Last Updated on 1 month by zajira news
নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: বায়ুদূষণের মাত্রা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিদিনই কোনো না কোনো কারণে বেড়ে চলেছে ।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারতের কলকাতা শহর। এদিন সকাল ৯টার দিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার থেকে এ তথ্য জানা যায়। বায়ু দূষণের তালিকায় শীর্ষে থাকা কলকাতা শহরের স্কোর ৩৪৬। অর্থাৎ এখানকার বাতাসের মান নাগরিকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
পাশাপাশি তালিকায় দুই নম্বরে ২৪৩ স্কোর নিয়ে আছে ঢাকা। অর্থাৎ এখানকার বাতাসের মান নাগরিকদের জন্য খুব অস্বাস্থ্যকর। এছাড়া ২১৫ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি শহর।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ পর্যন্ত স্কোর মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। অন্যদিকে, স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলে মনে করা হয়। পাশাপাশি ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।
এছাড়া ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকা একিউআই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা নগরের বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। সাধারণত একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি ধরনকে ভিত্তি করে। যেমন: বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন (ও৩)।
বায়ু দূষণে স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের কার্য নির্বাহী সভাপতি এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বায়ু দূষিত হলে শ্বাসতন্ত্রীয় রোগ বেড়ে যায়, যেমন হাঁচি, কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসের টান, যক্ষ্মা হয়। এর বাইরেও স্নায়ুতন্ত্রের রোগ হয় অর্থাৎ মেজাজ খিটখিটে, ঘুম কম, উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায়, হার্টের অসুখ হয়, পৃথিবীতে যত মানুষের হার্ট এটাকে হয়, তার চারভাগের এক ভাগ দূষিত বায়ুর কারণে হয়।
তিনি আরও বলেন, যেসব পদার্থ দ্বারা বায়ু দূষণ হয়, তার মধ্যে কিছু পদার্থ দ্বারা ছেলে মেয়ের সন্তান জন্মদান ক্ষমতা কমে যায়। ফুসফুসের ক্যানসার বেড়ে যায়। বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা নিশ্বাসের মাধ্যমে রক্তে মিশে গিয়ে লিভার, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করে। এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদে নানা শারীরিক অসুস্থতা তৈরি করে। দূষিত বাতাসে এতসব ক্ষতিকর পদার্থ থাকে মানুষের প্রতিটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং মানুষের গড় আয়ুও কমে যায়।
বায়ু দূষণের ক্ষতির মাত্রা উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, কতটা বিষাক্ত বায়ু আমরা গ্রহণ করছি, তা ভেবে আমি আতঙ্কিত। এই বিষাক্ত বায়ু আমাদের ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুকি তৈরি করছে। বর্তমানে বায়ু দূষণের যে মাত্রা তাতে এটাকে দুর্যোগ ঘোষণা করা উচিৎ। দিল্লির মতো আমাদের স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা উচিৎ।
তিনি আরও বলেন, বায়ুদূষণকে গায়ের জোড়ে উপেক্ষা করলেও এর পরিণতি থেকে আমাদের মুক্তি নেই। বায়ু দূষণ রোধে বড় ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কঠোর আইন করা দরকার। রাজধানীতে যে কোন ধরনের কর্মকাণ্ড হোক না কেনো, সেখান থেকে কোনও দূষণ যেন বায়ুতে না মিশে, সেই জন্যে যা যা করণীয় তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। দূষণ কমাতে একটি গাইডলাইন তৈরি করে, সেটা মনিটরিংয়ের জন্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে।