Last Updated on 2 weeks by zajira news
স্পোর্টস ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: ব্যালন ডি ‘অরের এবার জয়ীর নাম ঘোষণার সময় ফুটবল প্রেমীদের একটু বিস্মিত হওয়ারই কথা । সব সমীকরণ ইঙ্গিত দিচ্ছিল এই মর্যাদাপূর্ণ খেতাব জিততে যাচ্ছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। তবে সবাইকে চমকে দিয়ে সে পুরষ্কার জিতলেন ম্যানচেস্টার সিটির স্প্যানিশ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রদ্রি।
বাংলাদেশ সময় সোমবার (২৮ অক্টোবর) দিবাগত রাতে প্যারিসের থিয়েটার দু শাতেলেতে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারটি পেয়েছেন রদ্রি। তার হাতে ট্রফিটি তুলে দেন ব্যালন ডি’অর জয়ী একমাত্র আফ্রিকান ফুটবলার কিংবদন্তি জর্জ উইয়াহ।
এর মধ্যে দিয়ে অবসান ঘটলো এক লম্বা সময়ের। ৬৪ বছর পর ছেলেদের ফুটবলে কোনো স্প্যানিশের হাতে উঠল ব্যালন ডি’অর। আর ম্যানচেস্টার সিটির ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এই পুরস্কার জিতলেন ২৮ বছর বয়সী তারকা।
ফুটবলারদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিগত পুরস্কার হলো ব্যালন ডি’অর। ফুটবল বিষয়ক সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’ এই সম্মাননা দিয়ে থাকে। ১৯৫৬ সালে এটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। এবার হলো ৬৮তম ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠান। কালের পরিক্রমায় এটি পরিণত হয়েছে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ফুটবলের সর্বোচ্চ পুরস্কারে।
ছেলেদের বর্ষসেরার এই পুরস্কারে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ১০০ দেশের প্রতিটি থেকে একজন করে সাংবাদিক ভোট দিয়েছেন। তাতে রদ্রির ব্যালটেই সবচেয়ে বেশি ভোট পড়ায় ভিনিসিয়ুসের ভক্তদের আসলে হাহুতাশ কিংবা ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব খোঁজা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
কয়েক দিন ধরে ব্যালন ডি’অর ও ভিনিকে নিয়ে যেসব গল্পগাথা সবাই ভেবে রেখেছিলেন, সেসব ভোটের ব্যালটে মুছে সাংবাদিকেরা আসলে থিয়েরি অঁরির কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করলেন। কয়েক দিন আগে সিবিএস স্পোর্টসকে ফরাসি কিংবদন্তি বলেছিলেন, তিনি রদ্রির হাতে ব্যালন ডি’অর দেখতে চান। কিন্তু ভিনিসিয়ুসকে পুরস্কারটি জয়ে এগিয়ে রেখে আক্ষেপ ঝরেছিল তাঁর কণ্ঠে, ‘লোকে মিডফিল্ডারদের ভুলে যায়। তারা দলের হৃদয়। সে ম্যানচেস্টার সিটির হৃদয়।’
অঁরির কথাটা আংশিক ভুল। রদ্রি শুধু সিটি নয়, স্পেনেরও হৃৎকমল। স্পেনের ইউরোজয়ের ‘নিউক্লিয়াস’—যার ভূমিকাটা ঠিক পরিসংখ্যানে টের পাওয়া যায় না খেলা না দেখলে। কিন্তু নির্বাচকেরা সেই ভুল করেননি। ২৮ বছর বয়সী এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের হাতে তাঁরা টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার তুলে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। পুরো টুর্নামেন্টে ৫২১ মিনিট (প্রতি ম্যাচে গড়ে ৮৬.৮৪ মিনিট) খেলে সফল পাসের হার ছিল প্রায় ৯৩ শতাংশ (৪৩৯ পাসের মধ্যে ৪১১টি সফল পাস)। যে একটি গোল করেছিলেন, শেষ ষোলোয় জর্জিয়ার বিপক্ষে সেই গোল জাগিয়ে তুলেছিল স্পেনকে। আর ওই যে অর্কেস্ট্রার কন্ডাক্টরের কথা বলা হলো, রদ্রি ঠিক এ কাজটাই করেছেন পুরো টুর্নামেন্টে। ‘পাপেট শো’র মতো পুরো দলের খেলা নিয়ন্ত্রণ করেছেন পেছন থেকে। অনেকটাই পর্দার আড়ালে অক্লান্তভাবে নিজের কাজ করে যাওয়ার গুণপনাটুকুই তাঁকে আজ তুলে আনল এতটা সামনে। অন্য অর্থে সবার ওপরে।
রদ্রির হাতে ব্যালন ডি’অর দেখে পেপ গার্দিওলাও নিশ্চয়ই একগাল হেসেছেন। গত মৌসুমে সিটির হয়ে ম্যাচের পর ম্যাচ রক্ষণ ও আক্রমণের মাঝে সূত্রধরের ভূমিকায় ছিলেন রদ্রি। স্পেনের হয়েও তা–ই। যতক্ষণ মাঠে ছিলেন, দেখে মনে হয়েছে নিষ্ঠা ও বুদ্ধিমত্তার মিশ্রণে তৈরি কোনো ‘মেশিন’—যে ব্যাকলাইন থেকে আক্রমণ তৈরি করে আক্রমণেও ওঠে এবং বল হারালেও প্রতিপক্ষের চেয়ে দ্রুতগতিতে রক্ষণে নামতে এবং বল কেড়ে আবারও ফিরে যায় শুরুতে—আক্রমণ তৈরি! গত মৌসুমে ম্যাচের পর ম্যাচ পৃথিবী দেখেছে এই রদ্রিকে। তাতে গত মৌসুমে টানা চতুর্থবারের মতো লিগও জিতেছে সিটি। শুধু তা–ই নয়, ইউরোপিয়ান সুপার কাপ, ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপাও অন্য কেউ নিতে পারেনি।
ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হয়েও পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফুটবল লিগে ১৭টি গোলে (৮ গোল ও ৯ অ্যাসিস্ট) সরাসরি অবদান যাঁর, তাঁকে আপনার পছন্দ না-ই হতে পারে; কিন্তু অস্বীকার করতে পারবেন না। ঠিক যেভাবে পরিসংখ্যান দেখেও অস্বীকার করা যায় না, গত মৌসুমে ভিনিসিয়ুস রিয়ালকে চ্যাম্পিয়নস লিগ ও লা লিগা জেতাতে বড় ভূমিকা রাখলেও ফুটবল-মস্তিষ্ক বলবে রদ্রির নাম। ভিনিসিয়ুসের ফরোয়ার্ড হয়ে যেখানে ৪৯ ম্যাচে ২৬ গোল, রদ্রির সেখানে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হয়ে ৬৩ ম্যাচে ১২ গোল। এই গোলগুলোর সময় ও প্রয়োজন স্পেন ও সিটির জন্য কেমন এবং কতটা ছিল, জিজ্ঞেস করতে পারেন দে লা ফুয়েন্তে ও গার্দিওলা। একজন তো ব্যালন ডি’অর আগেই দিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন, আরেকজনের (গার্দিওলা) চোখে এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডার।