Last Updated on 2 weeks by zajira news
অনলাইন ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: রাজধানীসহ সারা দেশে হঠাৎ করেই চুরি, ছিনতাই-ডাকাতি বেড়ে গেছে। শিক্ষার্থী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নানা পরিচয়ে বাড়িতে ঢুকছে ডাকাত দল।
সর্বশেষ বুধবার রাতে ধানমন্ডির একটি বাড়িতে ঢুকে একদল ডাকাত। যদিও সেনাবাহিনী ও পুলিশের তত্পরতায় ১৩ জন গ্রেফতার হয়েছে। আরো চার-পাঁচ জন পালিয়ে গেছে। কয়েক দিন আগে যৌথ বাহিনী পরিচয়ে মোহাম্মদপুরের একটি বাড়িতে ঢুকে ৬০ ভরি স্বর্ণ ৭৫ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতি করতে গিয়ে খুনের ঘটনাও ঘটেছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে ডাকাতি বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যেকটি বাড়িতে লাঠি সংগ্রহে রাখতে বলেছে ধানমন্ডি সোসাইটি।
অনেক এলাকায় পুলিশকে বারবার ফোন করা হলেও ঠিকভাবে সাড়া দিচ্ছে বলে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। কেন পুলিশ সাড়া দিচ্ছে না? জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মইনুল হাসান বলেন, ‘ফোন করার পরও পুলিশ সাড়া দেয়নি এমন সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ইতিমধ্যে টহল বাড়িয়েছি। কিছু যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো পূরণ করা হচ্ছে। তবে কোনোভাবেই শৈথিল্য মেনে নেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে চেকপোস্টও বাড়ানো হয়েছে। কয়েক দিন আগে দুর্গাপূজায় পুলিশের নিরবচ্ছিন্ন তদারকির কারণে রাজধানীতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। প্রত্যেকটি ঘটনায় তদন্ত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে, আসামিও ধরা হচ্ছে।’
যৌথবাহিনী সূত্র জানা গেছে, গত বুধবার রাত ১০টার দিকে ধানমন্ডির ১৩ নম্বর সড়কের ১৩/এ নম্বর বাড়িতে আসে কিছু যুবক। তারা নিজেদের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এ সময় তারা বাড়ির ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। এ সময় তারা বাড়ির কেয়ারটেকার আব্দুল মান্নানকে মারধর করে। আশপাশের বাড়ির লোকজন বিষয়টি বুঝতে পেরে ধানমন্ডি থানায় ফোন করে। কিন্তু প্রথমদিকে পুলিশ সাড়া দেয়নি। পরে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে খবর দেওয়া হলে সেনাসদস্যরা সেখানে হাজির হন। এ সময় বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়া ১৩ জনকে সেনাসদস্যরা আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
ধানমন্ডি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের এক জন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘ডাকাতির খবর পাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে সেনাবাহিনী টহল টিম সেখানে পৌঁছে। বাড়ির ভেতরে থাকা ডাকাতদের গ্রেফতার করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রত্যেকটি বাড়িতে আমাদের ক্যাম্পের নম্বর দেওয়া আছে, কোনো ধরনের ঘটনা আঁচ করতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ফোন করতে বলা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা আমাদের নম্বর খোলা।’
এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় কেয়ারটেকার আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ঐ মামলায় ধরা পড়া ১৩ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলাটির তদন্ত করছেন থানার এসআই সাবরিন হায়দার শুভ। তিনি বলেন, ‘খবর পেয়ে পাশের ক্যাম্প থেকে পুলিশ সেখানে গিয়ে বাড়ির গেট বন্ধ করে দেয়। এ কারণে ডাকাতরা বের হতে পারেনি। পরে আরো পুলিশ সেখানে যায়, সেনাসদস্যরাও তখন সেখানে আসে। পুলিশ সাড়া দেয়নি এমন অভিযোগ ঠিক নয়।’
গ্রেফতারকৃতদের ব্যাপারে সাবরিন হায়দার শুভ বলেন, ‘তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মনে হয়েছে, এরা পেশাদার ডাকাত নয়। এরা নব্য ডাকাত। সুযোগ বুঝে ডাকাতি করতে গেছে। এদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো থানায় মামলার তথ্য পাওয়া যায়নি।’
