সময়ের জনমাধ্যম

সিলেটের মুনতাহা হত্যাকাণ্ড নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল পুলিশ

নিখোঁজ শিশু মুনতাহা আক্তারের লাশ রোববার (১০ নভেম্বর) সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা থেকে উদ্ধার করা হয়

Last Updated on 4 days by zajira news

সিলেট প্রতিনিধি, জাজিরা নিউজ: নিখোঁজ হওয়া শিশু মুনতাহা আক্তারের লাশ রোববার (১০ নভেম্বর) সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা থেকে উদ্ধার করা হয়। শিশু মুনতাহা আক্তারকে (৫) অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য ডোবায় পুঁতে রাখা হয়েছিল।

পুলিশ জানায়, নিখোঁজের ছয় দিন পর ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত একজনকে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে। পরে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে ডোবা থেকে লাশ তুলে পুকুরে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

পুলিশ বলছে, এর আগে মুনতাহার বাবা শামীম আহমদ গত শনিবার কানাইঘাট থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপহরণ মামলা করেছিলেন। আটক ব্যক্তিদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলা দায়েরের পর গতকাল রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুনতাহার প্রতিবেশী শামীমা বেগমকে থানায় নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। মুনতাহাকে প্রাইভেট পড়াতেন শামীমা। তবে সম্প্রতি মুনতাহার বাবা শামীমার কাছে মেয়েকে পড়াতে পাঠাননি। শামীমাকে আটকের পরই মুনতাহা নিখোঁজের ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। আজ রোববার ভোররাতে শামীমার মা ডোবা থেকে শিশু মুনতাহার লাশ নিয়ে পুকুরে ফেলতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন।

ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। তাঁরা হলেন মুনতাহার প্রতিবেশী কানাইঘাট সদরের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীমা বেগম ওরফে মর্জিনা, তাঁর মা আলিফজান বেগম, প্রতিবেশী নাজমা বেগম ও ইসলাম উদ্দিন। আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে। তবে তাঁদের নাম–পরিচয় জানায়নি পুলিশ।

নিহত মুনতাহা কানাইঘাট সদরের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে।

শিশু মুনতাহার নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা চলছিল। শিশুটি উদ্ধারে পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল পরিবার। এর মধ্যে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩ নভেম্বর থেকে শিশুটি নিখোঁজ ছিল।

আজ দুপুরে শিশু মুনতাহার মরদেহ সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মুনতাহার চাচা কয়ছর আহমদ বলেন, যাঁদের আটক করা হয়েছে তাঁরা সবাই প্রতিবেশী। মুনতাহার বাবা আগে সৌদিপ্রবাসী ছিলেন। কয়েক বছর আগে দেশে ফিরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালান। তাঁর পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। মুনতাহা তাঁর পঞ্চম সন্তান। কারও সঙ্গে তাঁর ভাইয়ের বিরোধ নেই। তবে শামীমার কাছে প্রাইভেট পড়াতে না দেওয়ার ক্ষোভ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে তাঁর ধারণা।
সিলেটের সহকারী পুলিশ সুপার (কানাইঘাট সার্কেল) অলক কান্তি শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, নিহত শিশু মুনতাহার বাবার দায়ের করা অপহরণ মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁদের আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন।

৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফিরে প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে খেলতে গিয়েছিল মুনতাহা। কিন্তু বিকেল হলেও বাড়িতে না ফেরায় খোঁজ নিতে গিয়ে মুনতাহার আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। শিশুটি নিখোঁজের পর থেকে পরিবার দাবি করে আসছিল, পরিকল্পিতভাবে তাকে ‘অপহরণ’ করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, লাশ উদ্ধারের সময় শিশু মুনতাহার শরীরে কাদা লেগে ছিল। গলায় রশিজাতীয় কিছু পেঁচানো ছিল। এতে সন্দেহ করা হচ্ছে, শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়েছে।