Last Updated on 1 month by zajira news
ফরিদপুর প্রতিনিধি, জাজিরা নিউজ: ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শুনে বিলাপ করছিলেন ইতালি যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত রাসেলের মা লিপিয়া বেগম। বাড়িতে পরিবারের সদস্য ছাড়াও আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সবাই কাঁদছেন।
একই চিত্র প্রতিবেশী মিন্টু হাওলাদারের বাড়িতে। ছেলে হৃদয়কে হারিয়ে মা বিলকিস বেগম বিলাপ করছেন। হৃদয়ের বাবা মিন্টু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, দালালদের বিচার চাই। আর কোনো বাপ-মা এভাবে যেন তার সন্তানকে না হারান।
ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের কুমারখালী গ্রামের দুই যুবক লিবিয়া হয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার সময় দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিকালে ওই দুই যুবকের অভিভাবকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের সন্তানের গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পান। এর পর দুই বাড়িতে চলছে স্বজনের আহাজারি । গতকালও স্থানীয় শত শত লোক দুই বাড়িতে ভিড় করছেন।
এই দুই যুবক হলেন কুমারখালী গ্রামের মিন্টু হাওলাদারের ছেলে হৃদয় হাওলাদার (২২) ও মজিবর হাওলাদারের ছেলে আকাশ হাওলাদার ওরফে রাসেল (২২)। শুক্রবার সন্ধ্যায় এলাকার শতাধিক লোক দালাল চক্রের বিচার দাবিতে মিছিল করেছেন।
মজিবর বলেন, গত ২৩ নভেম্বর তার ছেলে আকাশ ও প্রতিবেশী মিন্টুর ছেলে হৃদয় দালাল চক্রের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে রওনা হয়। প্রথমে ঢাকা থেকে দুবাই যায়। এর পর সেখান থেকে মিসর হয়ে লিবিয়া যায়। লিবিয়া হয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির উদ্দেশে তারা রওনা হয়েছে বলে ২৪ জানুয়ারি দালাল চক্র জানায়। দুই চার ঘণ্টায় ইতালি পৌঁছে যাবে বলেও জানায়। এর পর গত ২-৩ দিন ধরে দালাল চক্র আমাদের জানায়, ওরা হাসপাতালে। কখনো জানায়, ওরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। শুক্রবার বিকালে আমাদের ফোনে ছবি আসে। ছবিতে একটি সাগরপাড়ে ওদের গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পাই। দালাল চক্র আমাদের কাছ থেকে সাড়ে ১৬ লাখ করে ৩৩ লাখ টাকা নিয়েছে। এই চক্রই আমাদের ছেলেদের হত্যা করেছে।
সন্তান হারানো মিন্টু ও মজিবর অভিযোগ করে বলেন, কুমারখালী গ্রামের আবু তারা মাতুব্বর ও তার ছোট ভাই আনোয়ার মাতুব্বর হচ্ছে দালাল। তারা আমাদের কাছ থেকে ৩৩ লাখ টাকা নিয়েছে।
ওই গ্রামের ফয়সাল হোসেন বলেন, শুধু হৃদয় নয় রাসেল নামের আরো একজনকেও লিবিয়াতে হত্যা করা হয়েছে। ওই মানবপাচার চক্র এভাবে মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায় করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। টাকা না দিলেই তাদের সঙ্গে খারাপ কিছু ঘটানো হয়। কখনো অত্যাচার কখনো প্রাণে মেরে ফেলে ওরা।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকসেদুর রহমান বলেন, ভাঙ্গার দুটি ছেলেকে লিবিয়ায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দালালচক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।