Last Updated on 11 months by zajira news
রংপুর প্রতিনিধি,জাজিরা নিউজ: কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হয়েছেন। ২২ বছরের আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
আবু সাঈদ মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে আহত হন। পরে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আবু সাঈদের আহত হওয়ার পুরো দৃশ্য ধারণ করেছে একাধিক গণমাধ্যম। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবেও কেউ কেউ ভিডিও করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। এসব ভিডিও থেকে তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময়ের পরিষ্কার একটি চিত্র পাওয়া যায়।

সংঘর্ষ শুরু হলে আন্দোলনকারীদের মধ্যে সবার আগে ছিলেন আবু সাঈদ। অন্যরা একটু পেছনে ছিলেন। আবু সাঈদের ঠিক সামনে অবস্থান ছিল পুলিশের। পুলিশের অবস্থানের জায়গাটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে। গুলি করেছেন এই পুলিশের সদস্যরাই। সেই গুলিতেই আহত হন তিনি।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ২ নম্বর ফটক। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এই ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে সেখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বেলা ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। তখনো পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আবু সাঈদ।
পুলিশকে লক্ষ্য করে তিনি কিছুই ছোড়েননি। তবে পুলিশ তাঁকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল যেমন ছুড়ছিল, তেমনি রাবার বুলেটও ছুড়ছিল। দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়ান তিনি। একটু পরে দেখা যায়, বসে পড়েন তিনি। আরেকটু পরে সড়কে ঢলে পড়েন। মারা যান সাঈদ।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেরোবির শিক্ষার্থী সাঈদের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হৃদয় রঞ্জন রায় বলেন, হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তির আগেই আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর শরীরের একাধিক স্থানে রাবার বুলেটের ক্ষত রয়েছে।
এদিকে সাঈদের মৃত্যুর পর গতকাল রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর বাড়িতে বিলাপ চলছে। সাঈদের মা ফ্যালফ্যাল করে সবার দিকে চেয়ে আছেন। মাঝে মাঝে বাবা বাবা বলে চিৎকার দিয়ে উঠছেন।

নিহত সাঈদের ছোট বোন সুমি আর্তনাদ করে বলেন, ‘হামার ভাইকে ওরা মেরে ফেলল ক্যান? হামার ভাই বেঁচে থাকলে হামার হেরে স্বপ্ন পূরণ হলো হয়। কেটা হামাক এনা বোন কয়া ডাকপি রে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন দিনমজুর। ছয় ভাই, তিন বোনের মধ্যে আবু সাঈদ ছিলেন সবার ছোট। অর্থাভাবে কোনো ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারেননি মকবুল হোসেন। বলেন, ‘সে নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া করে এত দূর পর্যন্ত গিয়েছিল। অনেক স্বপ্ন ছিল সাঈদকে নিয়ে।’
রংপুর জেলা গাইবান্ধা পুলিশ রংপুর বিভাগ শিক্ষার্থী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বেরোবি পলাশ বাড়ী রংপুর কোটা সংস্কার আন্দোলন