Last Updated on 6 months by zajira news
নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: দায়িত্ববোধ এমনি এক জিনিস যা অনেক সময় নিজের জীবন থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ন হয়ে ওঠে। এই কথাটি যেন আবারও মনে করিয়ে দিল দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় কর্মরত ফটোসাংবাদিক আব্দুল গনি ।
গত (১৯ জুলাই) শুক্রবার কোটা আন্দোলনের বিক্ষোভকারীদের ছবি ও খবর কভার করতে এসে ফটোসাংবাদিক আব্দুল গনি পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গুরুতর আহত হলে তার সহকর্মীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
হাসপাতাল থেকে ফটোসাংবাদিক আব্দুল গনি জাজিরা নিউজকে যে কথাগুলো বলেছিল তা হুবহু তুলে ধরা হল:
“আমি ফটোসাংবাদিকতার আমার ছোট ক্যারিয়ারে অনেক অ্যাসাইনমেন্ট করেছি; তার মধ্যে কখনও কখনও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে কাজ করতে হত। আর এই জুলাই মাসে, কোটা সংস্কারের প্রতিবাদ ছিল সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং সহিংস ঘটনা যা আমাকে কভার করতে হয়েছে ।
আমার মনে হয় এই প্রতিবাদের একটু প্রেক্ষাপট অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। গত (১৯ জুলাই) শুক্রবার সর্বস্তরের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সরাসরি সরকারি চাকরিতে উল্লেখ করা কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় টিএসসিতে জড়ো হয়। ছাত্ররা তাদের প্রতিবাদের অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সড়ক অবরোধ করলেও আমি বিক্ষোভকে শান্তিপূর্ণ মনে করেছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দুর্বৃত্তদের সহিংস হামলার আগে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ ছিল। এরপর সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে রাজপথে নেমে আসে গোটা দেশ।
হঠাৎ করেই রাতারাতি গোটা দেশ বিশেষ করে রাজধানী হয়ে ওঠে এক ভয়ংকর রণক্ষেত্র। একজন সাংবাদিক হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল আমার লেন্সের মাধ্যমে সত্য তুলে ধরা। সত্য সংগ্রহের জন্য প্রচন্ড ঝুঁকি নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটেছি।
এমতাবস্থায় আমি এবং আমার কয়েকজন সহসাংবাদিক সংবাদ কভার করতে যাত্রাবাড়ী এলাকায় গিয়েছিলাম। আমি যখন ফিরছিলাম, যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারে, ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষ একটি দড়ি একপাশ থেকে অন্য পাশে বেঁধেছিল। আমি ও আমার দুই কলিগকে নিয়ে মোটর সাইকেল চালাচ্ছিলাম।
দড়িটা দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল না এবং সেই দড়িতেই সরাসরি প্রচন্ড বেগে ধাক্কা খেয়েছিলাম। দড়িটি আমার গলা বরাবর আঘাত করে কোনওভাবে দড়িটি ছিঁড়ে গিয়েছিল এবং তখন আমার অনুভূতি হয়েছিল যে আমার শিরশ্ছেদ করা হয়েছে । সাথে সাথেই আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি।
পরবর্তীতে DMCH (ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) এ আমি জেগে উঠি কিন্তু আমি তখন কথা বলতে পারছিলাম না সাথে প্রচণ্ড ব্যথা আমার গলা, ঘাড় এবং মাথায় গ্রাস করেছিল। চিকিৎসার পর যখন একটু সুস্থ অনুভব করি তখন আমি আমার ছবি জমা দেওয়ার জন্য আমার বন্ধুদের সাহায্যে আমার অফিসে ছুটে যাই।
যখন লিখছি তখন ২ দিন হয়ে গেছে। আমি এখনও ঠিকমত কথা বলতে পারি না। এখন আমার বেশিরভাগ যোগাযোগ আমার পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে কলম এবং কাগজ দিয়ে করা হয়। আশা করি এই অবস্থা থেকে শীঘ্রই সেরে উঠব।
কোটা আন্দোলনে সংঘর্ষের ঘটনায় একজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, এ পর্যন্ত ২৬ জন সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন। কয়েকজন সাংবাদিককে প্রায় ফাঁকা জায়গা থেকে গুলি করা হয়। এটা মোটেও প্রত্যাশিত ছিল না।
আমার এই দূর্ঘটনায় আপনাদের সকলের সহানুভূতি, ভালবাসা, উদ্বেগ, শুভকামনা এবং প্রার্থনায় প্লাবিত হয়েছি। আমি আমার অফিসের সকল সহকর্মী, সহকর্মী সাংবাদিক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে কৃতজ্ঞ।
শেষ লাইনে আমি বলতে চাই সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন, কারণ মাঠের সাংবাদিকরা কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি বা কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে কাজ করছেন না। আমরা শুধুমাত্র আমাদের জাতি ও আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশের স্বার্থ ও উদ্দেশ্য সাধন করি। “