সময়ের জনমাধ্যম

গণমাধ্যমে ‘ভুয়া খবর সরানোর’ হিসাব: সমালোচনার মুখে যা বললেন গবেষক

এই স্লাইড শনিবার বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক অপত্যথ্যের গতি-প্রকৃতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে দেখানো হয়। ছবি- সংগৃহিত

Last Updated on 1 week by zajira news

অনলাইন ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: গণমাধ্যমে অপতথ্য ছড়িয়ে সেটা প্রত্যাহারের তথ্য দিয়ে সমালোচনার মুখে নিজের অবস্থান বদলেছেন গবেষক মামুন-উর-রশীদ।

হারিয়ে যাওয়া বা সরিয়ে ফেলা লিংকগুলোকে আগে ‘ভুয়া খবর’ হিসাবে চিহ্নিত করা হলেও এখন তিনি বলছেন, সেই সংখ্যার সবগুলো ভুয়া খবর বা অপতথ্য নাও হতে পারে। আবার প্রত্যাহার হয়নি এমন খবরও ‘অপতথ্য’ হিসাবে ওই তালিকায় থাকার কথা বলছেন মামুন-অর-রশিদ, যিনি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ (ইবিএলআইসিটি) প্রকল্পের একজন পরামর্শক।

তিনি বলেছেন, “গবেষণাটি এখনও চলমান। প্রাথমিক রিপোর্ট শিগগিরই প্রকাশ করা হবে এবং এ-বিষয়ে দীর্ঘ মেয়াদি গবেষণাও চলমান।”

শনিবার বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক অপত্যথ্যের গতি-প্রকৃতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে চলমান একটি গবেষণায় পাওয়া তথ্য উপস্থাপন করেন মামুন।

ওই অনুষ্ঠানে ‘Mis-Dis-Mal information in Mainstream Media’ শিরোনামের উপস্থাপনায় একটি স্লাইডে বলা হয়, “লেখচিত্রে দেখা যাচ্ছে, ভুয়া খবর প্রকাশ করে তা প্রত্যাহারে শীর্ষে রয়েছে প্রথম আলো, যেই সংখ্যা ১২১টি। তারপরে রয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, যুগান্তর ও সমকাল।”

কিন্তু একই স্লাইডে যে লেখচিত্র উপস্থাপন করা হয়, সেখানে দ্বিতীয় অবস্থানে কালবেলা, তৃতীয় ইত্তেফাক ও চতুর্থ অবস্থানে যুগান্তরকে দেখানো হয়। ওই প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে খবর প্রকাশের পর গবেষণার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এরপর রোববার এ বিষয়ে একটি দীর্ঘ ব্যাখ্যা দেয় পিআইবি।

পিআইবি বলছে, গবেষণার পর্যবেক্ষণে সংবাদপত্রের ওয়েবসাইটের ৪০৪ বার্তা (404 Page Not Found) কীভাবে প্রত্যাহারকৃত সংবাদের মাধ্যমে ‘অপতথ্য হিসেবে গণ্য হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে’ তা পরীক্ষণ করা হয়েছে।“এই লক্ষ্যে অনলাইনে ক্রল পদ্ধতিতে প্রাপ্ত ৪০৪ লিংক সংগ্রহ করে ডেটাসেট প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে যাচাই করা হয়েছে যে, ৪০৪ বার্তা সমৃদ্ধ প্রত্যাহারকৃত সংবাদের পারমালিংকের গঠনের কারণে অপতথ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না।”

ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়, “এই পর্যবেক্ষণের জন্য বিগডেটা অ্যানালিটিক্স পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেমিনারে উপস্থাপিত হয়েছে মূলত ডেটাসেটের নমুনার একটি অংশ। স্লাইডে উপস্থাপিত সংখ্যা প্রত্যাহারকৃত সংবাদ চিহ্নিত করে, যেগুলোর মধ্যে অপতথ্যও রয়েছে।

“সকল ডেটা অপতথ্য নাও হতে পারে, কিন্তু সবগুলোই প্রত্যাহারকৃত সংবাদের নমুনা পরিসংখ্যান। বক্তব্যে এই ব্যাপারটি উল্লেখ করলেও প্রেজেন্টেশনের স্লাইডের লেখায় তা উল্লেখ করা হয়নি, ফলে কিছু অস্পষ্টতার অবকাশ রয়ে যায়।”

এই পর্যবেক্ষণে পৌঁছানোর পেছনে ‘একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রের তিন লাখ সাতাত্তর হাজার চারশ দশটি আর্টিকেল থেকে প্রত্যাহারকৃত (অথবা পরিবর্তিত) লিংক বের করার’ কথা বলছে পিআইবি।

বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) মিলনায়তনে শনিবার (২৮ জুন) ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক অপত্যথ্যের গতি-প্রকৃতি’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়

সেমিনারে উপস্থাপিত স্লাইডে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রায় ৩০টি ‘ভুয়া খবর’ প্রত্যাহারের তথ্য দেওয়া হয়েছিল। সোমবার গবেষক মামুনের কাছে সেই লিংকগুলো চাইলে তিনি এক্ষেত্রে তিন ধরনের লিংক পাওয়ার তথ্য দেন।

তিনি বলেন, “গবেষণা কর্ম এখনও চলমান এবং ৪০৪ বিষয়ে স্লাইডে যে তথ্য এসেছে সেগুলো প্রত্যাহারকৃত সংবাদ ও অপতথ্য দুটোরই যোগফল বলে বিবেচনা করতে হবে। উপাত্তের তারিখ সীমাবদ্ধ নয়-বলেও বিবেচনা করতে হবে।

“একটি লিংক টেকনিক্যাল কারণে, তথ্যগত কারণে প্রত্যাহার হওয়ায় বা আর্কাইভাল পলিসির কারণে ৪০৪ শো করতে পারে। চলমান গবেষণাটি প্রকাশ করা হলে আশা করছি, বিভ্রান্তির নিরসন হবে।”বিডিনিউজে প্রাথমিকভাবে তিন ধরনের লিংক পাওয়ার কথা তুলে ধরে মামুন-উর-রশিদ বলেন, “টেকনিক্যাল কারণে ৪০৪ দেখাতে পারে: (http://bdnews24.com/bangla/details.php?id=141544&cid=3) যাতে (404 Not Found nginx/1.25.4) দেখায়।

“এই লিংকটি বিডিনিউজের পারমালিংকের সচরাচর গঠনের সঙ্গে মিলে না কিন্তু ক্রল করে তা পাওয়া গিয়েছে।” লিংক না পাওয়ার কারণে ‘অপতথ্য’ হিসাবে চিহ্নিত এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর। ‘সেনানিবাস আর খালেদার আবাস নয়’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের বর্তমান লিংক: https://bangla.bdnews24.com/politics/article451282.bdnews ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের একজন মুখপাত্র বলেন, “ওই সময়ের পর আমাদের ওয়েবসাইট তিনবার পরিবর্তন হয়েছে, সার্ভারও পরিবর্তন হয়েছে অন্তত তিনবার। এর মধ্যে ইউআরএল এর গঠন বদলে গেছে। ফলে ওই প্রতিবেদনের জন্যও নতুন ইউআরএল তৈরি হয়েছে। সেটা কোনোভাবেই অপতথ্য নয়, প্রতিবেদনটি প্রত্যাহারও করা হয়নি।”

গবেষক মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আরেকটি প্রতিবেদনের লিংক দিয়েছেন, যেটি ‘লাইভ’ বা চালু আছে। তাতেই স্পষ্ট যে প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করা হয়নি, লিংকটি সরিয়েও ফেলা হয়নি। তাহলে কীভাবে ওই লিংককে প্রত্যাহারকৃত লিংকের হিসাবে আনা হচ্ছে? মামুন বলছেন, ওই লিংক ‘অপতথ্য’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে কী কারণে ‘অপতথ্য’ বলা হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে দেননি মামুন।

