সময়ের জনমাধ্যম

সাইবার আইনের কয়েকটি ধারা সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে : বিচারপতি হাসান আরিফ

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ। ছবি: সংগৃহীত

Last Updated on 7 months by admin

নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৫টি ধারা সাংবাদিকদের বিপদে ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ।

সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত এক কর্মশালায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, ‘আইনের পাঁচটি ধারা (২২, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৮) যেকোনোভাবে আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে। যদিও ২৯ ধারায় মানহানির বিষয়ে হয়তোবা আপনারা জরিমানা দিয়ে পার পেয়ে যেতে পারেন। কিন্তু কয়েকটা সেকশন খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে সাংবাদিকতায়।

আইনের ২২ ধারায় ‘ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক জালিয়াতি’ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। ধারাটি তুলে ধরে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে জালিয়াতি করেন, তাহলে ওই ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হবে একটি অপরাধ। তিনি বলেন, ‘এখন ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে জালিয়াতি কাকে বলে? ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে জালিয়াতি বলে কোনো সংজ্ঞা কিন্তু এখানে নেই। আপনি সংজ্ঞায়িত করেন জালিয়াতিটাকে—কোন কাজটা করলে আমার জালিয়াতি হবে, কোন কাজটা করলে আমার জালিয়াতি হবে না?

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, এ ক্ষেত্রে এ ধরনের একটা ধারা খুব মারাত্মক একটা ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে রিপোর্টিং(প্রতিবেদন) করার ক্ষেত্রে। আদালত রিপোর্টিংয়ে হয়তোবা নাও হতে পারে।

আইনের ২৩ ধারায় ‘ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক প্রতারণা’ বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। এই ধারাটি তুলে ধরে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা করেন, তাহলে ওই ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হবে একটি অপরাধ। অপরাধ হলে পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড।

ধারাটিতে একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক প্রতারণা অর্থ কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে অথবা অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো কম্পিউটার প্রোগ্রাম, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল সিস্টেম, ডিজিটাল নেটওয়ার্কে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কোনো তথ্য পরিবর্তন করা, মুছে ফেলা, নতুন কোনো তথ্যের সংযুক্তি বা বিকৃতি ঘটানোর মাধ্যমে যার মূল্য বা উপযোগিতা হ্রাস করা, তার নিজের বা অন্য কোনো ব্যক্তির কোনো সুবিধাপ্রাপ্তির বা ক্ষতি করার চেষ্টা করা বা ছলনার আশ্রয় গ্রহণ করা।

তিনি বলেন, এটাতে হয়তো বা খুব বেশি সাংবাদিকদেরকে ধরতে পারবে না। কিন্তু ইনজেনারেল যারা মিডিয়া ব্যবহার করে, এখন মিডিয়া ব্যবহার করার সংখ্যা বাংলাদেশে জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশের মতো হয়ে গেছে। এখন গরিব জনগোষ্ঠী যারা তাদের হাতেও মোবাইল ফোন আছে, ফেসবুক ব্যবহার করছে, ইউটিউব দেখছে ও আপলোড করছে। এটা ইন জেনারেল (সাধারণভাবে) অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ধারা।

অনুষ্ঠানে প্রথম পর্বে আলোচনায় অংশ নেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। সেখানে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। সঠিক প্রমাণ নিয়ে সাংবাদিকতা করলে কারও কিছু বলার থাকবে না।

ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি শামীমা আক্তারের সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয় ।