সময়ের জনমাধ্যম

হাসিনার গুলির সামনে ভয় পাই নাই, ছোড়া ডিমে কিছু যায় আসে না: আখতার হোসেন

এনসিপি সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা

Last Updated on 4 weeks by zajira news

অনলাইন ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বিমানবন্দরে যুবলীগ নেতার ডিম ছোড়ার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

আখতার হোসেন বলেছেন, ‘আমরা সেই প্রজন্ম যারা হাসিনার গুলির সামনে দাঁড়াতে ভয় পাই নাই। অতএব কারও ছোড়া ডিমে আমাদের কিছু যায় আসে না। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। আওয়ামী লীগ জন্মগতভাবে ও প্রকৃতিগতভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন। তারা সন্ত্রাস করবে।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ডায়াসপোরা অ্যালায়েন্সের ফেসবুক পেজে প্রচারিত এক ভিডিওতে আখতার হোসেনকে এসব কথা বলতে শোনা যায়। এ ছাড়া নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিনি এ সম্পর্কিত একটি পোস্ট দিয়েছেন। অ্যাকাউন্টটি আখতার হোসেনের বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আখতার হোসেন বলেন, ‘এয়ারপোর্টে আজকে আওয়ামী লীগ হুংকার দিয়ে আসছিল, অশ্রাব্য গালিগালাজ করছিল, বিশেষ করে তাসনিম জারাকে (এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক) উদ্দেশ্য করে। এটাই আওয়ামী লীগের চরিত্র।’

ভিডিওতে আখতারকে বলতে শোনা যায়, ‘বাংলাদেশের যারা স্বাধীনতাকামী মানুষ, জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির মানুষ তাদের ওপর এভাবে হামলে পড়বে- এতে আমরা অবাক হই না। বরং আমরা মনে করি এই এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য যে প্রক্রিয়া শুরু করার কথা ছিল সেটা সামান্য অগ্রসর হয়েছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী যারা পালিয়ে এসেছে, তারা বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাস করছে।’

দেশে এবং দেশের বাইরে আওয়ামী লীগ ও তাঁদের দোসর, যাঁরা সন্ত্রাস করছে, তাদের ফিরিয়ে নিয়ে বিচারের আওতায় নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান আখতার হোসেন।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসেবে আখতার হোসেন নিউইয়র্কে পৌঁছান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে ডিম ছোড়েন যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান।

নিউইয়র্কের ঘটনায় জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ স্ট্রিট থেকে আটক করা হয় যুবলীগ কর্মী মিজানুর রহমানকে

এ ঘটনায় এনসিপি ডায়াসপোরা অ্যালায়েন্স এক বিবৃতিতে বলেছে, এ ঘটনা শুধু রাজনৈতিক সহিংসতার বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মর্যাদা ও নিরাপত্তাব্যবস্থার চরম ব্যর্থতার উদাহরণ। যদি সরকারি সফরের অংশগ্রহণকারীরা ন্যূনতম নিরাপত্তা না পান, তবে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি কনস্যুলেট ও দূতাবাসগুলোর অস্তিত্বের যৌক্তিকতা কোথায় সে প্রশ্ন তোলে এই অ্যালায়েন্স। বাংলাদেশি কনস্যুলেট ও দূতাবাস কাদের স্বার্থে কাজ করছে এবং এ ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা সে প্রশ্নও তোলা হয়।

এনসিপি ডায়াসপোরা অ্যালায়েন্স আরও বলেছে, আখতার হোসেন ও এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারার সঙ্গে এই হামলার সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যান্যরাও ছিলেন। বাকিরা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের তোপের মুখে পড়লেও হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে মূলত এনসিপি নেতাদের।

অ্যালায়েন্স আরও বলছে, জুলাই বিপ্লবের সময় যারা জীবনবাজি রেখে লড়েছিলেন, তাদের প্রতি প্রতিশোধপরায়ণ হামলাকারীদের ক্ষোভ থামেনি। আখতার হোসেনকে এখনো তাঁর সংগ্রামের মূল্য দিতে হচ্ছে- এটা অন্তর্বর্তী সরকারের চরম ব্যর্থতা।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার এবং নিউইয়র্ক শহরের সরকারি কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করতে হবে। নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলসহ পুরোটা টিমকে অবিলম্বে চাকরিচ্যুত করতে হবে এবং সফররত নেতাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এক যৌথ বিবৃতিতে আখতার হোসেনকে ডিম ছোড়ার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সফরে প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তার পাশাপাশি সফরসঙ্গীদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা। কিন্তু এই হামলার ঘটনা প্রমাণ করে, তারা সফররত রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

গণসংহতির নেতারা বলেছেন, এ ধরনের হামলার ঘটনা প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ নিপীড়কের চরিত্র বহাল রেখেছে। সরকারের বিভিন্ন অংশ বিশেষভাবে আমলাতন্ত্রে কোনো সংস্কার ছাড়াই ফ্যাসিবাদের সহযোগীদের বহাল করা এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে কী ভূমিকা রাখছে, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।