‘সরকার উৎখাতের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র, শিগগিরই ফিরব: শেখ হাসিনা’ শিরোনামে ওই খবর প্রকাশিত হয়েছিল গত বছরের ১১ অগাস্ট। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের একটি প্রতিবেদন থেকে উদ্ধৃত করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।

দেশের আরো কয়েকটি সংবাদমাধ্যম প্রিন্টের ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে খবর প্রকাশ করেছিল। সেগুলো গবেষক মামুনের ‘অপতথ্যের’ তালিকায় এসেছে কি না, স্পষ্ট নয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের তৃতীয় যে লিংকটি গবেষক মামুন দিয়েছেন, তা ইংরেজি সংস্করণের একটি প্রতিবেদন। শিরোনাম: BNP mayor candidate Ishraque to stand trial in ACC case

ওই খবরের লিংক (https://bdnews24.com/politics/2020/01/15/bnp-mayor-candidate-ishraque-to-stand-trial-in-corruption-case) ৪০৪ হয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে গবেষক বলেছেন, ‘সাইট রিস্ট্রাকচার কিংবা আর্কাইভাল কারণে’ এটা হতে পারে।“এখানে তারিখ অংশটিসহ ৪০৪ শো করে, কিন্তু বাদ দিলে অ্যাকটিভ দেখায়- এমন ডেটার উপস্থিতি রয়েছে। ৩০টি ডেটার মধ্যে এই ক্যাটাগরিগুলোর ডিস্ট্রিবিউশন সমান নয়।”

২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর সার্ভার ও সিএমএস পরিবর্তনের কারণে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদনের ইউআরএল এর গঠনও বদলেছে। ওই প্রতিবেদন এখনও ওয়েবে আছে এবং তা সচল (https://bdnews24.com/politics/bnp-mayor-candidate-ishraque-to-stand-trial-in-corruption-case)। সেটি প্রত্যাহার করা হয়নি, আর সেটি অপতথ্য বা ভুয়া খবরও নয়। যে কেউ গুগল সার্চ করলেই ওই তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেন।

মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ৩০টি ‘প্রত্যাহার করা’ লিংক পাওয়ার কথা বললেও সেগুলো চাওয়ার পর তিনটি লিংক দিয়েছেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম পরীক্ষা করে দেখেছে, সবগুলো প্রতিবেদনই ওয়েবে আছে। দুটি ক্ষেত্রে ইউআরএল বদলেছে যা কোনোভাবেই ‘প্রত্যাহার নয়’। সেগুলো ‘অপতথ্য’ বা ‘ভুয়া খবর’ও নয়। ছয় মাসে এই ৩০টি ‘ভুয়া খবর সরানোর’ কথা অনুষ্ঠানে বলা হলেও ওই তিনটি প্রতিবেদনের সময়ের ব্যাপ্তি প্রায় ১৪ বছরের।

সেমিনার নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘ভ্রান্তি’ তৈরি হওয়ার কথা তুলে ধরে পিআইবি বলছে, “উপস্থাপনার তথ্য নিয়ে কিছু গণমাধ্যমে অন্য একটি সংবাদমাধ্যমকে উল্লেখ করে এমনভাবে সংবাদ প্রকাশ করছে যাতে, সংবাদপত্রটি এবং গবেষণা সম্পর্কে ভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। গবেষণায় ব্যবহৃত সকল প্রকার উপাত্ত গবেষকের নিকট যথাযথভাবে সংরক্ষিত আছে।

“গবেষণাটি প্রবন্ধ আকারে প্রকাশিত হওয়ার পরে এ-বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করা হবে। তার আগে পর্যন্ত সঠিক তথ্য প্রকাশ করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।” সূত্র, বিডি নিউজ