সময়ের জনমাধ্যম

লুটের পাথর এক সপ্তাহের মধ্যে উদ্ধারের নির্দেশ হাইকোর্টের

Last Updated on 4 weeks by zajira news

অনলাইন ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র ‘সাদাপাথর’ থেকে লুট হওয়া পাথর ৭ দিনের মধ্যে উদ্ধার করে আগের জায়গায় প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। একইসঙ্গে এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ অগাষ্ট) বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার বেঞ্চ কয়েকটি বিষয়ে রুলসহ এ আদেশ দেয়।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে রিট আবেদনটি করেন ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

মনজিল মোরসেদ বলেন, “বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সাদাপাথর গায়েব সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, যে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় পাথরগুলো নিয়ে যাওয়া হয়েছে; যার মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

“উক্ত জায়গাটি এনভায়রনমেন্টালি ক্রিটিক্যাল স্থান হিসেবে বিবেচিত এবং হাজার হাজার মানুষ এখানে পর্যটনে আসে। পরিবেশ আইনের ৫ ধারায় এ স্থান ক্রিটিক্যাল এরিয়া ঘোষণার নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করা করা হয়।”

তিনি বলেন, দিনে দুপুরে এভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাটের ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। এটি সংবিথধানের ১৮ (এ) এর নির্দেশ অনুসারে সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর উত্তোলন ও অপসারণ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না; সাদাপাথর এলাকা সংরক্ষণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না; ওই এলাকাকে পরিবেশ আইনের ৫ নম্বর ধারা অনুসারে ইকোলজিক্যাল এরিয়া ঘোষণার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং পরিবেশের ক্ষতির সম পরিমাণ অর্থ দায়ীদের কাছ থেকে আদায়ের জন্য কেন আদেশ দেওয়া হবে না তা জানাতে ৪ সপ্তাহের রুল জারি করেছে আদালত।

এছাড়া আদালত অন্তর্বর্তী আদেশে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে, সেগুলো হলো-

১. স্থানীয় সিভিল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহযোগিতায় সাত দিনের মধ্যে লুট হওয়া পাথর উদ্ধার করে ভোলাগঞ্জের প্রতিস্থাপন করতে হবে। এ বিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপ আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে এফিডেভিট আকারে জানাতে হবে আদালতকে।

২. সিলেট জেলা প্রশাসক, বিজিবি, র্যাবসহ মোট পাঁচ সংস্থাকে পাথর লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে এফিডেভিট আকারে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে হবে।

৩. পরিবেশ সচিব, খনিজসম্পদ সচিবকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেখানে বুয়েটের একজন অধ্যাপককে রাখতে হবে। পাথর লুটপাটের ঘটনায় কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা এ কমিটির মাধ্যমে নিরূপণ করে ৩ মাসের মধ্যে এফিডেভিট আকারে আদালতে দাখিল করতে হবে।

৪. দিন ও রাতে তদারকির জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও বিবাদীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মনিটরিং টিম গঠন করতে বলা হয়েছে; ২ সপ্তাহের মধ্যে আদালতে কমপ্লায়েন্স প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

গত বছরের ৫ অগাস্ট পটপরিবর্তনের পর থেকেই সিলেটের অন্যান্য পাথর কোয়ারির মত সাদাপাথরেও শুরু হয় ব্যাপক লুটপাট। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে এ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় শোরগোল পড়লে দুদকসহ স্থানীয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসে।

সাদাপাথর হিসেবে পরিচিত ধলাই নদের উৎসমুখে বিপুল পরিমাণ পাথর জমা হয়েছিল। লাগামহীন লুটপাটের কারণে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এ পর্যটনকেন্দ্র।

দিনের বেলা প্রকাশ্যেই সেই সব পাথর নৌকা করে নিয়ে লুট করা শুরু হয়। প্রতিদিন শত শত নৌকা দিয়ে লুটের পাথর পরিবহন করা হয়। নদী তীরের বালি খুঁড়েও চলে লুটপাট।