সময়ের জনমাধ্যম

সুপার ওভারে পাকিস্তানকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস

Last Updated on 4 months by zajira news

স্পোর্টস ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার ওভারে পাকিস্তানকে হারাল যুক্তরাষ্ট্র। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান করেছিল ৭ উইকেটে ১৫৯ রান। যুক্তরাষ্ট্র ৩ উইকেট হারিয়ে থামে ১৫৯ রানেই। ফলে সুপার ওভারে গড়িয়েছে ম্যাচটি। পরে সুপার ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ১৮ রান তোলে। জবাবে পাকিস্তান ১ উইকেট হারিয়ে তোলে ১৩ রান।

কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ সিরিজ হারিয়ে চমক দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট দল। এবার তার চেয়েও বড় অঘটন ঘটাল মোনাঙ্ক প্যাটেলের দল। সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং গতবারের রানার আপ পাকিস্তানকে এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে হারের স্বাদ দিয়েছে স্বাগতিকরা।

২০০৭ সালে একই দিনে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড কার্যত বিদায় করে দিয়েছিল ভারত ও পাকিস্তানকে। দুই দলের বিদায়ে যে আর্থিক লোকসান হয়েছিল আইসিসির, সেটি পোষাতেই কিনা বিশ্বকাপের ফরম্যাট বদলে ফেলে তারা। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেখানে ২০ দলের, ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এক দিক থেকে ক্রিকেটের বিশ্বায়নের এখন পর্যন্ত শিখর এটিই। সে মঞ্চে গত আসরের রানার্সআপ, পরিসংখ্যানে এ টুর্নামেন্টের অন্যতম সফল দলকে হারিয়ে দিচ্ছে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে আসা দল। ক্রিকেটের দারুণ এক গল্প।

উদ্বোধনী ম্যাচেই ১৯৫ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় কানাডাকে উড়িয়ে টি২০ বিশ্বকাপ শুরু করা যুক্তরাষ্ট্র এবার আরও বড় ইতিহাস গড়ল। বৃহস্পতিবার ডালাসে শ্বাসরুদ্ধকর ‘টাই’ ম্যাচে সুপার ওভারে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে হারিয়ে গোটা ক্রিকেট বিশ্বকেই চমকে দিল ভাড়াটে অভিবাসী খেলোয়াড় নিয়ে গড়া মার্কিনিরা।

আমিরের করা সুপার ওভার মোকাবিলা করেন অ্যারন জোন্স ও হারমিত সিং। এ ওভার থেকে ১ উইকেটে ১৮ রানের ‘চ্যালেঞ্জিং’ স্কোর পায় যুক্তরাষ্ট্র। তাতে অবশ্য আমিরের দায় অনেক। তিনটি ওয়াইড দিয়ে ৯ বলে ওভার শেষ করেন অভিজ্ঞ এ বাঁহাতি পেসার! জবাবে সুপার ওভারে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে বল করেন সৌরভ নেত্রাভালেকার। পাকিস্তানের হয়ে ব্যাট করেন ইফতিখার আহমেদ ও ফখর জামান। ইফতিখার আউট হলে আসেন শাদাব খান। একটি মাত্র চারে ১ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান থামে ১৩ রানে! অবিস্মরণীয় জয়ের উল্লাসে মাতে যুক্তরাষ্ট্র।

এর আগে মূল ম্যাচে ৭ উইকেটে ১৫৯ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। জবাবে অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল (৩৮ বলে ৫০), ওয়ান ডাউনে আন্দ্রিয়েস গুস (২৬ বলে ৩৫) ও কানাডার বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচে জয়ের নায়ক অ্যারন জোন্স (২৬ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৩৬) ও শেষ দিকে নিতিশ কুমারের (১৪ বলে অপরাজিত ১৪) ব্যাটে ভর করে ৩ উইকেটে ঠিক ১৫৯ রানে থামে যুক্তরাষ্ট্রের ইনিংস। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল সহজ জয় পেতে যাচ্ছে বিশ্বকাপের-সহ আয়োজক দেশটি। কিন্তু বড় দলের বিপক্ষে চাপটাই নিতে পারেনি তারা।

৭ উইকেট হাতে রেখেও শেষ তিন ওভারে ২৮ রান করতে পারেনি। শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২১ রান, শেষ ওভারে ১৫। এই তিনটি ওভার করেন শাহিন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ আমির ও হারিস রউফ। রউফের করা শেষ বলে চার হাকিয়ে ম্যাচ টাই করেন নিতিশ! এক চার ও এক ছক্কা হজম করে শেষ ওভারে ১৪ রান দেন রউফ। ডালাসের গ্রান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে এদিন টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমেই বিপদে পড়ে পাকিস্তান।

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই আউট হন তারকা ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজোয়ান (৮ বলে ৯)। তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে ফেরেন ওয়ান ডাউনে নামা উসমান খান (৩ বলে ৩)। এরপর ৪.৪ ওভারে স্কোর বোর্ডে মাত্র ২৬ রান জমা হতেই তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তারকা ফখর জামান (৭ বলে ১১)। মাত্র ২৬ রানে প্রথম সারির ৩ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ভীষণ চাপে পড়ে পাকিস্তান।

দলকে খেলায় ফেরাতে চেষ্টা করেন অধিনায়ক বাবর আজম ও সহঅধিনায়ক শাদাব খান। চতুর্থ উইকেটে তারা ৪৮ বলে ৭২ রানের জুটি গড়েন। এরপর কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই সাজঘরে ফেরেন আজম খান। শাদাব খান ২৫ বলে এক চার আর ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৪০ রান করলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি আজম।

বিপর্যয়ের মাঝে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেন অধিনায়ক বাবর। ১৫.৫ ওভারে দলীয় ১২৫ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরার আগে ৪৩ বলে দুই চার আর তিন ছক্কায় করেন ৪৪ রান। এর মধ্য দিয়ে ভারতীয় তারকা বিরাট কোহলিকে (১১৮ ম্যাচে ৪০৩৮ রান) টপকে আন্তর্জাতিক টি২০তে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন বাবর (১২০ ম্যাচে ৪০৬৭ রান)। তাতেই মধ্যম মানের পুঁজি পায় পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে নস্টাস কেনজিগে ৩, সৌরভ নেত্রাভালেকার ২, আলি খান ও জাসদ্বীপ সিং নেন ১টি করে উইকেট।