Last Updated on 17 hours by zajira news
জাজিরা নিউজ ডেস্ক: সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ‘ডু ইউ মিস মি?’ শিরোনামে এই প্রদর্শনী হওয়ার কথা থাকলেও রাত ৮টা যখন পেরিয়ে যায়।
কনসার্টের শেষ আকর্ষণ ব্যান্ড ‘আর্টসেল’ রাত পৌনে ৯টায় গান শুরু করলেও আয়োজকেরা তখনো নিশ্চিত করতে পারছিলেন না ড্রোন শো হবে কিনা।
রাত সাড়ে ৯টায় শিল্পকলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে নির্ধারিত সময়ে ড্রোন শো করা সম্ভব হয়নি। তবে বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় রাত ১০টায় শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে স্পেশাল ড্রোন ড্রামা শো ‘ডু ইউ মিস মি?’।
এরপর সাড়ে ১০টায় প্রদর্শনীটি করার ঘোষণা দেওয়া হয়, সে সময়ও আকাশ মেঘলা থাকায় প্রদর্শনী শুরু করা যায়নি। পরে রাত ১১টায় মেঘলা আকাশেই ভেসে ওঠে লেখা ‘ডু ইউ মিস মি?’, শোনা যায় সেই কণ্ঠ ‘শেখ হাসিনা পালায় না’।
এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় ড্রোন প্রদর্শনী। একে একে তুলে ধরা হল জুলাইয়ের গল্প। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের কিছু গুম-খুনের চিত্রও তুলে ধরা হয়। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয়ের কথাও তুলে বলা হয়।
বাংলাদেশ ও চীন সরকার যৌথভাবে এই ‘ড্রোন শো’-তে প্রায় দুই হাজার ড্রোন ওড়ানোর মাধ্যমে জুলাইয়ের গল্প তুলে ধরেছে। এর আগে রাত পৌনে ৯টায় মঞ্চে গান শুরু করেন ব্যান্ড আর্টসেলের শিল্পীরা। তারা সুর তোলেন কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত ‘চল চল চল’ কবিতায়।
এছাড়া গেয়ে শোনান- ‘স্বাধীনতা ম্যাডলি’। এটি মূলত ‘মাগো ভাবনা কেন’, ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর’সহ মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা যোগানো গানের কোলাজ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের টানা দেড় দশকের শাসনের ইতি ঘটে। দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী।
সেই দিনের বার্ষিকীতে মঙ্গলবার বাংলাদেশ উদযাপন করল ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’। এদিন ছিল সাধারণ ছুটি। দুপুরে কিছুটা বিলম্বে শুরু হয় ‘৩৬ জুলাই উদযাপনের’ অনুষ্ঠান। বিভিন্ন ব্যান্ড ও দলের প্রায় ২৫০ জনেরও অধিক শিল্পী অংশগ্রহণ করেন বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিকে পুনর্জাগরণে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই আয়োজনে বৃষ্টি উপেক্ষা করেও হাজারো মানুষ অংশ নেয়। অনুষ্ঠানে বেলুন ওড়ানোর সময় সৃষ্ট আগুনে ১০ জন দগ্ধ হওয়ার ঘটনাও ঘটে। এতে আয়োজকদের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কেউ কেউ।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় এই আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়।
বেলা ১২ টায় ‘সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী’র শিল্পীদের পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পরে ‘কলরব শিল্পীগোষ্ঠী’ কয়েকটি গান পরিবেশন করেন। কণ্ঠশিল্পী নাহিদ পরিবেশন করেন ‘পলাশীর প্রান্তর’ ও ‘৩৬ জুলাই’ গানগুলো। গানের পাশাপাশি শোনা যায়- গত বছরের জুলাই আন্দোলনের বিভিন্ন স্লোগান- ‘শোনো মহাজন/ আমরা অনেকজন’, ‘দেশটা কারো বাপের না’, ‘পালাইছে রে পালাইছে’।
অনুষ্ঠানে ‘নোঙ্গর তোলো তোলো’, ‘তুমি প্রিয় কবিতা’, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’, ‘চল চল’ ও ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’ গানগুলো পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী তাশফি।
‘চিটাগাং হিপহপ হুড’ গেয়ে শোনায়- ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘আমরা আসছি ঢাকা কাঁপাইতে’সহ কয়েকটি গান। ‘কথা ক’, ‘হুদাই হুতাশে’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’সহ কয়েকটি র্যাপ গান পরিবেশন করেন র্যাপার সেজান। ব্যান্ড ‘শূন্য’ পরিবেশন করে ‘শত আশা’, ‘বেহুলা’, ‘রাজাহীন রাজ্য’ ও ‘শোন মহাজন’ গানগুলো।
এরপর মঞ্চে ওঠেন কণ্ঠশিল্পী ইথুন বাবু ও মৌসুমি। তারা পরিবেশন করেন ‘কোলাজ সংগীত’, ‘আমাদের বাংলাদেশ’, ‘মা’, ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’, ‘এখনো আমরা জেগে আছি’, ‘একটা চাদর হবে চাদর’।
বিকাল ৫টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার মঞ্চে দাঁড়িয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
তার আগে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। এরপর জুলাই আন্দোলনে শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। প্রদর্শিত হয় প্রামাণ্যচিত্র ‘জুলাই বীরগাঁথা’।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, “বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে।”
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “৫ অগাস্ট ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রনয়ণ করা হল।”
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সিনিয়র সচিব, সচিবসহ বিভিন্ন বাহিনী ও দপ্তরসংস্থার প্রধান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ ও ছাত্র প্রতিনিধি ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতও উপস্থিত ছিলেন।
জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের পর সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী সায়ান, ব্যান্ড সোলস, ওয়ারফেজ, বেসিক গিটার লার্নিং স্কুল, ব্যান্ড এফ মাইনর, এলিটা করিম ও পারসা মাহজাবীন।
দুপুর ২টা ২৫ মিনিট, একসাথে আকাশে ওড়ে ‘হেলিকপ্টারের আদলে’ শতাধিক বেলুন। সঙ্গে হাজারো মানুষের কণ্ঠে স্লোগান ওঠে- ‘পালাইছে রে পালাইছে, শেখ হাসিনা পালাইছে’।
এভাবেই মানিক মিয়া এভিনিউয়ে বেলুন উড়িয়ে, স্লোগানের ধ্বনিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনার পলায়ন’ মুহূর্তটি উদযাপন করা হয়।
তবে বেলুন ওড়ানোর সময় সৃষ্ট আগুনে ১০ জন দগ্ধ হওয়ার ঘটনায় আয়োজকদের সমালোচনায় পড়তে হয়।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দুপুর সোয়া ২টার দিকে ‘স্বৈরাচারের পলায়নের’ প্রতীকী হেলিকপ্টার হিসেবে সবুজ রঙের বেলুন ওড়ানো হচ্ছিল। একগুচ্ছ বেলুন ওড়ানোর সময় আগুন ধরে যায়, তাতে সেখানে থাকা কয়েকজন দগ্ধ। এসময় বিদ্যুতের তারেও আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
তখন স্টেজে গান থামিয়ে সবাইকে সরে যেতে বলা হয়। এরপরই ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যেতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে একজনের বাঁ হাতে পোড়া জখম দেখা গেছে। এই আগুন অল্প সময় স্থায়ী হলেও উদযাপন মঞ্চ ও আশপাশে হইচই শুরু হয়ে যায়।
সন্ধ্যা ৬টায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া অনুষ্ঠান মঞ্চে বলেন, “আর কখনো কোনো শাসক যেন শোষক হয়ে উঠতে না পারে। কোনো সরকার যেন স্বৈরাচার হয়ে উঠতে না পারে।” এ সময় মঞ্চে ছিলেন জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবসসুম, রাফিসহ অনেকে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন জনপ্রিয় উপস্থাপক জুলহাজ্জ জুবায়ের ও সারা আলম।
তিতুমীর কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, “গত বছর রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছি, গত বছরের ৫ তারিখও সংসদ ভবনে আসছিলাম। আজকেও আসছি। বাংলাদেশের মাটিতে কোনো ফ্যাসিস্টের ঠাঁই নাই।”