Last Updated on 3 weeks by zajira news
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: ভারতের তামিলনাড়ুর কারুর জেলায় নিজের সমাবেশে পদদলিত হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন তামিলাগা ভেত্রি কাজাগাম (টিভিকে) দলের প্রধান থালাপতি বিজয়।
এদিকে পদদলনে মৃত্যু বেড়ে ৩৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৪০ জন। মৃত ৩৯ জনের মধ্যে নারী ১৮, পুরুষ নয়জন এবং ১০ শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মা সুব্রমানিয়ান।
অভিনেতা থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া বিজয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘আমার হৃদয় ভেঙে গেছে; আমি অসহনীয়, ভাষায় বর্ণনা করা যায় না এমন যন্ত্রণা ও শোকে কাতর। কারুরে প্রাণ হারানো আমার প্রিয় ভাই-বোনদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তামিলনাড়ুর কারুর জেলায় পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। কারুর-ইরোড মহাসড়কের ভেলুসামাইপুরামে থালাপতি বিজয়ের ‘ভেলিচাম ভেলিয়েরু’ নামের এক জনসভায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। তিনি বক্তব্য দেওয়ার সময় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। একপর্যায়ে তিনি বক্তৃতা বন্ধ করতে বাধ্য হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত পৌনে আটটার দিকে বিপুলসংখ্যক লোক থালাপতি বিজয়কে একনজর দেখার জন্য মঞ্চের ব্যারিকেডের দিকে এগিয়ে যান। ওই সময় ঘটনার সূত্রপাত হয়। লোকজন হুড়োহুড়ি করে সামনে যাওয়ার সময় অনেকেই অচেতন হয়ে পড়েন।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সমাবেশে ধারণার চেয়ে অনেক বেশি লোকের সমাগম হয়। এতে ৩০ হাজারের মতো মানুষকে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৬০ হাজার মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছিলেন।
তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী এম. কে. স্টালিন শনিবার রাতে কারুরে পৌঁছে পদদলিত হয়ে নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি এবং আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের প্রত্যেককে এক লাখ রুপি আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, পদদলনের ঘটনায় কীভাবে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো তা তদন্তে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অরুণা জগদেশনের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করেছে তামিলনাডু সরকার। তিরুচিরাপল্লি ও সেলেম জেলা থেকে অন্তত ৪৪ জন চিকিৎসককে কারুরে পাঠানো হয়েছে বলে গণমাধ্যম জানিয়েছে।
গত তিন দশকে তামিল সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা বিজয় ২০২৪ সালে দল গঠনের পর থেকে বিপুল জনসমাগম ঘটিয়ে আসছেন। তার দল টিভিকে রাজ্যের ক্ষমতাসীন ডিএমকে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টিকে লক্ষ্য করে রাজনৈতিক প্রচারণা চালাচ্ছে। তিনি ২০২৬ সালের শুরুর দিকে অনুষ্ঠেয় রাজ্য নির্বাচনের আগে প্রচারে নেমেছেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমের ভিডিওতে দেখা গেছে, হাজারো মানুষ একটি বড় গাড়ির চারপাশে জড়ো হয়েছেন। সেই গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন বিজয়। ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তাকে পুলিশের সহায়তা চাইতে দেখা যায়। এটি প্রথমবার নয় যে বিজয়ের সমাবেশে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে। গত বছর অক্টোবর মাসে দলের প্রথম সমাবেশে অন্তত ছয় জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
পুলিশের আরোপিত বিধিনিষেধ— যেমন মিছিলের আকার সীমিত রাখা ও ভেন্যু পরিবর্তনের মতো পদক্ষেপ— সত্ত্বেও বিপুল জনসমাগম স্থানীয় অবকাঠামোকে বারবার বিপর্যস্ত করছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্সে লিখেছেন, কারুরে রাজনৈতিক সমাবেশে ঘটে যাওয়া এই দুঃখজনক ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক।