Last Updated on 8 months by zajira news
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানি প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড়। পশ্চিমা আধিপত্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো রাইসির মৃত্যু দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।
গত রোববার (১৯ মে) ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাইসির অপ্রত্যাশিত মৃত্যু ঘটে।
হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজছেন কেউ কেউ। কারণ, এর আগেও মার্কিন হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ গেছে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানের।
৬৩ বছর বয়সী রাইসি তাঁর কট্টরপন্থী নীতি ও দেশটির সর্বোচ্চ নেতা ইমাম খামেনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য বেশ পরিচিত ছিলেন। তাঁর সময়ে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণকে অস্ত্র বানানোর পর্যায়ের কাছাকাছি নিয়ে যায় এবং ইসরায়েলের ওপর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও চালানো হয়।
প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু ইরানের অভ্যন্তরে ক্ষমতার বিরোধ ও সংকটের সূত্রপাতই করবে না, বরং এই অঞ্চলে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাবও ফেলবে। মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ও সংঘাতের মধ্যে রাইসির মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের হঠাৎ অনুপস্থিতি ইরান এবং এর বাইরেও ক্ষমতার ভারসাম্যকে ব্যাহত করতে পারে।
এই হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের কারণ হিসেবে সরকারি ভাষ্যে বৃষ্টি, কুয়াশাসহ খারাপ আবহাওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর পেছনে নাশকতা থাকতে পারে—এমন গুঞ্জনও উঠেছে।
বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবার ক্ষমতায় আসা এবং ইরানের ভেতরে-বাইরের নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি থাকা রাইসির এমন মৃত্যুর ঘটনায় ভেতরের শত্রু বা এমনকি ইসরায়েলের মতো বাইরের খেলোয়াড় বা ক্রীড়নকেরা যুক্ত কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে।
রাইসির মৃত্যুতে ইসরায়েলের সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা কতটুকু? ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ঐতিহাসিক বৈরিতার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ইরানি অনুমান করেছেন যে এ দুর্ঘটনার পেছনে ইসরায়েলের হাত থাকতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য রাইসির মৃত্যুর পেছনে ইসরায়েলের হাত আছে বলে মনে করছেন না। একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা মানে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া বা বলা যায় এর জন্য ইরানকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করা। উচ্চপদস্থ কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন, ইসরায়েল বরং সামরিক বা পারমাণবিক অবস্থান বা ব্যক্তিকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর কৌশল নিয়ে থাকে।
ইকোনমিস্টের একটি প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে। দামেস্কে ইরানের একজন জেনারেলকে ইসরায়েলের হত্যা এবং পরবর্তী সময়ে ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাসহ দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে রাইসির মৃত্যুর পেছনে ইসরায়েলের হাত থাকার ধারণা জোরদার হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য রাইসির মৃত্যুর পেছনে ইসরায়েলের হাত আছে বলে মনে করছেন না। একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা মানে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া বা বলা যায় এর জন্য ইরানকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করা। উচ্চপদস্থ কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন, ইসরায়েল বরং সামরিক বা পারমাণবিক অবস্থান বা ব্যক্তিকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর কৌশল নিয়ে থাকে।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাইসির মৃত্যুর পেছনে ইসরায়েলের যুক্ততা নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ইসরায়েল কখনো কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যার পথ ধরেনি। এমন কিছু করতে যাওয়া মানে নিশ্চিতভাবেই যুদ্ধ শুরু করা এবং ইরানের তরফে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পথ তৈরি করা।
যাহোক, এমন একটি সময়ে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে, যা এই অঞ্চলের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনজুড়ে ইরানের প্রক্সি নেটওয়ার্ক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলবে। ইরানের নেতৃত্বের মধ্যে যেকোনো অস্থিরতা–সংঘাত বিস্তৃত করতে এই গোষ্ঠীগুলোকে উৎসাহিত করতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া