Last Updated on 3 weeks by zajira news
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অভিষেক অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে। গত নভেম্বরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এক অবিস্মরণীয় জয় নিয়ে হোয়াইট হাউজের বাসিন্দা হতে যাচ্ছেন তিনি। আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্টের এই দ্বিতীয় মেয়াদকালে তার প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনয়ন করা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের মন্ত্রিসভায়, হোয়াইট হাউজ ও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের যাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, এখানে তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো :
১. সুসি উইলিস : তার প্রশাসনের প্রথম কর্মী হিসেবে তিনি তার নির্বাচনি প্রচার শিবিরের সহ-ব্যবস্থাপক সুসান সামারল উইলিসকে (সুসি উইলিস) বেছে নেন। সুসি উইলিস হোয়াইট হাউজের প্রথম নারী চিফ অব স্টাফ। রাজনীতিতে কাজ শুরু করার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তিনি ১৯৮০ সালে রোনাল্ড রেগানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানে ছিলেন। ২০১৫ সালের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনয়নের সময় ট্রাম্পের সঙ্গে উইলিস দেখা করেন এবং ট্রাম্পের ফ্লোরিডা প্রচারে কো—চেয়ার হন। সেই সময় ফ্লোরিডাকে দোদুল্যমান রাজ্য হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
২. রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র : সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাতিজা রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র পেশায় পরিবেশবাদী আইনজীবী। তিনি প্রথমে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার দিকে মনোযোগে দেন, তবে নানা বিতর্কের মধ্যে ভোটের দৌড় থেকে ছিটকে পড়েন এবং ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। নির্বাচনের আগে শেষ দুই মাসে তিনি ‘মেইক আমেরিকা হেলদি এগেইন’ নামে ট্রাম্পের একটি প্রচার উদ্যোগে নেতৃত্ব দেন। কেনেডি জুনিয়র রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) এবং খাদ্য ও ওষুধ সুরক্ষা প্রশাসনের (এফডিএ) মতো জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত সংস্থার সঙ্গে বড় ভূমিকা পালন করবেন।
৩. ইলন মাস্ক : বিশ্বের সবচেয়ে এ ধনী ব্যক্তি চলতি বছরের শুরুতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষে তার সমর্থন ঘোষণা করেন। ভোটে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আমেরিকা পিএসিকে তিনি ১১৯ মিলিয়নের বেশি ডলার অনুদান দেন। টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স’র মালিক মাস্ক ভোটের প্রচারের শেষ সময়ে দৈবচয়ন ভিত্তিতে দোদুল্যমান রাজ্যের ভোটারদের প্রতিদিন ১ মিলিয়ন ডলার দিয়েছেন। তিনি অবৈধ অভিবাসন এবং ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকারের মতো বিষয়ে সোচ্চার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রশাসনে ইলন মাস্ককে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ বিভাগের সহ—প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই বিভাগের মূল লক্ষ্য হলো সরকারি আমলাতন্ত্র হ্রাস, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গঠন করে তাদের আরো কার্যকর ও দক্ষ করে তোলা। মাস্কের প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং সরকারি কার্যক্রমে দক্ষতা আনার অভিজ্ঞতা তাকে এই পদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি সরকারি ব্যয় হ্রাস এবং সংস্থাগুলোর পুনর্গঠনে মনোযোগ দেবেন, যা ট্রাম্প প্রশাসনের ‘সেইভ আমেরিকা’ উদ্যোগের অংশ।
৪. মার্ক রুবিও : তিনি ট্রাম্প প্রশাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছেন। তিনি সিনেটের ফরেন রিলেশন্স কমিটির সদস্য। একইসঙ্গে সিনেট ইনটেলিজেন্স কমিটির রিপাবলিকান নেতা। ৫৩ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ ফ্লোরিডা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
