Last Updated on 6 months by zajira news
নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: প্রতি বছর শীতের মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায় সরিষা ফুলের মহাসমারহ । হলদে সরিষা ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতেই হয়। কুয়াশা ও ঝলমলে রোদের খেলারে সঙ্গে সরিষার ফুল যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় । প্রতিবছরের মতো এবারও সিরাজগঞ্জের তাড়াশ চলনবিল অধ্যুষিত বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সরিষার চাষ হয়েছে।
এসব এলাকায় প্রতিদিনই সরিষা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে অসংখ্য প্রকৃতি প্রেমী নারী পুরুষ ও শিশুরা সরিষার মাঠে ছবি তুলতে আসছেন। নানাসাজে, নানা আঙ্গিকে ছবি ও ভিডিও করছেন অনেকে। শুধু তাই নয় ভিডিও কন্টেন্ট বানাতে দলে দলে আসছেন টিকটকার-ইউটিউবাররা।
অনেকে সরিষার মাঠে দাঁড়িয়ে ভিডিও করে সেটি আবার স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন। কেউবা ভালবাসার মানুষটির খোঁপায় গুজে দিচ্ছেন হলুদ সরিষার ফুল। এতে সমস্যায় পড়েছেন এসব সরিষা জমির মালিকেরা। সৌখিন লোকজনের দল বেধে সরিষার জমিতে যাতায়াত, দাঁড়িয়ে বা বসে ছবি তোলা এসব কারণে সরিষা গাছ গুলো পদদলিত হয়ে নষ্ট হচ্ছে।
এসব কারণে সরিষা ক্ষেতের জমির মালিকেরা এসব কাজ না করতে বাধ্য হয়েই বাধা দিচ্ছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! তাই অনেক জমির মালিক ফসল বাঁচাতে জমির মাঝে প্রবেশ না করতে বা ছবি না তোলার জন্য সাইন বোর্ড লাগিয়ে দিয়েছেন। কেউবা নিরুপায় হয়ে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে জমির সরিষা পাহারা দিচ্ছেন।
মাকোরশোন গ্রামের সরিষা চাষি আলম হোসেন বলেন, দর্শনার্থীদের জালায় বিরক্ত হয়ে জমিতে ছবি না তোলার ব্যাপারে সাইন বোর্ডও ঝুঁলিয়ে দিয়েছি। অন্য বছরের তুলনায় এবার সরিষা ফুলের মধ্যে ছবি তোলা সৌখিন সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে।
উপজেলার মাগুরা বিনোদ, কুন্দইল, মাকোড়শন, কামারশোন, দিঘী সগুনা অঞ্চলে দর্শনার্থীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। উপজেলার দিঘী সগুনা গ্রামের সরিষা চাষি আব্দুল সালাম জানান, তার সরিষার জমিতে দর্শনার্থীরা ছবি তোলার জন্য যে হারে নামছে তাতে প্রচুর সরিষার গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে সরিষার জমিতে দল বেঁধে যাতায়াত করলে এক মুঠো সরিষাও ঘরে উঠবে বলে মনে হয় না।
জমিতে প্রবেশ না করে বাইরে থেকে ছবি তোলার কথা বললেও তা মানছেন না কৌতুহলী দর্শনার্থীরা। বাধ্য হয়ে লাঠি নিয়ে সরিষার জমি পাহারা দেওয়া শুরু করেছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা জানান, সরিষার জমির পাশ থেকে ইচ্ছে মত ছবি তোলা যায় না। তাই তাদেরকে সরিষার জমির মাঝে গিয়ে দাঁড়াতে হয়। এতে কিছু সরিষা অবশ্যই নষ্ট হয় বলে তারা স্বীকারও করেন।
প্রতি বছরই তারা চলনবিল অধ্যুষিত এলাকায় সরিষা মাঠে ছবি তুলতে আসেন। কিন্তু দিনের বেলা লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে সরিষার জমি পাহারা দেবার দৃশ্য এবারই প্রথম তাদের চোখে পড়চ্ছে!
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আসলে এ বছর চলনবিল অধ্যুষিত এলাকায় সরিষা ফুল দেখতে প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী ভিড় করছেন। বেশির ভাগ ছেলে মেয়ে জমিতে গিয়ে নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছেন। আবার কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরিষা ফুলের সৌন্দর্য লাইভ দেখাচ্ছেন।
এতে সরিষার কিছু ক্ষতি হচ্ছে। তবে তিনি দর্শনার্থীদের কৃষকদের বিষয়টিকে মাথায় রেখে সচেতনভাবে সরিষা মাঠের আইলে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য আহবান জানান।
এছাড়া সরিষা ক্ষেতের পাশে মানুষের ভিড় দেখে মধু সংগ্রহকারী মৌমাছি ভয়ে পালিয়ে যায়। এর ফলে সরিষার পরাগায়নে বাঁধা পরছে এবং ফলন ও মধুর পরিমান কমে যাবে।