সময়ের জনমাধ্যম

সম্পর্ক এগিয়ে নিতে একাত্তরের সমস্যা মিটিয়ে ফেলুন : পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি প্রধান উপদেষ্টা

ডি-৮ সম্মেলনের ফাঁকে মিসরের রাজধানী কায়রোর একটি হোটেলে বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

Last Updated on 9 months by zajira news

অনলাইন ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে একাত্তরের অমীমাংসিত সমস্যাগুলো নিষ্পত্তি করার আহ্বান জানিয়েছে ।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) কায়রোতে ডি-৮ সম্মেলনের ফাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এ আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ইস্যুগুলো বারবার আসছে। আসুন আমরা এগিয়ে যাওয়ার জন্য এই সমস্যাগুলো নিষ্পত্তি করি। প্রফেসর ইউনূস বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সবকিছুর সমাধান করতে পারলে ভালো হবে।

এ সময় শেহবাজ শরীফ বলেন, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে যদি অন্য কোনো অমীমাংসিত ইস্যু থেকে থাকে, তাহলে তিনি খুশি হবেন।

দুই নেতা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদল বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে সম্মত হন। সেই সঙ্গে চিনি শিল্প ও ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনার মতো নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণেরও আগ্রহ প্রকাশ করেন।

প্রফেসর ইউনূস ও শেহবাজ শরীফ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য সার্কের পুনরুজ্জীবনসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন।

ড. ইউনূস ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার’ বাস্তবায়ন এবং ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের আগে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনার কথাও বলেন। তিনি বলেন, সংস্কার নিয়ে সংলাপের জন্য তিনি একটি ঐকমত্য গঠন কমিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

এ সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। শরীফ বলেন, আমরা আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চাই। তিনি সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগের জন্য প্রফেসর ইউনূসের প্রশংসা করেন এবং আঞ্চলিক সংস্থাটির একটি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশকে কাজ করার আহ্বান জানান।

প্রফেসর ইউনূস শরীফকে বলেন, এটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমি সার্কের ধারণার বড় ভক্ত। আমি বিষয়টি নিয়ে বারবার কথা বলি। আমি সার্ক নেতাদের একটি শীর্ষ সম্মেলন চাই, এমনকি যদি তা শুধুমাত্র ফটো সেশনের জন্য হয়। কারণ এটি একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করবে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালিত চিনিকলগুলোকে আরও ভালোভাবে পরিচালনার জন্য কারিগরি সহায়তার প্রস্তাব দেন। তিনি বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন এবং বলেন, এই রোগ মোকাবেলায় পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা থেকে ঢাকা উপকৃত হতে পারে।

তিনি বলেন, প্রায় এক দশক আগে পঞ্জাবে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই বিশ্বমানের বলে প্রশংসিত হয়েছিল। বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য আমরা বাংলাদেশে প্রতিনিধি পাঠাতে পারি।

প্রফেসর ইউনূস শরীফকে তার সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং আশা প্রকাশ করেন যে, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এ সময় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকি উপস্থিত ছিলেন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ প্রফেসর ইউনূসকে তার সুবিধাজনক সময়ে তাদের দেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

লুৎফে সিদ্দিকী ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দারকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন।