Last Updated on 1 year by zajira news
বাগেরহাট প্রতিনিধি, জাজিরা নিউজ: তিন পরে নিয়ন্ত্রণে এসেছে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের আমরবুনিয়া এলাকার আগুন। তবে এখনও পুরোপুরি নেভেনি বনের আগুন। আরও দুই থেকে তিন দিন পর্যবেক্ষণ করা হবে আগুন।
সোমবার (৬ মে) দুপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বাংলাদেশের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম আমরবুনিয়া এসব তথ্য জানান।
তিনি আরও বলেন, বনে পাতার অনেক মোটা স্তর রয়েছে। এসব স্তরের নিচে নিচে আগুন থাকতে পারে, তাই, আরও দুই দিন পানি ছিটানো হবে।
গত শনিবার বিকেল ৪টার দিকে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের মধ্য আমরবুনিয়া সুন্দরবনের অংশে স্থানীয় লোকজন আগুনের ধোয়া দেখতে পান। এরপর থেকে বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড, কমিউনিটি প্যাট্রলিং গ্রুপ (সিপিজি), ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআরসি) সদস্যসহ স্থানীয় শত শত নারী ও পুরুষ আগুন নেভানোর কাজ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, তিনদিন পর আজ সোমবার সকালেও সুন্দরবনে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। যেখানে আগুন দেখা যাচ্ছে, সেখানে পানি ছিটাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এছাড়া আগুন লাগা ছয় একর ভূমির ফায়ার লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে।
আজ সকালে বিভাগীয় বন সংরক্ষক পূর্ব সুন্দরবন খুলনার মিহীর কুমার দো বলেন, আগুন পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আগামী দুইদিনও বন বিভাগের কর্মীরা আগুন লাগা এলাকায় থাকবেন।
মোরলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান, আগুন নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস টিম আগুন লাগা ছয় একর বনভূমি পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, আমরা এখনই বন ছাড়ছি না। আরও দুই থেকে তিনদিন আমরা বনের মধ্যে পর্যবেক্ষণ করব। তারপরে সম্পূর্ণভাবে আগুন নির্বাপন হয়েছে ঘোষণা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ড্রোন দিয়েও উপর থেকে পরীক্ষা করে দেখেছি। দুপুরের দিকে দুই একবার ধোঁয়া উড়তে দেখে সঙ্গে সঙ্গে ডিটেক্ট করে পানি ছেটানো হয়েছে। দুপুরের পর থেকে কোথাও আগুন দেখছি না আমরা। আপনারা জানেন আগুনটা গ্রাউন্ড ফায়ার, তুষের মতো নিচে থেকে যায়।
আগুনে বনের গাছপালা, লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়েছে। ওই এলাকায় মূলত বলা, সুন্দরী, বাইন, গেওয়া, জিন, সিংড়াসহ বিভিন্ন ধরনের গুল্ম জাতীয় গাছ রয়েছে। পুড়ে যাওয়া ভূমিতে এখন ছাইয়ের পুরু স্তর। সেখানে ধোঁয়া আর তাপে শ্বাস নেওয়া কষ্টকর। তাপে আশপাশের গাছের সবুজ পাতা শুকিয়ে গেছে। ছাইয়ের ওপর নতুন করে পড়ছে শুকনো পাতা।
আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর শনিবার বিকেলে বনে প্রবেশের সময় বানর, গুইসাপ, বনমোরগসহ বিভিন্ন প্রাণী দেখা গেছে। পাশাপাশি শোনা যাচ্ছিল নানা রকম পাখির ডাক। তবে রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তেমন কোনো প্রাণী বা পাখির ডাক শুনতে পাওয়া যায়নি সেখানে।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা ছাড়াও রোববার সেখানে আসেন উপজেলা প্রশাসন, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি। এদিকে সুন্দরবনের আগুন মানবসৃষ্ট ও পরিকল্পিত বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।
গতকাল সকালে আমরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির সামনে মানববন্ধন করেছে বাপা, সুন্দরবন রক্ষায় আমরা ও পশুর রিভার ওয়াটারকিপার। এ সময় বক্তারা বলেন, মুনাফালোভী মাছ ব্যবসায়ী ও অসৎ বন কর্মকর্তার যোগসাজশে আগুন লাগানো হয়। এ ছাড়া অদক্ষ মৌয়ালদের কারণে বনে বারবার আগুন লাগছে। এর দায় বন বিভাগ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
নতুন এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ার তেমন শঙ্কা নেই জানিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের (বাগেরহাট) উপসহকারী পরিচালক মো. সাইদুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আগুনকে কর্ডন (নির্দিষ্ট স্থানে বেষ্টনী) করে ফেলেছি। প্রায় আড়াই কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত হয়েছিল আগুন। ফায়ার লাইন কেটে আমরা চারপাশ ঘিরে ফেলেছি। অন্ধকার নেমে আসায় এবং জোয়ার শেষে ভাটা শুরু হওয়ায় পানি নেওয়া যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে সাপসহ বন্যপ্রাণীর ঝুঁকি থাকায় আজকের মতো (গতকাল) কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক রানা দেবকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সুন্দরবন-পূর্ব বন বিভাগ। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।