সময়ের জনমাধ্যম

রোদের উত্তাপে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে শ্রমজীবী মানুষের জীবন

Last Updated on 5 months by zajira news

নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: গরমে জনজীবনে প্রচণ্ড অস্বস্তি বিরাজ করছে। ঘরের বাইরে এলে খরতাপে শরীর ঝলসে যাওয়ার মতো যন্ত্রণা বোধ হয়, একই সঙ্গে ঘাম ঝরতে থাকে প্রচুর। তৃষ্ণা বাড়ে। সব মিলিয়ে ভীষণ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ এবং যাঁরা খোলা আকাশের নিচে রোদে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন, তাঁদের কষ্ট মাত্রাছাড়া।

চলতি গ্রীষ্মে গত সোমবার থেকে দ্বিতীয় দফায় ৭২ ঘণ্টাব্যাপী বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ। গতকাল (২৩ এপ্রিল) মঙ্গলবারও ঢাকা শহরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৯২ শতাংশ। আবহাওয়া বিভাগের পরিভাষায় এটি মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ।

রাজশাহী, যশোর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা-এসব অঞ্চলে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। দিনের তাপমাত্রা কমবে-এমন সম্ভাবনা নেই; বরং ১ থেকে ২ ডিগ্রি বাড়তে পারে-এমন পূর্বাভাসই দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীতে রিকশাচালকেরা জানান, তাঁরা সাধারণত সকাল সাতটা দিকে রিকশা নিয়ে বের হতেন। রাত আটটা বা কেউ দশটা পর্যন্ত চালাতেন। এখন সবাই বেলা একটা থেকে সর্বোচ্চ দুইটার মধ্যে ঘরে ফিরে যান। আবার বিকেল চারটা বা পাঁচটার দিকে বের হন।

ভরদুপুরে রিকশা চালানো কঠিন। এতে তাঁদের আয়ও কমে গেছে। মালিকের জমা ও পথের খাবারের খরচ বাদ দিলেও আগে হাজার-বারো শ টাকা তাঁদের আয় হতো। এখন ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা ভাড়া তোলাই কঠিন হয়ে পড়েছে। রাজধানীতে আরেক রিকশা চালক বগুড়ার শাজাহানপুরে বাড়ি। ঢাকায় প্রায় ২৫ বছর ধরে রিকশা চালান। থাকেন হাজারীবাগের ঝাউচরে। এখন সারা দিন রিকশা চালাতে পারেন না।

 

রিকশা ভ্যানে শাকসবজি কিনে মহল্লায় মহল্লায় ঘুরে বিক্রি করা তাঁর পেশা। এমন এক শাক বিক্রেতা জানান, বিভিন্ন ধরনের ১৫০ থেকে ২০০ আঁটি শাক প্রতিদিন বিক্রি করতেন। এখন ৭০ থেকে ৮০ আঁটি বিক্রি হচ্ছে। কারণ, রোদে শাক নেতিয়ে যায়। ক্রেতারা কিনতে চান না। তা ছাড়া সারা দিন পথে পথে ঘোরাও সম্ভব হচ্ছে না।

সরাসরি কায়িক শ্রম না করলেও প্রখর রোদে লম্বা সময় ধরে খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে হয় শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের। শহরের বিভিন্ন ট্রাফিক সিগন্যাল মোড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ, সার্জেন্ট ও পরিদর্শকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ট্রাফিক পুলিশদের আট ঘণ্টা করে টানা কাজ করতে হয়। কখনো কখনো আরও বেশি। তাপপ্রবাহের মধ্যেও এতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে তাঁরা কর্তব্যরতদের পালা করে ১৫-২০ মিনিট করে বিশ্রাম দেন। যেখানে চারজন পুলিশ ও দুজন সার্জেন্ট থাকেন, সেখানে দুজন পুলিশ ও একজন সার্জেন্ট হয়তো ১৫ মিনিট সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করেন, অন্যরা পুলিশ বক্সে বা কোনো গাছ থাকলে তার ছায়ায় দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নেন। তা ছাড়া ছাতা ব্যবহার করা হচ্ছে।

ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত পানি, গ্লুকোজ, খাওয়ার স্যালাইন সরবরাহ করা হয়েছে। পুলিশ কেউ অসুস্থ হননি, কিন্তু শাহবাগ মোড়ে প্রায় প্রতিদিনই দুয়েকজন রিকশাচালক, বাসের যাত্রী বা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসব অসুস্থ লোককেও কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা সহায়তা দিচ্ছেন। এখানে (শাহবাগে) সবার জন্য বিশুদ্ধ খাওয়ার পানিরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, তাপপ্রবাহ তীব্র হলেও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিথিলতার সুযোগ নেই। তবে কর্তব্যরত পুলিশদের শরীর-স্বাস্থ্য যেন ভালো থাকে, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক নিজ উদ্যোগে এগুলো সরবরাহের ব্যবস্থা নিয়েছেন। তা ছাড়া কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স রাখা ও হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে সর্বসাধারণের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তানে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ ফুটপাতই প্রায় ফাঁকা। কিছু কিছু ফল, হরেক রকম টুকিটাকি যন্ত্র ও গৃহস্থালিসামগ্রী ও পোশাকের পসরা বসেছে। বড় বড় ছাতার নিচে পসরা সাজিয়েছেন তাঁরা। অনেকের আবার ছাতা নেই। কথা হলো ফল বিক্রেতা রুহুল আমিন, গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি বিক্রেতা বাবুল হোসেন, পোশাক বিক্রেতা আবু সুফিয়ানসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁরা জানান ঈদ, পয়লা বৈশাখের ছুটির প্রভাব এখনো আছে। সে কারণে তাঁদের বিক্রি কম। কিন্তু খররোদে পসরা নিয়ে বসে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। ছাতা থাকায় সরাসরি রোদের তাপ গায়ে লাগছে না। তবে এই এলাকার সড়কে কোনো গাছপালা না থাকায় আগুনের হলকার মতো রোদের তাপ এসে শরীরে লাগে। যাঁরা ছাতা বসানোর মতো জায়গা পাননি, তাঁদের কষ্ট আরও বেশি।

Reendex

Must see news