাহমুদউল্লাহ ও ফাহিম। ওভার প্রতি ১৫.০৮ গড়ে রান তুলেছেন তারা, যা বিপিএলের ইতিহাসের সেরা। ম্যাচসেরা মাহমুদউল্লাহ ২৬ বলে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় অপরাজিত ৫৬ রান করেন। আরও বেশি দাপট দেখানো ফাহিম ২১ বলে একটি চার ও ৭টি ছক্কায় হার না মানা ৫৪ রান করেন। রাজশাহীর পেসার তাসকিন আহমেদ ৪ ওভারে ৩১ রানে ৩টি উইকেট নেন। হাসান মাহমুদ ২টি ও জিশান আলম একটি উইকেট পান।
এর আগে ব্যাটিং করা দুর্বার রাজশাহীর শুরুটা ভালো ছিল না। দলীয় ৫ রানেই ফিরে যান ওপেনার জিসান আলম। বেশি সময় টিকতে পারেননি মোহাম্মদ হারিসও। পাকিস্তানি এই ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরেন দলীয় ২৫ রানে। এমন শুরুর পরও অবশ্য চাপ বুঝতে হয়নি রাজশাহী। বিপর্যয় সামলে জুটি গড়ে তোলেন অধিনায়ক বিজয় ও ইয়াসির।
উইকেটে থিতু হতে বেশি সময় নেননি এ দুজন। শুরুতে একটু দেখেশুনে খেললেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে তাদের রান তোলার গতি। বিশেষ করে ইয়াসির ছিলেন খুনে মেজাজে। বিজয়কে এক পাশে রেখে তাণ্ডব শুরু করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ইয়াসির যেভাবে ব্যাট চালিয়েছেন, রান তোলা নিয়ে বিজয়কে খুব একটা মাথা ঘামাতে হয়নি।
৮৭ বলে বলে ১৪০ রানের জুটি গড়েন বিজয়-ইয়াসির। তৃতীয় উইকেটে বিপিএলের ইতিহাসে এটা চতুর্থ সেরা জুটি। ৫১ বলে ৪টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৬৫ রান করেন বিজয়। বরিশালের বোলারদের কোণঠাসা করে ফেলা ইয়াসির শেষ পর্যন্ত দাপট জারি রাখেন। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৪৭ বলে ৭টি চার ও ৮টি ছক্কায় ৯৪ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন। বরিশালের মেয়ার্স ২টি ও ফাহিম আশরাফ একটি উইকেট নেন।