সময়ের জনমাধ্যম

মালয়েশিয়ায় ৯৩ জন বাংলাদেশির বকেয়া বেতন পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট

Last Updated on 7 days by zajira news

মালয়েশিয়া প্রতিনিধি, জাজিরা নিউজ: মালয়েশিয়ায় প্রতারণার শিকার ৯৩ জন বাংলাদেশি কর্মীর জন্য অবশেষে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেছে দেশটির সেলাঙ্গর রাজ্যের শাহ আলম হাইকোর্ট।

২০২৩ সালের নভেম্বরে মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর কাজ না পাওয়া ৯৩ জন কর্মীকে তাদের মোট বকেয়া বেতন বাবদ ৭ লাখ ৬০ হাজার রিঙ্গিত পরিশোধের জন্য নিয়োগ প্রতিষ্ঠান ‘একর ইনোভেশন এসডিএন বিএইচডি’কে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

কর্মীদের পক্ষে মামলা লড়া দুই আইনজীবী জোয়াকিম জেভিয়ার ও সহাইন নাদা পুটুচেয়ারি জানান, এই রায়ে ভুলভাবে ফোন বিল, থাকার জায়গা, সরঞ্জাম ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার খরচের বাবদ ১ লাখ ২০ হাজার রিঙ্গিতও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) পূর্বে শ্রম আদালতের দেয়া সিদ্ধান্ত বহাল রেখে এই ঐতিহাসিক রায় প্রদান করে হাইকোর্ট।

বিচারপতি নার্কুনাভাথি সুন্দরেসন তার রায়ে স্পষ্ট জানিয়েছেন, নিয়োগকর্তারা বিদেশী কর্মীদের ‘সংরক্ষিত শ্রমিকের দল’ হিসেবে গণ্য করতে পারেন না। এই দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভুল।

চুক্তিপত্রে স্পষ্ট উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও শ্রমিকদের ‘সংরক্ষিত শ্রমিক’ হিসেবে গণ্য করার তীব্র সমালোচনা করে বিচারক বলেন, শ্রমিকরা যতক্ষণ কাজ করবে না, ততক্ষণ বেতন পাবে না এই যুক্তি গ্রাহ্য নয়।

বিচারপতি আরও বলেন, এইসব কর্মীরা মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর তারিখ থেকেই বেতন পাওয়ার অধিকারী।

নিয়োগকর্তা ‘একর ইনোভেশন এসডিএন বিএইচডি’ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছিল। তাদের মূল যুক্তি ছিল, ওয়ার্ক পারমিট জারির আগে বেতন পরিশোধের শর্ত থাকায় চুক্তিটি অবৈধ।

এছাড়া নিয়োগকর্তা আরও দাবি করেছিল, মাত্র সাতজন কর্মী সাক্ষ্য দেয়ায় এবং বাকিরা অ্যাফিডেভিটের ওপর নির্ভর করায় কর্মীরা তাদের মামলা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন যদিও শ্রম আইনে অ্যাফিডেভিট গ্রহণযোগ্য। পরে আদালত নিয়োগকর্তার এই যুক্তিগুলো খারিজ করে দেয়।

শাহ আলম হাইকোর্ট শ্রম আদালতের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে প্রতিটি কর্মীর জন্য ২ হাজার রিঙ্গিত থেকে ১১ হাজার রিঙ্গিত পর্যন্ত প্রতি মাসের বকেয়া বেতন মঞ্জুর করে।

কর্মীদের পক্ষের আইনজীবী জোয়াকিম জেভিয়ার ও সাহাইন নাদা পুথুচেরিয়ারি নিশ্চিত করেছেন, আদালত ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য অর্থও অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শ্রমিক হোস্টেলের ১ লাখ ২০ হাজার রিঙ্গিত যা ফোন বিল, বিছানা, সরঞ্জাম এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার খরচের অজুহাতে কর্মীদের কাছ থেকে ভুলভাবে কর্তন করা হয়েছিল।

২০২৩ সালে মালয়েশিয়ার ছয়টি কোম্পানি মোট ৪ হাজার বিদেশি কর্মীর জন্য কোটার আবেদন করে। এর মধ্যে ১ হাজার ৬২৫ জন কর্মীর কোটা অনুমোদন পায় তারা। কোম্পানিগুলো হলো- পুনচাক জুপিটার ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস এসডিএন বিএইচডি, একর ইনোভেশন এসডিএন বিএইচডি, স্টার ডোমেইন রিসোর্সেস এসডিএন বিএইচডি, কিউএল মার্কেটিং এসডিএন বিএইচডি, জিটিএম মার্কেটিং এবং বুলোক হোল্ডিংস এসডিএন বিএইচডি (ম্যাক্সিম)।

অধিকাংশই কর্মী মালয়েশিয়ায় আসার পর জানতে পারেন যে, তাদের জন্য কোনো কাজ নেই। এতে তারা বিপাকে পড়েন।

প্রতারিত এসব কর্মীরা এক পর্যায়ে আদালতের শরণাপন্ন হন। এই রায়ের ফলে মালয়েশিয়ায় কর্মরত বিদেশী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় স্থাপিত হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।