সময়ের জনমাধ্যম

ইলেক্টরাল কলেজ কী? মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বেশি ভোট পেয়েও যেভাবে হেরে যান প্রার্থী!

Last Updated on 2 weeks by zajira news

অনলাইন ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত দুই প্রার্থী।

এটি এমন এক নির্বাচন যেখানে বেশি ভোট পেয়েও প্রার্থী হেরে যেতে পারেন। কিন্তু কীভাবে?

এর বড় কারণ, মার্কিন নির্বাচনে ভোটাররা সরাসরি প্রেসিডেন্টকে নির্বাচন করেন না। এক্ষেত্রে ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ নামে এক পদ্ধতি রয়েছে। এর মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে থাকে। ফলে এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী হওয়ার প্রক্রিয়া বেশ জটিল।

বেশি সংখ্যক ভোটে নয়, বরং মার্কিন প্রেসিডেন্ট কে হবেন, তা নির্ধারণ হয় এই ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ভোটের মাধ্যমে। ইলেকটোরাল কলেজ নামের ব্যবস্থায় ৫৩৮ জন ইলেকটর নির্বাচিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন- মূলত তারাই চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করেন।

ইলেকটোরাল কলেজে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের নির্দিষ্টসংখ্যক প্রতিনিধি থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উভয় কক্ষ মিলিয়ে রাজ্যটির যত প্রতিনিধি, সেটাই হলো তার ইলেকটরদের সংখ্যা।

হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসে (কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ) একটি রাজ্যের প্রতিনিধি সংখ্যা নির্ভর করে রাজ্যটির জনসংখ্যার ওপর। অপর দিকে সিনেটে প্রতি রাজ্যের দুটি করে আসন থাকে। সব মিলিয়ে ৫০টি রাজ্যের ৪৩৫ জন রিপ্রেজেন্টেটেটিভ ও সেই সঙ্গে ১০০ জন সিনেটর। এ ছাড়া ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার তিনজন ইলেকটর। সব মিলিয়ে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। জনসংখ্যার দিক থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় সবচেয়ে বেশি ৫৪টি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে। অপর দিকে ভারমন্টের সর্বসাকল্য তিনটি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে।

নির্বাচনে জিততে হলে কোনও প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে সংখ্যাগরিষ্ঠ বা অন্তত ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হয়।

মেইন আর নেব্রাস্কা ছাড়া বাকি অঙ্গরাজ্যগুলোতে ‘উইনার টেকস অল’ ভিত্তিতে ইলেকটোরাল ভোট নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ কোনও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী যে রাজ্যে এগিয়ে থাকবেন, তিনি সেই রাজ্যের সব ক’জন ইলেকটরের সমর্থন পেয়ে থাকেন।

২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে ভোটারদের পক্ষ থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। বরং ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে সেবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ট্রাম্প।

‘কলেজ’ শব্দটির অর্থ এখানে সেই ব্যক্তিদের বোঝানো হয়, যারা একটি অঙ্গরাজ্যের ভোট দেওয়ার অধিকারী। ইলেকটোরাল কলেজ হচ্ছে কর্মকর্তাদের একটি প্যানেল, যাদের ইলেকটরস বলা হয়। প্রতি চার বছর পর পর এটি গঠন করা হয়। তারাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে বাছাই করেন।

ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি অনুযায়ী যেসব রাজ্যে জনসংখ্যা বেশি, সেসব রাজ্যে ইলেকটোরাল ভোটও বেশি। এই প্রথা শুধু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্যই ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অন্য সব নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় সরাসরি মানুষের ভোটেই।

১৭৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান লেখা হওয়ার সময় বেশ কিছু জটিলতা দেখা দেয় নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে। বিশালাকার দেশটিতে যোগাযোগের অভাবের ফলে জাতীয় স্তরে সাধারণ মানুষের ভোট নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা কার্যত অসম্ভব ছিল। সংবিধান রচয়িতারা তখন ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।