৫. স্কট বেসেন্ট : তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি কে স্কোয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বিশ্বের অন্যতম বড় বিনিয়োগকারী। তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন করেছেন। তিনি একজন ভূ—রাজনীতি ও অর্থনৈতিক কৌশলবিদ।
৬. পিট হেগসেথ : তিনি দায়িত্ব পালন করবেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে। তিনি ফক্স নিউজের সাবেক উপস্থাপক। তিনি ‘আমেরিকা ফাস্টর্‘ নীতিতে বিশ্ববাসী। তিনি ইরাক, আফগানিস্তান ও গুয়ানতানামো উপসাগরে মার্কিন সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন। তিনি গ্রন্থরচয়িতাও বটে।
৭. পাম বন্ডি : তিনি ট্রাম্প প্রশাসনে অ্যাটর্নি জেনারেলের ভূমিকায় থাকবেন। তিনি ফ্লোরিডার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তাকে ইমপিচমেন্ট করার ট্রায়ালে তার পক্ষে লড়াই করেন। তিনি ট্রাম্পের মিত্রদের সঙ্গে ‘আমেরিকা ফাস্টর্ পলিসি ইনস্টিটিউট‘ নামক থিংক ট্যাংকে কাজ করেছেন।
এশীয় বংশোদ্ভূত যারা আছেন,
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রশাসনে বেশ কয়েকজন এশীয় বংশোদ্ভূত কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন :
৮. শ্রীরাম কৃষ্ণান : ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান উদ্যোক্তা শ্রীরাম কৃষ্ণানকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি মাইক্রোসফট, টুইটার, ইয়াহু এবং ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন।
৯. কাশ প্যাটেল : ‘কাশ’ প্যাটেলকে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)—এর পরিচালক পদে মনোনীত করেছেন ট্রাম্প। তিনি নিউইয়র্ক থেকে আইন ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে আন্তর্জাতিক আইনে সনদপ্রাপ্ত। কাশ প্যাটেল ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ও অনুগত হিসেবে পরিচিত।
১০. হারমিত কে ধিলোঁ : মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী হারমিত কে ধিলেঁাকে মানবাধিকারসংক্রান্ত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের পদে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বহু বিখ্যাত মামলা পরিচালনা করেছেন।
১১. উষা চিলুকুরি ভেন্স : উষা চিলুকুরি ভেন্সকে সেকেন্ড লেডি অব আমেরিকা হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভেন্সের স্ত্রী এবং অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা। উষা ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত।
১২. ডা. জয় ভট্টাচার্য : কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী ডা. জয় ভট্টাচার্যকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (NIH)—এর পরিচালক পদে মনোনীত করা হয়েছে। তিনি সায়েন্টিফিক এবং হেলথকেয়ার লিডারশিপে ভারতীয়—আমেরিকানদের গুরুত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছেন।
১৩. বিবেক রামস্বামী : বিবেক রামস্বামীকে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সির সর্বোচ্চ পদে বসানো হচ্ছে। তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচিত।
১৪. তুলসি গ্যাবার্ড : সাবেক কংগ্রেসওম্যান এবং ২০২০ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রার্থী তুলসি গ্যাবার্ডকে ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স (DNI)—এর পরিচালক করা হয়েছে। তিনি হাওয়াই থেকে নির্বাচিত প্রথম হিন্দু কংগ্রেসওম্যান।
এছাড়া ডগ বারগাম ইনটেরিয়র মন্ত্রী, ব্রুক রুলিনস কৃষিমন্ত্রী, হাওয়ার্ড লুটনিক বাণিজ্যমন্ত্রী, লরি শ্যাভেজ ডেরিমার শ্রমমন্ত্রী, স্কট টার্নার গৃহায়ন ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী, সিন ডাফি পরিবহণমন্ত্রী, ক্রিস রাইট জ্বালানিমন্ত্রী, লিন্ডা ম্যাকমোহন শিক্ষামন্ত্রী ও ক্রিস্টি নইম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
অবশ্য এখানে সবার নাম উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া যাদের কথা বলা হলো তারা ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ঘোষিত হলেও তাদের নাম সিনেট কর্তৃক এখনো অনুমোদিত ও চূড়ান্ত নয়।