সময়ের জনমাধ্যম

স্টার্কের ৬ উইকেট, বোল্যান্ডের হ্যাটট্রিকে উইন্ডিজ শেষ ২৭ রানে

Last Updated on 3 weeks by zajira news

স্পোর্টস ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: মিচেল স্টার্ক প্রথম ওভারেই ৩ উইকেট নিলেন। এক ওভার পর ড্রেসিং রুমে ফেরত পাঠালেন আরও ২ ব্যাটসম্যানকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তখনও দুই অঙ্ক ছোঁয়নি। কিছুক্ষণ পর স্কট বোল্যান্ড যোগ দিয়ে চমৎকার বোলিংয়ে পেলেন হ্যাটট্রিকের স্বাদ। ক্যারিবিয়রা তবু ফিল্ডিং ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে টেস্ট ইতিহাসের সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড পার করে ফেলল।

জ্যামাইকায় দিবা-রাত্রির টেস্টের তৃতীয় দিন আক্ষরিক অর্থেই যেন বল হাতে আগুন ঝরান শততম টেস্ট খেলতে নামা স্টার্ক। রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে মাত্র ৯ রানে ৬ উইকেট নিয়ে উইন্ডিজের ব্যাটিং ধসিয়ে দেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি পেসার। পরে বোল্যান্ড হ্যাটট্রিকের আনন্দে ভাসলে মাত্র ২৭ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিক ইনিংস। ২০৪ রানের মাঝারি লক্ষ্য দিয়েও অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জিতে যায় ১৭৬ রানের ব্যবধানে।

টেস্ট ইতিহাসে এর চেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার ঘটনা আছে স্রেফ একটি। ১৯৫৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অকল্যান্ড টেস্টে মাত্র ২৬ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল নিউ জিল্যান্ড। প্রায় ৭০ বছর পর অল্পের জন্য সেই রেকর্ডে বসেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের নাম। পেসারদের দাপটের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেই আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে যাত্রা শুরু করল অস্ট্রেলিয়া।

ক্যারিবিয় টপ-অর্ডারে ধস নামিয়ে নিজের প্রথম ১৫ বলেই ৫ উইকেট নিয়ে নেন স্টার্ক। টেস্ট ইতিহাসে এত কম বলে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি নেই আর কারও। সব মিলিয়ে ৭.৩ ওভারে ৯ রানে তার শিকার ৬টি। শততম টেস্টে এটিই সেরা বোলিংয়ে রেকর্ড। গোলাপি বলের টেস্টে আগে থেকেই সবার সেরা স্টার্ক। সেই রেকর্ড আরেকটু সমৃদ্ধ করে ২৭ ইনিংসে এখন তার শিকার ৮১ উইকেট। আর কারও ৫০ উইকেটও নেই। ইনিংসে ৫ উইকেট পাঁচবার। আর কারও নেই দুবারের বেশি।

টেস্টে হ্যাটট্রিকের স্বাদ পাওয়া অস্ট্রেলিয়ার দশম বোলার বোল্যান্ড। নিজ দেশের হয়ে ২০১০ সালে পিটার সিডলের পর তিনিই প্রথম পেলেন হ্যাটট্রিকের দেখা। স্টার্ক ও বোল্যান্ডের তোপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাত ব্যাটসম্যান আউট হন রানের খাতা খোলার আগে। টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ইনিংসে দেখা গেল এত ব্যাটসম্যানের শূন্য রানে আউট হওয়ার ঘটনা।

অথচ দুই জোসেফ অর্থাৎ শামার ও আলজারির দারুণ বোলিংয়ে দিনের শুরুটা চমৎকার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগের দিন ৬ উইকেটে ৯৯ রান করা অস্ট্রেলিয়া এদিন যোগ করতে পারে আর মাত্র ২২ রান।

দিনের প্রথম বলে ক্যামেরন গ্রিনকে বোল্ড করেন শামার। পূর্ণ করেন টেস্টে ৫০ উইকেট। দুই ওভার পর দারুণ বাউন্সারে ফেরেন আগের দিনের আরেক অপরাজিত ব্যাটসম্যান প্যাট কামিন্স। দুজনের কেউই এদিন কোনো রান করতে পারেননি। পরে বোল্যান্ডকে ফেরান শামার। আর জশ হেইজেলউডকে বোল্ড করে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ৫ উইকেট পূর্ণ করেন আলজারি। এই ইনিংসে নেওয়া ২৭ রানে ৫ উইকেটই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।

২০৪ রানের লক্ষ্য খুব বেশি বড় না হলেও, উইকেট-কন্ডিশন বিবেচনায় ছিল বেশ কঠিন। আর নতুন গোলাপি বলে স্টার্কের দুর্ধর্ষ বোলিংয়ে পাঁচ ওভারের মধ্যেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম বলেই চমৎকার ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড জন ক্যাম্পবেল। পঞ্চম বলে গতিময় সুইং ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ অভিষিক্ত কেভলন অ্যান্ডারসন। ওভারের শেষ বলে একই ধরনের ডেলিভারি ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে বোল্ড ব্র্যান্ডন কিং।

স্টার্কের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে আবারও ডানহাতির জন্য ভেতরে ঢোকানো ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ মিকাইল লুইস। একইসঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটে পূর্ণ হয় স্টার্কের ৪০০ উইকেট। এই মাইলফলকে অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ বোলার তিনি। এক বল পর শেই হোপকে ফিরিয়ে টেস্ট ইতিহাসের দ্রুততম ৫ উইকেট পূর্ণ করেন স্টার্ক। তার বোলিং বিশ্লেষণ তখন ২.৩-২-২-৫! ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর বোর্ডে তখন ৫ উইকেটে মাত্র ৭ রান।

পরের ওভারে হেইজেলউডও উইকেট শিকারে যোগ দিলে ১১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে ক্যারিবিয়রা। টেস্ট ইতিহাসের সর্বনিম্ন ২৬ রান তখন অনেক দূরের পথ। কিন্তু স্লিপে একাধিক ক্যাচ ছেড়ে দেন স্যাম কনস্টাস।

তবু সুযোগ ছিল ২৬ রানে অলআউট করার। কিন্তু কনস্টাসেরই মিস ফিল্ডিংয়ে ২৭তম রান পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। ইনিংসের ১৪তম ওভারে প্রথম তিন বলে জাস্টিন গ্রিভস, শামার ও জোমেল ওয়ারিক্যানকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন বোল্যান্ড। পরের ওভারে জেডেন সিলসকে বোল্ড করে জয় নিশ্চিত করেন স্টার্ক। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ ও সিরিজ সেরার পুরস্কার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ২২৫

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ১৪৩

অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: (আগের দিন ৯৯/৬) ৩৭ ওভারে ১২১ (গ্রিন ৪২, কামিন্স ৫, স্টার্ক ১১*, বোল্যান্ড ১, হেইজেলউড ৪, সিলস ৮-২-৩২-০, শামার ১৩-৪-৩৪-৪, আলজারি ১২-২-২৭-৫, গ্রিভস ৪-০-১৯-১)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২০৪) ১৪.৩ ওভারে ২৭ (ক্যাম্পবেল ০, লুইস ৪, অ্যান্ডারসন ০, কিং ০, চেইস ০, হোপ ২, গ্রিভস ১১, আলজারি ৪*, শামার ০, ওয়ারিক্যান ০, সিলস ০; স্টার্ক ৭.৩-৪-৯-৬, হেইজেলউড ৫-৩-১০-১, বোল্যান্ড ২-১-২-৩)

ফলাফল: অস্ট্রেলিয়া জয়ী ১৭৬ রানে