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ধানমন্ডি সোসাইটি বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। সোসাইটির এক বার্তায় বলা হয়েছে, পটপরিবর্তনের পর দেশব্যাপী চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি বহুমাত্রায় বেড়ে গেছে। সম্প্রতি মোহাম্মদপুর ও বুধবার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল হানা দেয়। এ পরিস্থিতিতে ধানমন্ডিবাসীকে সতর্ক থেকে এবং অন্যান্য ফ্ল্যাট ও পার্শ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দাদের সঙ্গে সৌহার্দমূলক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে এদের প্রতিহত করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও লাঠিসোঁটা সংগ্রহে রাখুন, প্রতিবেশীর মোবাইল ফোন নম্বর রাখুন। এরা বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার বেশে কখনো আদমশুমারির লোক, কখনো টিকা বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লোক পরিচয় দিয়ে বাসাবাড়িতে ঢুকে ডাকাতি সংঘটিত করছে। যে কোনো পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ধানমন্ডি সোসাইটির নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
ধানমন্ডি সোসাইটির সিকিউরিটি ইনচার্জ জামাল হোসেন খন্দকার বলেন, ‘আমাদের এক জন সিকিউরিটি বুধবার রাতের বিষয়টি প্রথমে বুঝতে পারে। আমরাই তখন পুলিশকে ফোন দিয়েছিলাম। আমাদের সিকিউরিটি গার্ডরা প্রত্যেকটি রাস্তায় আছেন। কোথাও কিছু অসামঞ্জস্য দেখলে আমরা পুলিশকে জানাই।’
এদিকে গত বুধবার জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা একটি গ্রামে সাদা পোশাকে পুলিশ পরিচয়ে বাড়িতে ঢুকে ঘর তল্লাশি করার নামে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করা হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, বেলা দেড়টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে করে চার জন জাকারিয়ার বাড়ির ফটকের কাছে আসেন। অপরিচিত ঐ ব্যক্তিরা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে জাকারিয়ার বাড়ির ভেতরে ঢোকেন। তাদের কাছে হাতকড়া ও রিভলবার ছিল। জাকারিয়ার ঘরে মাদক আছে বলে তারা তল্লাশি করতে চান। এ সময় তারা জাকারিয়ার ও তার পরিবারের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সবাইকে বাড়ির ভেতর এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে রাখেন। সেখানে এক জন তাদের পাহারা দিচ্ছিলেন। ২০-২৫ মিনিট পর তারা ঘর থেকে বেরিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। জাকারিয়া ও তার পরিবারের লোকজন ঘরে ঢুকে আলমারির ড্রয়ার খোলা দেখতে পান। ড্রয়ারের ভেতরে টাকা ও স্বর্ণালংকার নেই। এরপর তারা পুলিশে খবর দেন।
এর চার দিন আগে গত রবিবার দুপুরে মিরপুর ডিওএইচএসে ফরাহ দিবা (৬০) নামে এক বৃদ্ধাকে হত্যার পর নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। মিরপুর ডিওএইচএসের একটি ভবনের তৃতীয় তলার নিজ ফ্ল্যাটে স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে থাকতেন ঐ নারী। দুপুরের দিকে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। ঐ সময় বাসায় কেউ ছিল না। পরে পরিবারের সদস্যরা বাসায় এসে তার মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ জানায়, ঐ ফ্ল্যাট থেকে নগদ প্রায় দেড় লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে বাড়ির কেয়ারটেকার ও তাদের গাড়িচালক পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এর বাইরে গত ১৮ অক্টোবর ঢাকার দোহারে একটি বিয়েবাড়িতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি হয়েছে। বাড়ির মালিকের দাবি, প্রায় ২০ ভরি স্বর্ণালংকার, টাকাসহ মোট ২৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করেছে ডাকাতরা। গত ২০ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দৌলতদিয়াড়ে অঞ্জলি রানী বিশ্বাস (৫৫) নামে এক নারীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, দুর্বৃত্তরা বাড়িতে ঢুকে অঞ্জলিকে গলা কেটে হত্যার পর নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার লুট করে পালিয়ে যায়। শুধু বাড়িতে নয়, রাস্তায় ডাকাতিও বেড়েছে।
নরসিংদীতে বিদেশফেরত যাত্রীবাহী একটি প্রাইভেট কারে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাত দল গাড়িতে থাকা যাত্রীর কাছ থেকে টাকা, স্বর্ণালংকার ও পাসপোর্ট নিয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে শহিদ মিনার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া রাজধানীতেও গত দুই সপ্তাহে বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। সূত্র, দৈনিক ইত্তেফাক