Last Updated on 1 year by zajira news
নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: ‘স্কোপোলামিন’, চিকিত্সার জন্য আবিষ্কৃত ও ব্যবহৃত এই গুঁড়া বা তরল রাসায়নিক দ্রব্যের অপব্যবহার বিশ্বজুড়ে এখন এতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে ‘ডেভিলস ব্রেথ’ বা ‘শয়তানের নিশ্বাস’ নামে পরিচিতি পেয়েছে এটি। সেই শয়তান এখন নিশ্বাস ফেলছে বাংলাদেশেও ।
গত ২২ মে মো. জনি নামের অপরাধী চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম শহরে স্কোপোলামিন ব্যবহারের ভীতিকর তথ্য পায় নগর পুলিশ। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজে পুলিশ দেখতে পায়, ফাতেমা বেগম নামের এক নারী মো. জনি ও তাঁর সঙ্গীদের পেছন পেছন হেঁটে যাচ্ছেন।
তাঁদের নির্দেশমতো নিজের কানের দুল, গলার চেইন খুলে দিচ্ছেন, যার মূল্য প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ ছাড়া মুঠোফোন ও বাজারের ব্যাগও অপরাধীদের হাতে স্বেচ্ছায় তুলে দেন ফাতেমা বেগম। পরে তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটা ঘোরের মধ্যে এসব করে যাচ্ছিলেন তিনি। পরে ঘোর কেটে গেলে বুঝতে পারেন অপরাধীরা ফুঁ দিয়ে একধরনের পাউডার তাঁর নাকের কাছে ছড়িয়ে দিয়েছিল, সেই পাউডার তাঁর নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করতেই নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তিনি এবং অপরাধীদের কথামতো কাজ করতে থাকেন।
জনির স্বীকারোক্তি, ফাতেমার বক্তব্য এবং সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ নিশ্চিত হয়, ফাতেমার নাকের কাছে বুদ্ধিনাশক ওই রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় স্কোপোলামিন প্রয়োগ করে অপরাধের ঘটনা এটাই প্রথম বলে পুলিশের ধারণা।
তবে চট্টগ্রামে এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম ও একমাত্র কি না জোর দিয়ে বলা যায না। কারণ, রাউজানে চুয়েট স্কুলের ছাত্র সাজিদের অপহরণ-ঘটনার সঙ্গে স্কোপোলামিন ব্যবহারের কিছু লক্ষণ পাওয়া গেছে।
গত ৫ মে অপহরণের ১৩ ঘণ্টা পর উদ্ধার পাওয়া সাজিদ জানিয়েছিল, এক নারী তাকে একটা কাগজে লেখা ঠিকানা পড়তে দিয়েছিল। কাগজে লেখা অক্ষরগুলো এতই ছোট ছিল যে, পড়ার জন্য চোখের খুব কাছে নিয়ে গিয়ছিল সে। ঘোর কেটে যাওয়ার পর একটা সিএনজি থেকে লাফিয়ে পড়ে পালিয়ে এসেছিল সাজিদ। এ রকম আরও ঘটনা নানা জায়গায় ঘটতে পারে। সত্য–মিথ্যা জানি না, এ রকম কিছু ঘটনার কথা আমাদের কানে এসেছে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা পুলিশের দ্বারস্থ হন না বলে অনেক ঘটনারই সত্যাসত্য যাচাই করা সম্ভব হয় না।
এ বিষয়ে এখনই সচেতন না হলে শয়তানের নিশ্বাস থেকে রক্ষা পাওয়া আমাদের জন্য সত্যিই কঠিন হয়ে পড়বে। গালগল্প বা গুজব প্রচার করে সমাজে অহেতুক ভীতি-আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া যেমন হঠকারিতা, তেমনি এ রকম ঘটনার শিকার হলে পুলিশকে না জানানোও চূড়ান্ত দায়িত্বহীনতা। মনে রাখতে হবে, আমাদের পরিবারের সদস্য, শিশু-নারী-বৃদ্ধসহ কেউই এই বিপদের আশঙ্কামুক্ত নয়।
অপরাধের ধরন দিন দিন পাল্টাচ্ছে। মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি ইত্যাদি নানা নামের অপরাধী চক্র সক্রিয় ছিল এত দিন। পুলিশ এসব অপরাধীর পেছনে লেগে আছে বলে চুরি–ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ইদানীং আগের তুলনায় অনেকটা কমেছে। এ অবস্থায় নতুন উপায়ের সন্ধানে উঠে পড়ে লেগেছে তারা। শয়তানের নিশ্বাস তাদের নতুন হাতিয়ার।
ফাতেমা বেগম প্রতারক চক্রের কবলে পড়ার পর যত দ্রুততার সঙ্গে এই চক্রের একজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয়েছিল পুলিশ, বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে সে রকম সাফল্য দেখাতে পারেনি। এটা একটা দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে রইল। ডালপালা গজানোর আগেই এই চক্রকে সমূলে ধ্বংস করে সাধারণ মানুষকে অভয় দেওয়ার দায়িত্ব তো তাদেরই।
অপরাধীচক্র ছিনতাইয়ের মত অপরাধকর্মে যেভাবে স্কোপোলিমিন মাদক ব্যবহার করে :
১। ধোঁয়ার মাধ্যমে
২। ট্যাবলেট হিসেবে পানি বা শরবতের সঙ্গে মিশিয়ে
৩। স্কোপোলামিন পাউডার মুখ বা নাক দিয়ে নিশ্বাসের সাথে প্রয়োগের মাধ্যমে
৪। হাতসহ দেহের কোন অঙ্গের ত্বকে প্রলেপ লাগিয়ে, ফলে এটি ধীরে ধীরে রক্তে মিশে যায়।
৫। ইনজেকশনের মাধ্যমে ত্বকে মিশিয়ে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বিপদ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে নিজে সতর্ক থাকা এবং এ ব্যাপারে পরিবারের লোকজনকে সতর্ক
স্কোপোলামিন থেকে বাঁচার উপায় :
১। অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে হ্যান্ডসেক করা থেকে বিরত থাকুন। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে স্পর্স করুন। অচেনা ব্যক্তি গ্লাভস পরা থাকলে কোন মতেই হ্যান্ডসেক করবেন না।
২। অচেনা বা সন্দেহজনক ব্যক্তির কাছ থেকে কোন জিনিস খাবেন না বা কোন পানীয় পান করবেন না।
৩। কোন ফুল বিক্রেতার ফুলের ঘ্রাণ শুকবেন না।
৪। রাস্তায় বা হোটেলে খাবার খাওয়ার সময় খবার উন্মুক্ত রেখে কোথাও যাবেন না।
৫। ভ্রমণের সময় অচেনা বা সন্দেহজনক ব্যক্তির ব্যবহার করা কোন বস্তু নিজে হাত দিয়ে ধরবেন না।
৬। অচেনা কেউ ঠিকানা বা প্রেসক্রিপসন দেখে দিতে বললে সাবধানতা অবলম্বন করুন অথবা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
অচেনা জায়গায় ঘুরতে গেলে কোন রুমে থাকা অবস্থায় মশা নিধনকারী স্প্রে বা ফ্রেশনার স্প্রে ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজনে মশারি ব্যবহার করুন।