সময়ের জনমাধ্যম

মানবপাচার চক্রের রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন নৌকাডুবিতে বেঁচে ফেরা যাত্রীরা

Last Updated on 4 weeks by zajira news

মালয়েশিয়া প্রতিনিধি, জাজিরা নিউজ: সাম্প্রতিক মালয়েশিয়া–থাইল্যান্ড সীমান্তের জলসীমায় নৌকাডুবিতে বেঁচে ফেরা যাত্রীরা মানব পাচারকারী সিন্ডিকেটের সম্পর্কে রোমহর্ষক বর্ননা দিয়েছেন।

গত সপ্তাহে লাংকাউই উপকূলের কাছে ঘটে যাওয়া এ মর্মান্তিক ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো আরও অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। উদ্ধারকৃত মরদেহগুলো কেদাহ রাজ্যের আলোস্তার সুলতানাহ বাহিয়া হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

রোববার (১৬ নভেম্বর) কেদাহ রাজ্যের পুলিশ প্রধান দারুল আদ্জলি আবু শাহ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা পাচারকারী নেটওয়ার্কের কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।

বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, সিন্ডিকেট প্রথমে মিয়ানমার–বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী খাল এলাকায় পাঁচটি স্থানে যাত্রীদের জড়ো করত। এরপর সর্বোচ্চ ৩০০ জন ধারণক্ষমতার একটি বড় জাহাজ—যা ‘মাদার শিপ’ নামে পরিচিত জাহাজে তোলা হতো। যাত্রা শুরু করার আগে জাহাজটি পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করত; অনেককে একটানা এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত জাহাজেই অপেক্ষা করতে হতো।

মালয়েশিয়ার জলসীমার কাছে পৌঁছানোর পর এই বড় জাহাজ থেকে ছোট ছোট নৌকায় যাত্রী স্থানান্তর করা হতো। পুরো যাত্রায় কমপক্ষে এক মাস সময় লাগত। বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা আরও জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার জলসীমায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে দেশটির অভ্যন্তরে থাকা তাদের আত্মীয়দের সিন্ডিকেট সদস্যদের ব্যাংকে অর্থ পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। পুলিশ প্রধান জানান, উদ্ধার হওয়া ১৪ জন যাত্রীর কারও সঙ্গে সিন্ডিকেটের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি, তাদের সবাইকে সম্পূর্ণ ভুক্তভোগী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

যাত্রীরা পাচারচক্রের প্রায় পাঁচ সদস্যের কথা জানিয়েছেন, তবে তাদের পরিচয় সংক্রান্ত কোনো নথি পাওয়া যায়নি। যাত্রীদের কাছ থেকে কিছু হাতে লেখা নোট উদ্ধার হয়েছে, যাতে নাম ও মোবাইল নম্বর রয়েছে—ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো পাচারকারী নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পর্কিত।

এ আন্তঃদেশীয় মানবপাচার চক্রকে ধরতে কেদাহ পুলিশ এখন আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা (ইন্টারপোল) এবং প্রতিবেশী দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করছে। ঘটনাটি মানব পাচারবিরোধী ও অভিবাসী পাচারবিরোধী আইন-২০০৭ এর ধারা ২৬এ অনুযায়ী তদন্ত করা হচ্ছে, যা অবৈধ প্রবেশে সহায়তাকারী সিন্ডিকেটকে লক্ষ্য করে।

পুলিশ প্রধান দারুল আদ্জলি আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় নতুন কোনো অগ্রগতি হলে বা প্রতিবেশী দেশে কোনো এজেন্ট ধরা পড়লে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’